রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
যদি কখনও সময় পাই তবে ১৯১৪ সাল হইতে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘযাত্রার সমগ্র কাহিনী বলিব। এ-কাহিনী এমন এক স্বীকারোক্তি যাহার মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের একটি মুমূর্ষু শ্রেণীর পুরা একটি পুরুষ তাহার প্রতিবিম্ব দেখিতে পাইবে— অবশ্য যদি এত কাণ্ডের পরও নিজের মুখের ছবি দেখিবার সাহস তাহার থাকে। এই শ্রেণী বুর্জোয়া শাসকশ্রেণী; ইহারই শুষ্ক শীর্ণ ভাবাদর্শকে ধ্বংস করিয়া এক নূতন জগতের শ্যামল সতেজ জীবনতরুকে যাহারা সম্ভব করিয়া তুলিয়াছে তাহাদের মধ্যে আমরা নিজেরাও আছি।
Advertisement
কিন্তু এখানে আমি যুদ্ধের চারি বৎসরের ভাববিবর্তনের গতিরেখা ছাড়া আর কিছুই আঁকিব না,— অদৃশ্য তীরন্দাজের ধনুক হইতে নিক্ষিপ্ত মুক্ত মনের শায়কের পথটিকে মাত্র আমি দেখাইয়া যাইব। কথায় বলে, ভালভাবে যে কাজের শুরু, আধখানা তাহার সমাপ্ত। যাত্রারম্ভের প্রথম পদক্ষেপ পরবর্তীকালে যতই দ্বিধাদুর্বল মনে হোক না কেন, ঐ প্রথম পদক্ষেপের মধ্যেই ত’ সমগ্র যাত্রার পূর্বাভাস রহিয়াছে। পাশার দান পড়িয়াছে। এখন অবিশ্রাম আগাইয়া চলিতে হইবে, আর থামা চলিবে না।
যুদ্ধের প্রারম্ভেই যাহার এইভাবে যাত্রা শুরু, নিশ্চয়ই সে জানিত না কী সে পশ্চাতে ফেলিয়া আসিতেছে, জানিত না কীই বা ভবিষ্যতে পাইবে। জানিত না কোন দিগন্ত মুছিয়া যাইতেছে, ভাসিয়া উঠিতেছে কোন নূতন দিগন্ত। …. যাত্রী আসিতেছে বহুদূর হইতে। সে আসিতেছে পুরাতন বুর্জোয়া ফ্রান্স হইতে—প্রাচীন প্রাদেশিক ফ্রান্স হইতে; আসিতেছে পিতৃভূমি ও বিপ্লব এই দুই যমজধর্মের রসধারাপুষ্ট দেশের অন্তর্লোক হইতে। (এই বিপ্লব ১৭৮৯ সালের বিপ্লব, তাহাদের কাছে একমাত্র বিপ্লব। ফরাসী বুর্জোয়াশ্রেণী উহার আগেকার বিপ্লবকে করিয়াছে উপেক্ষা, পরের বিপ্লবকে করিয়াছে অস্বীকার।
এই বিপ্লব তাহাদের নিজেদের বিপ্লব, তাহাদের আপন ভাগ্যের শীর্ষদেশে এই বিপ্লব তাহাদের উন্নীত করিয়াছে। তাহাদের ধারণা ছিল ভাগ্যকে তাহারা সম্পূর্ণ জয় করিয়াছে; বিপ্লব তাহাদের কারায়ত্ত)। ভালামির কামান গর্জনের মধ্যে, আর্মারের সংগীতধ্বনির মধ্যে এই দুই ধর্ম মিলিত হইয়াছিল। ইহাদের একটি পিতৃভূমি; আমার শৈশবকালে ১৮৭০ সালের রক্তস্নানে আপনার অবসন্ন শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করিয়াছিল। প্লাস দ্যলা কঁকর্দের অভ্যন্তরে অবগুণ্ঠিত স্ট্রাসবুর্গের মূর্তিই ছিল তার বেদী, উপাসনা মন্দির, সেখানে নিত্য Revanche গান ধ্বনিত হইত। বাকী রহিল রিপাবলিক। প্রেসিডেন্ট গ্রেভী ও তাহার জামাতা উইলসনের আমল হইতে এই রিপাবলিক সম্পদশালী, আরামপ্রিয় ও সুসজ্জিত হইয়া উঠিয়াছে। ক্ষমতার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়া ইহা সরকারী ধর্মসংস্কারে পরিণত হইয়াছে, ১৮৮৯ সালে ইহার অভিষেক হয়; একশ’ বছর আগে অধিকৃত বাস্তীয় দুর্গকে বুর্জোয়াশ্রেণী বিগ্রহ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে এই সময়, এবং এই বিগ্রহই হয় তাহার টাকার বাক্সে।
(ক্রমশ)
Advertisement



