দক্ষিণ আফ্রিকার আয়োজনে চলতি বছরের জি২০ সম্মেলনে গৃহীত নেতাদের ঘোষণাপত্রে দৃষ্টিগোচর হল ভারতের জি২০ সভাপতিত্বকালের প্রধান প্রধান সাফল্যগুলির সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি। বিশেষ করে, ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর স্বার্থ ও দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন—যা গত বছর থেকেই ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে জোরালো ভাবে তুলে আসছে—এই ঘোষণাপত্রে গুরুত্ব সহকারে স্থান পেয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ যে কোনও রূপে এবং প্রকাশে আন্তর্জাতিক শান্তির বিরুদ্ধে গুরুতর হুমকি। গোষ্ঠীভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং সর্বাত্মক ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের প্রস্তাব—এটি ভারতের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক উদ্যোগেরই ফসল বলে মনে করা হচ্ছে।
Advertisement
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তিতে নিরাপত্তা-স্বচ্ছতা
ডিজিটাল উন্নয়ন, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্ষেত্রে ‘নিরাপদ, সুরক্ষিত ও আস্থাযোগ্য’ প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি আবারও জোরদার করেছে ভারত। ভবিষ্যতের প্রযুক্তি যাতে মানবিক মূল্যবোধকে সুরক্ষিত রেখে প্রসারিত হয়—সে বিষয়ে ভারতীয় অবস্থানই এখানে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত।
Advertisement
নারী ও কন্যার ক্ষমতায়ন: ভারতের অগ্রাধিকারের ধারাবাহিকতা
গত বছর ভারতের সভাপতিত্বে জি২০-র মূল অর্জনগুলির অন্যতম ছিল নারী-ক্ষমতায়ন। এই নীতিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘোষণাপত্রেও আরও দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভারতের উদ্যোগকে কুর্নিশ
ভারতের সভাপতিত্বকালে শুরু হওয়া দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সভাপতিত্ব এগিয়ে নিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে ‘দুর্যোগ-সহনশীল পরিকাঠামো জোট’ (সিডিআরআই)-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
জলবায়ু অর্থায়নে শক্তিশালী ভাষা
এই ঘোষণাপত্রে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে—জলবায়ু অর্থায়নকে কয়েক বিলিয়ন থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত না করলে উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে ২০৩০-এর আগেই নির্ধারিত লক্ষ্যপূরণ অসম্ভব। উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রয়োজন ৫.৮–৫.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার—এই বাস্তবতাকেও বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
টেকসই জীবনধারা (LiFE) ও দায়িত্বশীল ভোগব্যবস্থা
উৎপাদন ও ভোগের টেকসই নীতিকে মুখ্য করে তুলতে ভারতের প্রস্তাবিত ধারণা ঘোষণাপত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের ডাক
সময়ের দাবি অনুযায়ী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো নতুনভাবে গঠন জরুরি—ভারতের এই অবস্থানও নথিভুক্ত হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তায় ‘দাক্ষিণাত্য উচ্চ-স্তরের নির্দেশনা’কে স্বীকৃতি
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের উদ্যোগ—‘দাক্ষিণাত্য উচ্চ-স্তরের নীতি নির্দেশনা’—পুনরায় গুরুত্ব পেল। পাশাপাশি ঐতিহ্যভিত্তিক ও সম্পূরক চিকিৎসাব্যবস্থার ভূমিকাও স্বীকৃতি পেয়েছে, যা গত বছরের নয়া দিল্লি ঘোষণা পত্রের ভাষারই পুনরাবৃত্তি।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সম্মেলনের বহু অংশেই ভারতের ঘোষণাপত্রের ভাষা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে—যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকারই স্বীকৃতি।
Advertisement



