পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরুপে অভিযুক্ত পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসীর যাবতীয় যুক্তি ও আশঙ্কা নস্যাৎ করে দিয়েছে বেলজিয়ামের আদালত। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, মেহুল চোকসীকে ভারতে প্রত্যর্পণে আর কোনও আইনি বাধা নেই। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক চোকসীর বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ করার পরপরই সস্ত্রীক দেশ ছেড়ে চলে যান হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসী। গত ৭ বছর ধরেই তিনি বিদেশ বসবাস করছেন। এদিকে দেশে ফেরার ক্ষেত্রে আইনি জট কাটার পর মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে তাঁকে রাখার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। আর্থার রোড জেলের বিশেষ সেল ১২ নম্বর ব্যারাকই হবে মেহুল চোকসীর নতুন আস্তানা। এই ১২ নম্বর ব্যারাকই ছিল ২৬/১১ কাণ্ডে ধৃত একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কাসভের ঠিকানা।
মেহুল চোকসীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। কিন্তু কোন না কোনও বাধায় তা পিছিয়ে যায়। কখনও কূটনৈতিক জটিলতা, কখনও বা চোকসীর আদালতে যুক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি ভারত সরকার জানতে পারে মেহুল বেলজিয়ামে রয়েছেন। সেইমতো যোগাযোগ করা হয় সে দেশের সরকারের সঙ্গে। গত ১২ এপ্রিল বেলজিয়াম পুলিশ একটি হাসপাতাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে হাজির করানোর পর শুরু হয় তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া।
Advertisement
চোকসীকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রত্যর্পণ মামলা গত ১৭ অক্টোবর বেলজিয়াম আদালতে উঠলে বিচারক জানিয়ে দেন, তাঁর ভারতে ফেরার ক্ষেত্রে আর কোনও আইনি বাধা নেই। অন্যদিকে ভারতীয় এই ব্যবসায়ী যাতে পালিয়ে না যেতে পারেন, তার জন্য তাঁকে হেফাজত থেকে মুক্ত না করার আবেদন জানান আইনজীবীরা। বেলজিয়াম পুলিশের চোকসীকে গ্রেপ্তারের আইনি বৈধতা বহাল রাখে আদালত। এরপরই চোকসীকে দেশে ফেরাতে পদক্ষেপ করে দিল্লি।
Advertisement
সূত্রের খবর, বেলজিয়াম আদালত রায়ে বলেছে, অভিযুক্ত চোকসী বেলজিয়ামের নাগরিক নন। তিনি বিদেশি হিসেবে সেখানে যান। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। এই পরিস্থিতিতে চোকসীকে ভারতে ফেরানো উচিত। কারণ আর্থিক দুর্নীতি এবং ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ গুরুতর অপরাধ। বেলজিয়াম আদালতের পর্যবেক্ষণ, চোকসীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ২০১, ৪০৯, ৪২০ এবং ৪৭৭এ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে চোকসী আত্মপক্ষ সমর্থন করতে বিভিন্ন নথি ও আন্তর্জাতিক ঘটনার উল্লেখ করলেও তা এই মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয় বলে জানায় আদালত।
এদিকে ভারতে আনার পর চোকসীকে অন্য আসামীদের থেকে আলাদা রাখা হবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর থাকার ব্যবস্থা করতে তাই সম্পূর্ণ পৃথক সেল প্রস্তুত রাখার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে মহারাষ্ট্র কারা দপ্তর। ৩ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রয়েছে আর্থার রোডের ১২ নম্বর ব্যারাক। এখানে মোট ৩টি ঘর রয়েছে। সেখানেই তাঁকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বন্দিদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আলাদা রাখা হয়েছে রান্নাঘর। রয়েছে আধুনিক শৌচাগারও। সেখানেই বেসিন, পাশ্চাত্য স্টাইলের শৌচালয় ছাড়াও রয়েছে জামাকাপড় ও তোয়ালে রাখার ব্যবস্থা। শৌচাগার পেরিয়েই রান্নাঘর, আর তারপরই সেল। সেলটি যথেষ্ট হাওয়া-বাতাসে ভরা। রয়েছে ৬টি টিউবলাইট, ও ৩টি সিলিংফ্যান। সময় কাটানোর জন্য রয়েছে একটি স্মার্ট টিভি।
আর্থার রোড জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকের এই নির্দিষ্ট সেল থেকেই আদালতে যাতায়াত করতে হবে মেহুল চোকসীকে। প্রয়োজনে যাতায়াত করবেন চিকিৎসকেরাও। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকবে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব লাভ করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন গীতাঞ্জলি জেমস-এর কর্তা মেহুল চোকসী এবং তাঁর স্ত্রী প্রীতি। চলতি বছরের এপ্রিলে ভারত সরকারের অনুরোধেই বেলজিয়াম সরকার ওই পলাতক ব্যবসায়ীকে একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে। চোকসীকে ফেরানোর জন্য ভারতের প্রচেষ্টা বেলজিয়ামের আদালতের রায়ের পর স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও বেলজিয়ামের উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার রয়েছে চোকসীর।
Advertisement



