রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
কিন্তু অপর সকলে আমাদের এ-কথা বিশ্বাস করিতে বলে যে তাহারা স্বাধীন, যদিও প্রভুর দেওয়া রুটিতেই তাহারা খুন্নিবৃত্তি করিতেছে। এই দাম্ভিক বুদ্ধিজীবীর দল ও তাহাদের প্রভুদের মধ্যে যেন একটি গোপন চুক্তি সম্পাদিত হইয়াছে (প্রভুর পরিবর্তন হয়, দাসত্বের হয় না)।
Advertisement
এ-চুক্তি গৃহস্থের সহিত গৃহপালিত পশুর চুক্তি। ‘‘যতক্ষণ তুমি আমার কাজ করিবে, যতক্ষণ আমার গোলাবাড়ি পাহারা দিবে ততক্ষণ তোমার সর্বপ্রকারের স্বাধীনতা থাকিবে। কিন্তু চলিয়া যাইও না, যদি কথা শোন তবে আমি তোমাকে খাওয়াইয়া মোটা করিব.’’ তাহারা ইহাতে এত অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে যে, চলিয়া যাইবার চেষ্টা পর্যন্ত করে না। প্রভু যখন তাহাদের বাড়ির বাহিরে পাঠান তখন সে বিচলিত হয় না, কারণ গলায় তাহাদের কলার রহিয়াছে। কেহ কেহ কলার ফেলিয়া দিয়া কলারমুক্ত গলা সকলকে দেখাইয়া বেড়ান বটে, কিন্তু কলারের দাগ ত’ ঢাকিতে পারেন না।
মার্ক যখন দেখিল যে প্রভুদের সে শ্রদ্ধা করিয়া আসিতেছে এবং যে অগ্রজদের উপর সে নির্ভর করিয়া আসিতেছে তাহাদের মন ও বুদ্ধির চরম আত্মসমর্পণকে তাহারা স্বাধীন নির্বাচনের অজুহাতে ঢাকিতে চাহিতেছেন, তখন তাহার আর লজ্জার অবধি রহিল না। সে দেখিল এই আত্মসমর্পণ করিয়াছে কেহ বা স্বেচ্ছায়, কেহ বা ভয়ে। অগ্রজদের এই অধঃপতন অনুজদেরও স্পর্শ করিল; অল্প বয়সেই তাহারা বুদ্ধির গণিকাবৃত্তির জন্য শিক্ষিত হইয়া উঠিল। নিলামের সর্বোচ্চ ডাক যাহার তাহার কাছেই তাহারা আত্মবিস্রয় করিল। চিন্তার স্বাধীনতা…কোথায় সে স্বাধীনতা?
মার্ক ভাবিল ইহাদের চেয়ে প্রতিক্রিয়াপন্থীরা ভাল; যে ছুরি একদিন তাহার বুকে বসিবে সেই ছুরির মতই তাহারা খোলা ও পরিষ্কার।
৩০। ১৯৩৪ সালের আগস্ট মাসে কার্ল রাডেক সোভিয়েট লেখক কংগ্রেসে ‘‘বর্তমান বিশ্বসাহিত্য ও প্রলেটোরিয়ান আর্ট’’ শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেন। (ইন্টারন্যাসানাল প্রেস করেসপণ্ডেস, ৮৩-৮৪ সংখ্যা, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ১৩৩৪।
‘‘আমরা কেবল রম্যাঁ রলাঁর নূতন মতবাদ গ্রহণ দেখিলাম না। জগত সম্পর্কে অদ্ভুত ধারণা তাহাকে যেমন অসম্ভব অবস্থার মধ্যে আনিয়া ফেলিয়াছিল, দেখিলাম তাহার নায়িকাকেও তিনি সেই অবস্থার মধ্যে আনিয়া ফেলিয়াছেন। ল্যা’ম আঁশাঁতে পুস্তকের প্রথম কয়েক পর্বে। কাহিনী ব্যহত হইয়াছে, কারণ কাহিনীকে কিভাবে অব্যাহত রাখিতে হয় তাহা তিনি জানিতেন না। এই লেখকের এখন দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হইয়াছে? তাই কাহিনীও তাহার সত্য ঐতিহাসিক রূপ খুঁজিয়া পাইয়াছে। উপন্যাসের শেষ পর্বে নায়িকা তাই সংগ্রামের মধ্যস্থলে গিয়া দাঁড়াইয়াছে।
৩১। ‘‘ইউরোপের যে সকল আন্তরিক লেখকগণ সংগ্রামে যোগদান করা সম্পর্কে মন স্থির করিতে পারেন না, তাহাদের জবাব দিয়াছে ইতিহাস। ১৯৩৩ সালের ১০ই মে বার্লিনের স্কোয়ারে স্কোয়ারে জার্মান ফাশিস্টরা যে সকল বই পোড়াইয়া বহুৎসব করে যেগুলি কেবল স্টালিন, গর্কি অথবা রেনের মত জার্মান মজুরদের লেখা বই নহে; সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত বিখ্যাত মানবপ্রেমিক লেখকদের রচনাও উহার মধ্যে ছিল। ইতিহাসের প্রাঙ্গণে আজ যে সংগ্রাম শুরু হইয়াছে নিরপেক্ষতা সেখানে আর সম্ভব নহে।’’
(ক্রমশ)
Advertisement



