জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে যুব সম্প্রদায়ের এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শীঘ্রই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। ক্ষমতায় বসার ১৫ মাস পরও নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়ে এখনও গড়িমসি করে চলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশের ভাল করার জন্য ইউনূস ক্ষমতায় বসেননি। জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের যুব সমাজ দুর্নীতি ও সংরক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল। ক্ষমতায় এসে ইউনূস হাসিনা সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত মামলা ছিল তা বন্ধ করেছেন। এটাই ছিল সরকারে এসে তাঁর প্রথম কাজ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করেছিল, সেই জামাতে ইসলামির হাত ধরে ক্ষমতায় থাকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার বিএনপি দল প্রথমে তাঁকে মদত দিলেও তারাও এখন দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
অনেকটা একই রকম ঘটনায় নেপালে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সুশীলা কার্কি। কিন্তু ১৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও ইউনূস এখন গদি ছাড়তে নারাজ। এখানেই বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির আশঙ্কা নির্বাচন নিয়ে।
Advertisement
এদিকে যাদের অধীন থেকে মুক্তিলাভের জন্য ৩০ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছিলেন, সেই পাকিস্তানের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দহরম মহরম ভালো চোখে দেখেছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগকে। তবু বিভিন্ন জেলায় লিগের পতাকা নিয়েই বিক্ষোভে নেমেছেন মানুষ। ১৫ মাস আগে ছাত্র-যুবদের গণ অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার সময় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যে আশা-ভরসা করে ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন, আজ ১৫ মাস পরে তাঁরা বুঝতে পারছেন যে, তাঁদের যোগ্য নেত্রীই ছিলেন শেখ হাসিনা। এখন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা সরকার-বিরোধী এবং সরকারের বিভিন্ন দেশবিরোধী কাজের প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমে বড় আকারে পরিণত হচ্ছে।
Advertisement
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনা দ্বীপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য দেওয়ার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশের জনমত মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আবার চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নের জন্য তা চিনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিতে পারছে না। মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের সঙ্গে বেশ কিছু গোপন চুক্তিও করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রায় চার হাজার পাকিস্তানি সেনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন। তাঁদের কী উদ্দেশ্য, তার উপর অবশ্য নজর রেখেছে ভারত। আবার মুহাম্মদ ইউনূস সরকার ৪০ হাজার যুবককে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করেছে, যাঁদের প্রশিক্ষণ দেবে পাকিস্তানি ফৌজ। এটা যে পরিষ্কার ভারত-বিরোধী চক্রান্ত, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পাকিস্তানের হাত থেকে যখন পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হয়ে নতুন বাংলাদেশ সরকার তৈরি হয় এবং তার সঙ্গে ভারত যে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তা সকলেরই মনে আছে। ভারতই প্রথম দেশ, যা বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল। তারপর যা ঘটেছিল, তা ইতিহাস। ঢাকায় পাক সেনাদের আত্মসমর্পণ এবং নতুন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে তৈরিতে ভারতের সহযোগিতা এবং সেই পরাজয়ের জ্বালা এখনও ভুলতে পারেনি পাকিস্তান। তাই এবার মুহাম্মদ ইউনূসকে হাতিয়ার করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতে অরাজকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার চার হাজার পাক সেনা দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন।
অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। তারপরও পাকিস্তানের প্রেমে গদগদ ইউনূস। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন, খুন, ধর্ষণের ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ইউনূস সরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৭০০-র বেশি যুবকের আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ইউনূসের হিন্দু-বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছে।
অর্থনীতি, শিল্প, শিক্ষা— সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া পাকিস্তানের হাত ধরে বাংলাদেশের কবর খুঁড়তে চান ইউনূস। এক্ষেত্রে আবার যে একটা গণ-অভ্যুত্থান হবে না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের দাবিতে ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনে ফের বিক্ষোভে ফেটে পড়েন যুব সমাজ। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আবার আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীরা ধীরে ধীরে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ফের আন্দোলনের পথে নেমেছে। এই সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ইউনূস সরকারের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। পাকিস্তানের হাত ধরে বাঁচার চেষ্টা করছেন মহম্মদ ইউনূস। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত পাকিস্তান নিজেই ট্রাম্পের মুখাপেক্ষী এই অবস্থায় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না করে ইউনূস বাংলাদেশকে ক্রমশঃ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক সরকারই এখন বাঁচাতে পারে বাংলাদেশকে।
Advertisement



