কেপলারের রিফাইনিং, সাপ্লাই এবং মডেলিংয়ের তথ্য বলছে, ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি দৈনিক ৫ লক্ষ, ৪০ হাজার ব্যারেল পৌঁছেছে। যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি ২০২২ সালের পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ভারতের ক্ষেত্রে মার্কিন তেলের আমদানি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর কারণ, ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে ভারতের তেল পরিশোধন সংস্থাগুলি।
তাই প্রায় পুরোটাই নির্ভর করতে হচ্ছে মার্কিন তেলের উপর। মার্কিন তেল আমদানি বৃদ্ধি দিল্লির কৌশলগত রিজার্ভ পরিচালনার পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখার এবং রাশিয়ার তেল ক্রয় সম্পর্কে ওয়াশিংটনের উদ্বেগকে সামাল দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবেও ধরা হচ্ছে। তবে, ভারতের অপরিশোধিত তেলের আমদানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অংশ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বৃহত্তম দুই তেলশোধক সংস্থা লুকঅয়েল ও রসনেফ্টের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। নিষেধাজ্ঞার পেছনে যুক্তি হিসেবে মার্কিন রাজস্ব দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, তেল বিক্রির টাকা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে রাশিয়া। তাই রাশিয়ার দু’টি বৃহত্তম তেল পরিশোধক সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এক সংবাদ সংস্থা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বিষয়ে সরকার এবং রফতানিকারীদের সুস্পষ্ট অবস্থানের জন্য অপেক্ষা করছে ওই সংস্থাগুলি।
Advertisement
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকদিন আগেই দাবি করেছিলেন, ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চলতি বছরের শেষের মধ্যে অনেকটা কমিয়ে দেবে। এমনটা নাকি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে বলেছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে জানা গেল, তারপর থেকেই ভারতের তেলশোধক সংস্থাগুলি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রুশ সংস্থাগুলিকে নতুন করে তেলের বরাত দিচ্ছে না। কিছু বরাত বাতিলও করা হয়েছে। কারণ সংস্থাগুলি মনে করছে, ওই সংস্থাগুলির কাছ থেকে তেল কিনলে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নেওয়া যাবে না।
রুশ তেল কেনা প্রসঙ্গে এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, রুশ তেল কেনা বন্ধ না করলে ভারতকে অতিরিক্ত শুল্কের মুখে পড়তে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্যে চাপ বাড়াতে মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যেই ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে। যদিও সম্প্রতি এক রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় পণ্যে মার্কিন শুল্ক ৫০ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১৫–১৬ শতাংশে নামতে পারে। শুল্ক কমার আশায় হোক বা মার্কিন চাপে একাধিক ভারতীয় সংস্থা রুশ তেল কমিয়ে দিয়েছে বলে খবর।
তবে হঠাৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কিছু সংস্থা তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে তেল কিনছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন নতুন তেল আমদানির টেন্ডার ডেকেছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজও স্পট মার্কেট থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারই একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরই রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ কমাচ্ছে ভারতীয় সংস্থাগুলি। ওই প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয় যে, রিলায়্যান্স ‘রসনেফ্ট’-এর কাছ থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রতিবেদনের পর রিলায়েন্স, যা ২০২২ সাল থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় রুশ তেল ক্রেতা, জানিয়েছে, তারা সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে। সংস্থাটি আপাতত রসনেফ্ট থেকে তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ভারত দৈনিক গড়ে ১৯ লক্ষ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে, যা রাশিয়ার মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে নিষেধাজ্ঞা ও ছাড় কমে যাওয়ায় সরবরাহের গতি ইতিমধ্যেই কমেছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতের রুশ তেল আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৮.৪ শতাংশ কমেছে, এবং রিফাইনারিগুলি ক্রমশ মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা থেকে আমদানির দিকে ঝুঁকছে।
Advertisement



