ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে পাত্তা না দিয়ে বারে বারে আমাদের দেশকে অসম্মান করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পর্বের সূত্রপাত পহেলগাম নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের সময় থেকে। তার আগে অবশ্য ভারতীয় পণ্যের উপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক চাপান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে মুখে কুলুপ এঁটেছেন নরেন্দ্র মোদী। চিন সহ অন্যান্য অনেক দেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিলেও আবেদন-নিবেদন ও কাকুতি-মিনতির পথ বেছে নেয় ভারত সরকার। শেষে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসাবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ সহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। ব্রাজিল ছাড়া আর কোনও দেশের বিরুদ্ধে এত উচ্চ হারে শুল্ক চাপানো না হলেও মোদী-নির্মলারা প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোনও শব্দ ব্যয় করেননি।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক লেনদেনের জন্য ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলনের পরিকল্পনা করেছে। গত বছর ব্রিকসের কাজান সম্মেলনেই এই নতুন মুদ্রার প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হয়। এতেই চটে লাল ট্রাম্প। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মুদ্রায় ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি যাবতীয় বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু করলে মার্কিন ডলারের মূল্য এক ধাক্কায় একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। আমদানি নির্ভর অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের সমস্ত বাণিজ্যিক লেনদেন ডলারে হয় বলেই তার চাহিদা মূল্য এখনও এত বেশি। ওয়াশিংটন জোর খাটিয়ে এই নিয়ম বহাল রেখেছে। তার জেরেই এখনও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দাবিদার থেকে গিয়েছে আমেরিকা। তবে ডলারের বদলে ব্রিকস মুদ্রায় লেনদেন শুরু হলে এই দাপটও আমেরিকা আর ধরে রাখতে পারবে না।
Advertisement
বলা বাহুল্য, ব্রিকসের প্রত্যেকটি দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন অংশীদারিত্ব অন্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। চিন আজ গোটা বিশ্বের যাবতীয় ভোগ্যপণ্য থেকে যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও রপ্তানি করে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হওয়ায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত বিশ্বের সব থেকে বড় ভোগ্যপণ্যের গ্রাহকে পরিণত হবে। পরিষেবা রপ্তানিতে ভারত প্রথম সারিতে রয়েছে। কৃষিজ পণ্যের রপ্তানিতে ব্রাজিলের অবস্থান শীর্ষে। গোটা ইউরোপ ও পশ্চিমা দুনিয়ায় পারমাণবিক পদার্থ ও জ্বালানি তেল এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অস্ত্র রপ্তানি করে রাশিয়া। ব্রিকসের নতুন সদস্য ইরান, মিশর, ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব রাষ্ট্রগুলির অবস্থানও বিশ্ব বাণিজ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই সমস্ত দেশ হঠাৎ করে ডলার পরিত্যাগ করে ব্রিকস মুদ্রা ব্যবহার করলে আমেরিকার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এই আশঙ্কাতেই ব্রিকসের মতো বহুদেশীয় জোটকে তিনি ‘আমেরিকা বিরোধী বলে আক্রমণ করছেন। তাঁর দাবি, ব্রিকস-এ থাকা বিভিন্ন দেশ আমেরিকার ক্ষতি করতে ষড়যন্ত্র করছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির হুমকিতে অনেক দেশই ব্রিকস ছেড়ে দিচ্ছে। যারা এখনও এর অংশ হিসাবে রয়েছে, আগামীতে তাদের গভীর সমস্যার মুখে পড়তে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
Advertisement
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে বহু মেরুর দুনিয়া তৈরির লক্ষ্যে গঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। কখনও ব্রিকসকে ‘আমেরিকা বিরোধী জোট’ বলে দাগিয়েছেন। কখনও আবার সাংহাই কর্পোরেশন অ্যাসোসিয়েশন (এসসিও)-কে ‘অপরাধীদের চারণভূমি’ বলে আক্রমণ করেছেন। এই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার ‘অপরাধে’ ব্রাজিল ও ভারতের ওপর কার্যত বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন ট্রাম্প। চিন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার উপরেও একই ভাবে এমন নানা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ডলার প্রসঙ্গে আমি কঠিন অবস্থান রাখি। যারা ডলারে লেনদেন করে, তারা অবধারিতভাবে অন্যদের তুলনায় আমাদের থেকে বিশেষ সুযোগসুবিধা পাবে। কেউ ব্রিকসের সদস্য হতে চাইতেই পারে, তবে বিনিময়ে আমরা তাদের উপর অতিরিক্ত শুল্ক বসাবো। তাই সবাই এখন ভয় পেয়ে ব্রিকস ছাড়ছে।’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন মোদী নাকি তাঁকে বলেছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করে দেবে। সরাসরি মোদীর নাম উল্লেখ করে এমন গুরুতর সিদ্ধান্তের কথা ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণার পরও মোদী কোনও কথা বলেননি। আসলে মোদী সরকার ভারতের ভবিষ্যৎকে এমনভাবে আমেরিকার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে যে ট্রাম্পের বা আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলার সৎসাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। ট্রাম্প যা খুশি তা বললেও ট্রাম্পকে চটাতে পারছেন না মোদীরা। দেশের সম্মান-মর্যাদাও ট্রাম্পের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছেন মোদী। ট্রাম্পের সম্মান হানিকর আচরণে এবং মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বিরোধিতা বা প্রতিবাদ না করে মৌনব্রত পালন করছেন। আসলে আমেরিকার হাত ছেড়ে চিনের হাত ধরায় মোদীর আপত্তি। তাই ট্রাম্পই মোদীর সহায়। লাথিঝাঁটা খেয়েও, অপমান সহ্য করেই ট্রাম্পই মোদীর ভরসা।
Advertisement



