• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভারতের মাটিতে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী মডিউল, ‘হোয়াইট কলার টেরর নেটওয়ার্ক’

উল্টো দিকে, কাশ্মীরের উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসকরা যে ঘটনায় জড়িত, তা স্পষ্ট হলেও, তারা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এমন প্রমাণ মেলেনি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শোভনলাল চক্রবর্তী

শ্রীনগরের নওগামে জইশ-ই-মহম্মদ-এর পোস্টারই ছিল সূত্র। সেই সূত্র ধরেই তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বার করেছেন গোয়েন্দারা। উন্মোচিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদের ফরিদাবাদ মডিউল। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়। ‘অপারেশন মহাদেব’-এর নেতৃত্বে থাকা জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এসএসপিজিভি’র নজরে পড়ে জইশ-ই-মহম্মদ-এর ওই পোস্টারগুলি। তাতে নিরাপত্তা-বাহিনীকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ওই অফিসারই প্রশ্ন তোলেন, ওই পোস্টারগুলিকে বা কারা লাগাল! শুরু হয় তল্লাশি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দু’জনকে আটক করা হয়। যারা ওই পোস্টারগুলি লাগিয়েছিল, অতীতে তাদের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল শোপিয়ানের এক ধর্মগুরু মৌলবি ইরফান আহমদের কাছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহের জিজ্ঞাসাবাদের পরে ইরফান জানান, জইশের ষড়যন্ত্রের কথা। যার যোগসূত্র ধরে জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে একের পর এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানতে পারে যে, এই পোস্টারগুলি ফরিদাবাদ থেকে পরিচালিত একটি সেলের মাধ্যমে আনা হয়েছে। হরিয়ানার ফরিদাবাদে জইশ-ই-মহম্মদ এবং আনসার গজওয়াতুল হিন্দ-এর একটি বড় চক্র ভেঙে দেওয়ার পরে পুলওয়ামায় ব্যাপক অভিযানে নামে নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় পুলওয়ামার কৈল এলাকার চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল ওরফে মুসাইব-সহ বেশ কয়েক জনকে। তদন্তদকারীদের মতে, ধৃতেরা ‘হোয়াইট কলার জঙ্গি নেটওয়ার্কের অংশ’।

Advertisement

যারা সামাজিক ও পেশাগত পরিচয়কে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসবাদীকাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ, তরুণদের নিয়োগ করত। লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পরে পুলওয়ামা জুড়ে ব্যাপক তল্লাশি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। ছ’জনকে আটক করে তারা। তার মধ্যে তিন জন পুলওয়ামার কৈল গ্রামের বাসিন্দা চিকিৎসক উমর-উন-নবীর আত্মীয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সে নিখোঁজ। তার সন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিবারের তিনজন সদস্যকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া একজন কল-মিস্ত্রী আমির রসিদ মির, রাজ্যের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের কর্মী উমর রসিদ মির এবং জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষী তারিক মালিককে আটক করা হয়। কৈল গ্রামের আর এক বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিলকে ফরিদাবাদে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে উমরের ঘনিষ্ঠতার খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, উমর গোষ্ঠীটির জন্য অর্থ সরবরাহ ও যানবাহন সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার গোয়েন্দা-বার্তার প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি উপত্যকা জুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।

Advertisement

পুলওয়ামা, শোপিয়ান, অনন্তনাগ ও গান্ডেরবাল-সহ একাধিক জেলায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০০-রও বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই অতীতে পাথর ছোড়ার অভিযোগে জড়িত ছিলেন বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে সন্দেহ। উমর মহম্মদ, শাহিন সইদ, মুজ়াম্মিল গনই, আদিল আহমেদ রাঠের, আহমেদ মহিউদ্দিন সইদ— পাঁচজনই চিকিৎসক। পাঁচজনই কাশ্মীর হয়ে ফরিদাবাদের বিস্ফোরক উদ্ধার থেকে দিল্লির লাল কেল্লা সংলগ্ন বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবেই যুক্ত। নিরক্ষর বা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বা বেকার নয়— দিল্লির বিস্ফোরণের পিছনে ‘হোয়াইট কলার টেরর নেটওয়ার্ক’ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারদের চিন্তায় ফেলেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারেরা বলছেন, সাম্প্রতিক অতীতে কোনও সন্ত্রাসবাদের ঘটনায় দু’একজন উচ্চশিক্ষিত জঙ্গির সন্ধান মিলেছে। কিন্তু একেবারে চিকিৎসকেরা মিলেই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে, এমন উদাহরণ সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। ২০০৮-এ দিল্লিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পিছনে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সন্ধান মিলেছিল। কিন্তু সেখানেও এক সঙ্গে এত জন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি জড়িত ছিল না। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে, এ থেকেই স্পষ্ট কী ভাবে উচ্চশিক্ষিতদেরও মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিজি জানিয়েছেন যে, কাশ্মীরের যে কোনও তরুণের স্বপ্ন হল ডাক্তার হওয়ায়। ডাক্তার হওয়ার পরেও যদি কেউ চরমপন্থী হয়ে পড়ে, নিজের দেশের মানুষকে খুন করতে তৈরি হয়ে যায়, তা হলে কী পরিমাণে চরমপন্থার মগজধোলাই হচ্ছে, তা কল্পনা করা যায়। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তা দেখতে হবে। এই মগজধোলাই বা শিক্ষিতদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা ঠেকাতে পদক্ষেপ করতে হবে। তাঁর মতে, এই বিস্ফোরণ বা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুতের ষড়যন্ত্র এক দিনে হয়নি। বেশ কয়েক মাস ধরে চলেছে।

