মার্কিন চাপের আবহে রাশিয়া থেকে ভারতে তেল আমদানির উপর প্রভাব প্রভাব পড়েছে। অক্টোবরে ভারতে রুশ তেল আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছিল বটে, তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তা হ্রাসও পায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনা একটি সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। যার মধ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কও ছিল। হোয়াইট হাউসের আধিকারিকরা দিল্লির উপর চাপ সৃষ্টি করার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, কিন্তু ভারত নিজের জায়গায় অনড় ছিল। তবে আগামী ডিসেম্বর থেকে রুশ অপরিশোধিত তেলের সরাসরি আমদানি কমাতে চলেছে ভারত।
সামুদ্রিক অনুসন্ধান সংস্থা কেপলারের মতে, অতিরিক্ত মার্কিন শুল্কের ফলে ডিসেম্বরে রাশিয়ার তেলের আমদানি তীব্র ভাবে হ্রাস পাবে। তবে, মধ্যস্থতাকারী এবং বিকল্প বাণিজ্য রুটের মাধ্যমে ২০২৬ সালের শুরুতে ধীরে ধীরে রুশ তেল আমদানি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
Advertisement
আগামী, ২১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া রোসনেফ্ট এবং লুকোয়েলের উপর নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর, নভেম্বরের শেষের দিক থেকে ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল সরাসরি আমদানি কমানোর জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় পরিশোধক কোম্পানিগুলির শোধনাগারগুলিতে পেট্রোল এবং ডিজেলের মতো জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হয়। তবে ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় পরিশোধক কোম্পানিগুলি মস্কোর দু’টি বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকের উপর সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে বলে আশা করেছে বলে তাঁরা জানিয়েছে।
Advertisement
কেপলারের প্রধান গবেষণা বিশ্লেষক (রিফাইনিং ও মডেলিং) সুমিত রিতোলিয়া জানিয়েছেন, অক্টোবরে রাশিয়া ভারতের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী ছিল। তালিকায় এরপরে রয়েছে ছিল ইরাক এবং সৌদি আরব। নিষেধাজ্ঞার আগে ভারতে রাশিয়ার চালান প্রতিদিন ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল থেকে ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল (এমবিডি) পৌঁছেছিল, লক্ষ্য করা গিয়েছে, ২১ অক্টোবরের পরে এই আমদানির পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। কারণ, পরিশোধকরা সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলেছে।
শীর্ষ তেল আমদানিকারক কোম্পানি, ‘রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’, যার রোসনেফ্টের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ চুক্তি রয়েছে, তারা রাশিয়ার তেল নেওয়া বন্ধ করবে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত আরও দুটি পরিশোধক সংস্থা জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই তাঁরা রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করছে। ‘ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড’ এবং ইস্পাত ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তলের ‘মিত্তল এনার্জি’ এবং ‘হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর (এইচপিসিএল) যৌথ উদ্যোগ এইচপিসিএল-মিত্তল এনার্জি লিমিটেড, ভবিষ্যতে আমদানি স্থগিত করার পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছে।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে রাশিয়া থেকে আমদানি করা ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেলের অপরিশোধিত তেলের অর্ধেকেরও বেশি ছিল আমদানি করেছিল এই তিনটি তেল কোম্পানি। তবে, নায়ারা এনার্জির ভাদিনার রিফাইনারি, যা আংশিকভাবে রোসনেফ্টের মালিকানাধীন এবং ইতিমধ্যেই ইইউ নিষেধাজ্ঞার অধীনে, রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা বজায় রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সম্ভার সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ভবিষ্যতে তেল আমদানি আরও জটিল সরবরাহ প্রণালী এবং বাণিজ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভর করবে।
Advertisement



