রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
এমন সামাজিক অবস্থার সৃষ্টি করা যাহার মধ্যে মানুষ সৎ, শক্তিমান, বুদ্ধিমান ও ন্যায়বান হইতে পারে। বিপ্লবের সূচনাকাল হইতেই রাশিয়ায় আমার স্বদেশবাসিগণের মধ্যে আমি সংগ্রামকালে নৈতিক শুচিতা রক্ষার কথা বলিয়া আসিতেছি। লেকে আমাকে জানাইয়াছে, ইহা নির্বুদ্ধিতা, অসম্ভব, এমন কি ক্ষতিকর। যাহারা এই জবাব আমাকে দিয়াছে তাহাদের অধিকাংশেরই নিজেদের অনুসৃত নীতির প্রতি একটা প্রকৃতিগত বিতৃষ্ণা আছে। কিন্তু নিজেদের স্বভাবের বিরোধিতা করিয়াও ইচ্ছা করিয়াই হিংসাকে বরণ করিয়াছেন। ইহারা সেই গোঁড়া ধার্মিকদলের লোক যাহারা ‘‘অপরের মুক্তির জন্য নিজেরা পাপ করে।’’
Advertisement
‘‘হায়! আমি আজ পর্যন্ত দেখিলাম না ইহা কাহাকেও বাঁচাইতে পারিয়াছে, অথবা কাহাকেও বা কোনো জিনিসকে বাঁচাইতে পারিবে। অথচ, ধর্মান্ধদের কাহাকেও ত’ টিকিতে দেখিলাম না; বিদ্রোহী বিবেকের দংশনে ও দ্বিধাবিদীর্ণ মনের যন্ত্রণায় দুর্বল বা অবসন্ন হইয়া তাহারা শেষ হইয়া গেল। প্রিয় রলাঁ, বারবুসের নিকট লিখিত পত্রে আপনি যে ভাবধারার বিশদ বিশ্লেষণ করিয়াছেন তাহা গোঁড়ামীমুক্ত ও চমৎকার। আপনার জ্যাঁ ক্রিস্তফ ও অন্যান্য পুস্তক পড়িয়া রলাবাদ সম্পর্কে আমার যে ধারণা হইয়াছে, বারবুসের নিকট আপনার পত্রে
তাহা পরিষ্কারভাবেই ব্যক্ত হইয়াছে।
ধর্মের মতই শক্ত কোনো নৈতিক নিষ্ঠা যদি মজুরশ্রেণীর বিবেককে তাহার জন্মের প্রত্যুষ হইতেই বিদীর্ণ না করে, তবে সত্যকার কোনো সমাজতন্ত্রী নাই বা থাকিতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরিয়া এই ভাবধারা আমি পোষণ করিয়া আসিতেছি। ইহার জন্য আমাকে যে মূল্য দিতে হইয়াছে তাহা সামান্য নহে। ইহা ব্যক্ত করিবার জন্য মাঝে মাঝে কঠোরতম আশ্রয় গ্রহণ করিতেও আমি বাধ্য হই। আমরা, যাহাদের ধর্মান্ধতা বা বিশ্বাসের সংকীর্ণতা নাই তাহারা, নিজেদের বিশ্বাসের জন্যই আজ সংগ্রাম করিতে বাধ্য; ঘৃণা ও কলংক পর্যন্ত বরণ করিয়া আমরা আমাদের বিশ্বাসকে কার্যে পরিণত করিতে বাধ্য। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করিতেছি না, তবে আমার মনে হয় আমরা কিছুই করিতে পারিবই। আপনি কি তাই মনে করেন না? আসুন তবে, আর যাহারা আমাদের মত চিন্তা করেন তাহাদের খুঁজিয়া বাহির করি। যাহারা অন্যভাবে চিন্তা করেন হয় ত’ তাহাদের আমরা বুঝাইতে পারিব, যে আত্মসমালোচনা আজ আমাদের প্রয়োজন তাহা তাহাদের অবশ্য কর্তব্য ও প্রয়োজনীয়।’’
গর্কির চিঠিগুলির কিছু অংশ তুলিয়া দিলাম মাত্র। চিঠিগুলি তিনি আমাকে রাশিয়ান ভাষায় লেখেন, আর আভরামফ্ ফরাসী ভাষায় উহার অনুবাদ করেন।
১৯। ইউরোপ, এমনকি রাশিয়া সম্পর্কে গর্কির হতাশ। ১৯২৩ সালের চিঠিগুলির মধ্যে যতটা ফুটিয়াছে এতটা আর কখনই হয় নাই। ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যু পর্যন্ত এই হতাশার মধ্যে তাহার কাটে। লেনিনের মৃত্যু তাহার সমস্ত মন ও মস্তিষ্ককে গভীরভাবে আলোড়িত করে।
(ক্রমশ)
Advertisement