জইশ- ই- মহম্মদের মডিউলকে সামনে রেখে আইএসআই পরিকল্পনা করেছে বলে মনে হচ্ছে। ভারতের মূল ভূখণ্ডে ২০১৪-র পর থেকে কোনও বড় মাপের হামলা হয়নি বলে পাক গুপ্তচর সংস্থা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার থেকে দিল্লির বিস্ফোরণের তদন্তে মুজাম্মিল গনই-র সন্ধান মিলেছে। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। এমবিবিএস ছাত্রদের পড়াতেন। তাকে গ্রেফতারের পরে ৩৫৮ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, অ্যাসল্ট রাইফেল, পিস্তল, বোমা বানানোর যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়। এই সূত্র ধরেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই কর্মরত ডাক্তার আদিলের সন্ধান মেলে। তার পরে আরও আড়াই হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক মেলে। লখনউ থেকে মুজাম্মিলের বান্ধবী ডাক্তার শাহিন সইদকে গ্রেফতার করা হয়। শাহিন ভারতে জইশ-এর মহিলা সংগঠন জামাত-ই-মোমিনাতের হয়ে কাজ করত বলে সন্দেহ।

পাকিস্তানে মাসুদ আজহারের আত্মীয়া সদিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। মুজাম্মিল ও আদিলের সন্ধান মিললেও আর এক ডাক্তার উমর মহম্মদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পরে তার গাড়িতেই লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণ ঘটে। চিন থেকে ডাক্তারি পাশ করা মহিউদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দারে বক্তব্য, এর আগে আমেরিকায় ৯/১১-র হামলায় বা জইশের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কাজে উচ্চশিক্ষিত বা নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা জঙ্গিদের খোঁজ মিলেছে। মাওবাদী নেতাদের মধ্যেও অনেক উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। কিন্তু শুধু ডাক্তারদের জঙ্গি গোষ্ঠীর দেখা মেলেনি। চিকিৎসকদের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, যথাযথ তদন্তের পর যদি ওই ব্যক্তিরা দোষী প্রমাণিত হয়, তবে তাঁদের ডাক্তারির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এদিকে লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের ৪৮ ঘণ্টা পরে একে ‘সন্ত্রাসবাদী ঘটনা’ বলে তকমা দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই বিস্ফোরণ ও তার আগে ফরিদাবাদ থেকে প্রায় ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধারে সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের যোগসূত্র রয়েছে বলে তদন্তকারী পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র দাবি করা হলেও, মোদী সরকার এখনই ‘পাকিস্তানের মদত’ বা ‘সীমান্ত পারের সন্ত্রাস’-এর দিকে আঙুল তুলছে না। শুধুমাত্র ‘দেশ-বিরোধী শক্তি’ এই ‘জঘন্য সন্ত্রাসবাদী ঘটনা’-র পিছনে রয়েছে বলে মোদী সরকারের বক্তব্য। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীর থেকে ফরিদাবাদ হয়ে দিল্লি পর্যন্ত যে সন্ত্রাসবাদীদের গোষ্ঠীর সন্ধান মিলেছে, তারা কি দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা বা ‘হোমগ্রোন’ সন্ত্রাসবাদী?

দিল্লির লাল কেল্লার বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর পরের দিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভুটান সফরে চলে যান। তবে একদিন পর দিল্লি ফিরেই তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এলএনজেপি হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে যান। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক বসে। মন্ত্রিসভার বৈঠকও হয়। বৈঠকে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দু’মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। তার পরে লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে প্রস্তাব পাশ করা হয়। মন্ত্রিসভার এই প্রস্তাবেই বলা হয়েছে, দেশ-বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রে লাল কেল্লার কাছে ‘জঘন্য’ সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে।

