• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

জুন মাসে ব্রুসেলসের লার্ লিবর্ পত্রিকায় পল কল্যাঁ কর্তৃক উহা পুনর্মুদ্রিত হয়। বিদেশে ইহাদের প্রত্যেক সংস্করণগুলিতে বহু নূতন সমর্থনকারী স্বাক্ষরদান করেন।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

Advertisement

সুদীর্ঘ মৃত্যুনিদ্রা হইতে জাগিয়া অতীতের কবর হইতে এই স্বপ্ন বাহির হইয়া নূতন জীবনের মধ্যে স্পন্দি হইতেছে। ১৯৩১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেদর গ্ল্যাডকভ ও ইলিয়া সেলভিনস্কিকে লিখিত এক পত্রে আমি সেক্সপিয়রের এন্টনি ও ক্লেঅপেট্রার সেই অনৈসর্গিক দৃশ্যের উল্লেখ করি যেখানে ‘‘পৃথিবীর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী মহাসংগ্রামের পূর্বসন্ধ্যায় অন্ধকারে এন্টনির শিবিরের উপর আকাশে রহস্যময় সংগীত ভাসিয়া যাইতে শোনা গেল— যেন কোনও অদৃশ্য অশ্বারোহীদল সংগীত ও বাদ্যের সমভিব্যাহারে চলিয়া গেল।

Advertisement

…. ইহা ডিওনিসসের অশ্বারোহীদল; পুরাতন জগতের দুই দেবতা মানবীয়তা ও স্বাধীনতা তাহার শিবির ত্যাগ করিয়া যাইতেছে। তাহারা নূতন সমাজব্যবস্থার দিকে চলিয়া গিয়াছে; তাহাদের পূজারী আমরাও তাহাদের পিছু চলিয়াছি। তাহাদের আমরা সেবা করিতে চাই, যে সমাজে তাহারা উদ্দীপনা আনিবে সেই সমাজকে আমরা সেবা করিতে চাই। আমার বুকে তাহাদের অগ্নিশিখা জ্বলিতেছে বলিয়াই আমি শেষে নূতন জগতে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছি। যে পথে আসিয়াছি সে পথ অন্ধকার, কন্টকাকীর্ণ। সর্বাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন, কখনও পড়িয়াছি আবার উঠিয়াছি; কখনও পথ হারাইয়াছি আবার পথ পাইয়াছি, আবার দৃঢ়পদে যাত্রা শুরু করিয়াছি। এ শিখার উজ্জ্বলতা যেন চিরদিনই বাড়িয়া চলে। মুক্ত আত্মা যেন মুক্ত মানুষকে বিশ্বজনীন সমাজতন্ত্রী গণতন্ত্রগুলির জনগণকে উদ্দীপ্ত করিতে পারি। এই জনগণসম্মেলনই পৃথিবীতে আনিবে শান্তি, মানুষের শ্রমের সম্মুখে খুলিয়া ধরিবে অবাধ প্রগতির প্রান্তরভূমি।

ভাষ্য ও মন্তব্য
১। বার্লিনের সাময়িক পত্রিকা Demokratieতে ১৯১৯ সালের ১৮ই জুলাই তারিখে ডাঃ নিকোলাই কর্তৃক চিন্তার স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী’ (Declaration of Independence of Thought) প্রকাশিত হয়। ঐ বৎসর আগস্ট মাসে Forum পত্রিকায় ভিলহেলমস্ হার্জগ উহা প্রকাশ করেন; জুন মাসে ব্রুসেলসের লার্ লিবর্ পত্রিকায় পল কল্যাঁ কর্তৃক উহা পুনর্মুদ্রিত হয়। বিদেশে ইহাদের প্রত্যেক সংস্করণগুলিতে বহু নূতন সমর্থনকারী স্বাক্ষরদান করেন।

লে প্রেক্যুরসোর পুস্তকে প্রকাশিত এই ঘোষণা বাণীর নিম্নে যাহাদের স্বাক্ষর ছিল তাহদের নাম আমরণ জানিলাম সত্য, কিন্তু ভয়ে অথবা জাতীয়তাবাদী একগুঁয়েমিতে যাহারা স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করিলেন তাহাদের নাম ইতিহাস ভুলিবে না। ইহাদের মধ্যে ছিলেন শার্ল জিদ, ডাঃ রিশে, মাদাম ক্যুরি; লুসিতানিয়া নিমজ্জনের কথা ইহারা ভুলিতে পারিলেন না। আপাত বিরোধী বাকবিশারদ বার্ণাড শ বলিলেন, লেখনী দিয়া যাহারা যুদ্ধ করিয়াছেন তাহারা অন্যায় করেন নাই; আনাতোল ফ্রাঁস স্বভাবত একেবারে চুপ করিয়া রহিলেন। ঐ কয় বৎসরের আমার ডায়েরীতে এই সবের চমৎকার একটি সংকলন আছে; আর আছে ইহাদের সম্পর্কে বাট্রাণ্ড রাসেলের নিকট লিখিত আমার একখানি নৈরাশ্যপূর্ণ চিঠি।

২। ‘‘এখন হইতে লাইবনেক ও রোজা লুক্সেমবুর্গের রক্ত মজুরশ্রেণী ও দলত্যাগী সমাজতান্ত্রিকদের মধ্যে অপার সমুদ্রের মত বহিয়া চলিবে। নীতির দিক দিয়া দেখিতে গেলে অবস্থা এইভাবে পরিষ্কার হইয়া যাওয়ায় ভালই হইয়াছে, কিন্তু রাজনৈতিক বিপদ রহিয়াছে সাংঘাতিক। ফ্রান্সে ইহা কেহই বুঝিতেছে না। সিডারম্যানেরা ও এবার্টরা আজ প্রতিক্রিয়ার শিবিরে বন্দী। সাম্রাজ্যবাদী সমরতন্ত্রের বিরাট ধ্বংসস্তুপকে লইয়া পার্লামেন্টারী সমাজতন্ত্রের কৌটিল্যগণ একটি নূতন দল গঠন করিতেছে; ফ্রান্স যেন সতর্ক থাকে।

(ক্রমশ)

Advertisement