তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদ লাড্ডু বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি-তে তৈরি। এই প্রচার এবার ফাঁস হয়ে গিয়েছে। গাওয়া ঘি-র নামে দেদার ভেজাল ঘি দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রসাদী লাড্ডু। গত পাঁচ বছর ধরে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভোলেবাবা অর্গানিক ডেয়ারি। ভেজার ঘি দিয়ে প্রসাদ বিক্রিকরে কামিয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। তিরুপতির লাড্ডুর ঘি কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ করেছে সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্ত কমিটি (সিট)।
উত্তরাখণ্ডের এই ভোলেবাবা ডেয়ারি কোনোকালেই এক ফোঁটা দুধ, ঘি, মাখন উৎপাদন না করলেও দেদার বরাত মিলেছে মন্দিরের লাড্ডুর ঘি সরবরাহে। ভেজাল ঘি সরবরাহের বরাত নিয়ে নাম জড়িয়েছে শেসাক দলের সাংসদ ওয়াই ভি সুব্বা রেড্ডির বিরুদ্ধে। তদন্তে জানা গিয়েছে, হাওলার মাধ্যমে এতে রেড্ডি ঘুষও নিয়েছেন। দিল্লিতে বসেই তিরুপতির ভেজাল ঘি বিক্রি নিয়ে কারবারীর সঙ্গে সাংসদের রফা হয়েছে বলে খবর। এ নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়াতে চন্দ্রবাবু সরকার সিট গঠন করে। এ নিয়ে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট নেলোর জেলা আদালতে পেশ করেছে সিট। তদন্ত এখনও চলছে। শাসক দলের প্রভাবশালী অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
Advertisement
উল্লেখ্য, অন্ধ্রের বহু পরিচিত এই তিরুপতি মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা কারবার। মন্দিরে ভক্তদের কাছে তার প্রসাদ লাড্ডুর রয়েছে বিপুল চাহিদা। প্রতিটি লাড্ডুর দাম পড়ে ৫০ টাকা। সরকার ভরতুকিতে প্রতি ভক্তকে ১০ টাকা করে দু’টি লাড্ডু বিক্রি করে. এর বেশি নিতে হলে লাড্ডু প্রতি ৫০ টাকা দরে কিনতে হয়। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন তিরুপতি মন্দিরের রান্নাঘরে তিন লক্ষ লাড্ডু তৈরি হয়। এই লাড্ডু তৈরিতে দৈনিক দেড় হাজার কেজি ঘি এবং প্রয়োজন মতো বেসন, কাজুবাদাম, কিসমিস, পেস্তা ব্যবহার হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ভোলেবাবা ডেয়ারি তিরুপতি মন্দির ট্রাস্টকে লাড্ডুর জন্য বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি বলে পশু চর্বি মেশানো ভেজাল ঘি সরবরাহ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ঘি সরবরাহ করছে ভোলেবাবা ডেয়ারি। কাগজপত্রে বলা আছে, উত্তরাখণ্ডের ভগবানপুরে রয়েছে এই ডেয়ারিটি। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে তারা মোট ৫৮ লক্ষ কেজি ভেজাল ঘি সরবরাহ করেছে। তদন্ত করে সিট জানিয়েছে, ভগবানপুরে গিয়ে দেখা গিয়েছে ভোলেবাবার ডেয়ারি শুধু খাতায় কলমে। ডেয়ারি বলে কিছু নেই। আর দুধ, ঘি, মাখনের কোনও কারবার নেই। সিট আরও জানিয়েছে, ভোলেবাবার আসল কারবার হলো কেমিক্যাল সরবরাহের। এদের কেমিক্যাল সরবরাহ করে অজয়কুমার সৌগন্ধ নামে এক ব্যক্তি। সিট তাঁকে অন্য একটি ঘটনার তদন্তে গ্রেপ্তারের পর তাঁর সঙ্গে ভোলেবাবার যোগাযোগ এবং ভেজাল ঘি বেচার কারবার ধরা পড়ে।
Advertisement
তিরুপতিতে ভোলেবাবার ভেজাল ঘি সরবরাহের কারবার একদিনের নয়। ২০২২ সালে ভেজাল ঘি সরবরাহের জন্য তিরুপতি ট্রাস্ট ভোলেবাবাকে কালো তালিকাভুক্ত করে। ভোলেবাবা কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এর মালিক পমিল জৈন ও বিপিন জৈন তিরুপতির বৈষ্ণব ডেয়ারি, উত্তরপ্রদেশের মা গঙ্গা ডেয়ারি, তামিলনাড়ুর এ আর ডেয়ারি নাম নিয়ে ফের ভেজাল ঘি সরবরাহ শুরু করে দেয়। সিট জানিয়েছে, চারটি ভিন্ন সংস্থার নামে ভোলেবাবার মালিক ফের ভেজাল ঘি সরবরাহের কাজ শুরু করে দেন।
উল্লেখ্য, বিখ্যাত তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডুতে ভেজাল ঘি মেশানোর কথা প্রথম ওঠে ২০২২ সালে। তার আগে থেকে ভোলেবাবা ঘি সরবরাহ করত। লাড্ডুর ঘি নিয়ে ভেজালের অভিযোগ ওঠায় মহীশূরের সেন্ট্রাল ফুড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার জন লাড্ডু পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ঘি-তে ভেজাল রয়েছে বলে রিপোর্ট আসে। তারপরেও সেই ভোলেবাবার ঘি-এর বরাত অব্যাহত থাকে। গত বছরও বিরোধীরা আবার হৈচৈ করলে গুজরাতের ল্যাবে পাঠানো হয় এই ঘি পরীক্ষার জন্য। সেখানেও ভেজাল ধরা পড়ে। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত হয় এবং ঘি কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। সিট-এর তদন্তে প্রকাশ, শাসক দলের সাংসদ তিরুপতিতে ভেজাল ঘি সরবরাহের রফা করে। এতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ মিলেছে। বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তিরুপতিকে ঘি প্রসাদের লাড্ডুর ব্যবসায় ভেজাল ঘি কারবারে শাসক দল জড়িয়ে পড়ায় মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু মন্দির নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট ভক্তদের চোখ খুলে দিয়েছে।
Advertisement