গত এপ্রিলে পহেলগামের ঘটনার পরে মোদী সরকার নতুন রণনীতি নিয়ে বলেছিল, এর পরে যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলাকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’ হিসেবে দেখা হবে। তার জবাবও সেই ভাবে দেওয়া হবে। যেমন, পহেলগামের জবাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানে সামরিক হানা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সেই নতুন রণনীতি বা সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ‘নিউ ডকট্রিন’ লাল কেল্লার বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে কী ভাবে প্রযোজ্য হবে? মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কোনও উত্তর দিতে চাননি।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র কি লাল কেল্লার বিস্ফোরণে পাকিস্তানের হাত দেখছে না? দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদীরাই এই ঘটনায় জড়িত বলে সরকার মনে করছে? বৈষ্ণবের জবাব, মন্ত্রিসভার প্রস্তাবেই বলা হয়েছে, এটা দেশ-বিরোধী শক্তির কাজ। সে ক্ষেত্রে কি সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের প্রশ্ন আসছে না? বৈষ্ণব তারও উত্তর দিতে চাননি। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের বক্তব্য স্পষ্ট, তিনি বলেন যে, তিনি পহেলগামের পরেও বলেছিলেন যে দুই ধরনের সন্ত্রাসবাদী রয়েছে। এক দল বিদেশে প্রশিক্ষিত অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসবাদী।

অন্য দল দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী। দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদীদের কথা বলায় সংসদে তাঁকে বিদ্রুপ করা হয়েছিল। তবে সরকার জানে যে, দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদীরাও রয়েছে। আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, ভারতীয় নাগরিকরা, এমনকি যাঁরা যথেষ্ট শিক্ষিত, তাঁরা কোন পরিস্থিতিতে ও কেন সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠছেন? ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ আচমকা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করা হলেও মোদী সরকারের দাবি ছিল, সেই ‘অপারেশন’ চলছে। লাল কেল্লার বিস্ফোরণের পরে কি সেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ নতুন করে শুরু হবে? তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী এরও উত্তর দিতে চাননি। মন্ত্রিসভার প্রস্তাবে সন্ত্রাসবাদী ঘটনার নিন্দার সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা ও সাধারণ নাগরিকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ারও সাধুবাদ জানানো হয়েছে। যে সব দেশ সহমর্মিতা ও পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে, তাদেরও ধন্যবাদ জানানো হয়।

সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, মন্ত্রিসভার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্র কোনও ভাবেই সন্ত্রাসবাদ সহ্য করা হবে না বলে যে নীতি নিয়েছে, তার প্রতি সবরকম ভাবে দায়বদ্ধ। মন্ত্রিসভার তরফে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দ্রুততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত শেষ করে ষড়যন্ত্রকারী, তাদের সহযোগী ও মদতকারীদের চিহ্নিত করা ও কাঠগড়ায় তোলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিস্থিতির উপরে নজরদারি করা হচ্ছে। এই প্রস্তাব থেকেই স্পষ্ট, এখনই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলার মতো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি।

উল্টো দিকে, কাশ্মীরের উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসকরা যে ঘটনায় জড়িত, তা স্পষ্ট হলেও, তারা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এমন প্রমাণ মেলেনি। ফলে এখনই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলার মতো পরিস্থিতি হয়নি।ভারতের বর্তমান শাসকেরা রাজনৈতিক বয়ানকে জাতীয় বয়ান করে তোলার কাজটিতে সিদ্ধহস্ত।
পহেলগামের স্মৃতি এখনও মানুষ ভোলেননি, সেই ঘটনার পর কেন্দ্র যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হানাকে ‘যুদ্ধ’ বা ‘অ্যাক্ট অব ওয়র’ বলে বিবেচনার নীতি নিয়েছে। যুদ্ধের জন্য একটি প্রতিপক্ষ প্রয়োজন হয়, লাল কেল্লার বিস্ফোরণে সেই প্রতিপক্ষটি এখনও পর্যন্ত খাড়া করা যায়নি বা হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াগুলি এখনও পর্যন্ত ‘ষড়যন্ত্রকারী’, ‘হান্ট ডাউন’, ‘শেষ দেখে ছাড়া’, ‘নিরাপত্তা সংস্থার চরম রোষ’ গোছের শব্দাবলিতে পরিকীর্ণ। শব্দবিতরণই সার, শেষ কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।

গোয়েন্দা তৎপরতার অভাব এর বড় কারণ, পহেলগাম যার সাক্ষাৎ প্রমাণ। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় পঠানকোট, উরি, পুলওয়ামা, পহেলগামের ঘটনা ঘটার পর খাস রাজধানীতে এমন প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটল। গত ত্রিশ বছরে দিল্লিতে বিস্ফোরণ ও সন্ত্রাসী হানার ঘটনা কম নয়: ২০০৫, ২০০৮ ও ২০১১ ভাবা যেতে পারে। ঘটনা হল, বহু বাগ্‌বিস্তার সত্ত্বেও সন্ত্রাসের ছায়া একই ভাবে বিরাজমান। সরকারের যুদ্ধং দেহি ভাবটি প্রকট করলেই নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। অথচ সেই ভার সরকারকে নিতেই হবে। বাক বিস্তারের চালাকি দিয়ে তাকে ঢেকে রাখতে পারা যাবে না।

Advertisement