রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিল মুকেশ আম্বানির রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তথা আরআইএল ২০ নভেম্বর জানিয়েছে, গুজরাতের জামনগরের শোধনাগারের জন্য রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা আপাতত বন্ধ রাখবে এই সংস্থা। আমেরিকার চাপে পড়ে রুশ তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে ভারত।
সম্প্রতি রুশ তেলের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সমস্যায় পড়ে যায় রিলায়্যান্স। এই পরিস্থিতিতে আপাতত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী।
Advertisement
রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর তরফে বলা হয়েছে, রুশ তেলের মজুত শেষ হয়ে গেলে ১ ডিসেম্বর থেকে তারা আর রুশ তেল থেকে উৎপাদিত পেট্রোপণ্য রপ্তানি করবে না। এই নিয়ে সংস্থার তরফে এক বিবৃতি জারি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০ নভেম্বর থেকে আরআইএল-এর এসইজেড শোধনাগারে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রিলায়্যান্সের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বর্তমানে পুরনো মজুত তেল থেকে রুশ তেল প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলছে। এই মজুত শেষ হলে রপ্তানির জন্য আর রাশিয়ার থেকে তেল কেনা হবে না।
রিলায়্যান্সের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘১ ডিসেম্বর থেকে এসইজেড রিফাইনারি থেকে যে পণ্য রপ্তানি করা হবে সেগুলি এমন অপরিশোধিত তেল থেকে করা হবে যা রাশিয়া থেকে আনা নয়। ২১ জানুয়ারি, ২০২৬ থেকে কার্যকর হতে চলা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের জন্যই এই কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই করা হয়েছে।’
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রাশিয়ার বৃহত্তম ২ তেল উৎপাদনকারী সংস্থা রসনেফ্ট এবং লুকঅয়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা। ২১ নভেম্বর থেকে রাশিয়ার তেল সংস্থা ২টির উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছে ট্রাম্প সরকার। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শুরু হতেই রুশ সংস্থাগুলি থেকে আমদানি করা তেলের পেট্রেপণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দিল রিলায়্যান্স।
হোয়াইট হাউস রিলায়্যান্সের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের প্রেস অফিস জানিয়েছে, ‘আমরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির জন্য আমেরিকা উন্মুখ। ‘
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হলে কোনও সংস্থা এদের থেকে তেল কিনলে নিষেধাজ্ঞা চাপবে তাদের উপরেও । এর ফলে সবচেয়ে চাপে পড়ে যায় ভারতের মুকেশ আম্বানির রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাশিয়া থেকে অর্ধেকের বেশি তেল কিনেছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
দিল্লির রাশিয়ার থেকে তেল কেনা ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প আগস্ট মাসে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক জরিমানা হিসেবে চাপানো হয় রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য। ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কোর যুদ্ধে এইভাবেই অর্থায়ন করা হচ্ছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারত।
ট্রাম্পের দাবি, ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করলেই একঘরে করা সম্ভব হবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। আর তাতেই যুদ্ধের অবসান হবে। ট্রাম্পের সতর্কবার্তাকে ইউরোপীয় জোটও গুরুত্ব সহকারে দেখেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিল জানিয়েছে, ২০২৮ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে রাশিয়ার থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা পুরোপুরি বন্ধ করবে তারা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রুশ তেল বিক্রিতে একটি বড় বাজার হয়ে ছিল ভারতের রিলায়্যান্সের জন্য। এখন ইইউ-ও রুশ তেল কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বেসরকারি তেল আমদানিকারক সংস্থাগুলোর উপর।এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় বাজার যাতে হাতছাড়া না হয়, তাই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিলায়্যান্স।