• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

দেশমাতৃকার চরণে আত্মনিবেদিত মহাপ্রাণ যুগলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী

দুঃখের এই যে, এই আত্মনিবেদিত অগ্নি সন্তানদ্বয়ের জন্ম ও প্রয়াণ দিবস নীরবে নিভৃতে চলে যায় আত্মবিস্মৃত বর্তমান বাঙালিয়ানার নাগরিক পরিসরের উদাসীনতায়।

ফাইল চিত্র

শান্তনু রায়

এ নিছক সমাপতন নয়— হয়ত পূর্ব নির্ধারি— বিধাতার লিখন মহাকালের অমোঘ বিধান।
কেবল আজীবন একনিষ্ঠ সুভাষ অনুগামী নন উভয়েই সুভাষ-দর্শনের বিশ্বস্তও সদর্থক ভাষ্যকার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাকার এবং প্রচারকও বটে। দেশব্রতে স্বেচ্ছানিবেদিত একই ভা বাদর্শে প্রাণিত দাম্পত্য বন্ধনে আবিষ্ট সমমনষ্ক দু’টি মহাপ্রাণ আজীবন সহযোদ্ধা-স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণে এবং স্বাধীনোত্তর দেশের সাধারণ অসহায় মানুষের সমস্যা লাঞ্ছনা দূরীকরণে নিরলস প্রয়াসে, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদে সংগ্রামে।

Advertisement

একজন কিশোরী বেলায় তাঁর বাবাকে জানাচ্ছেন, আমার উদ্দ্যেশ্য নয় এই পৃথিবীতে লোকের প্রিয় হওয়া। কিন্তু এই পৃথিবীতে খাঁটি হওয়া। খাঁটি হয়েও যদি প্রিয় হতে পারি তবে তো কথাই নেই।
আর সহযোদ্ধা অন্যজন ঢাকার এক পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হলেও মাত্র তেরো বছর বয়সেই বৈপ্লবিক কাজে হাতেখড়ি— পরবর্তীতে আবার একাধারে বিপ্লবী দার্শনিক ও তন্ময় সঙ্গীতসাধক।
দেশহিত ব্রতে আত্মনিবেদিত এই চির সংগ্রামী যুগলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হবার কথা এবছরই।

Advertisement

সপ্তদশী হলেন শ্রীহট্টের আদি বাসিন্দা আসাম সিভিল সার্ভিসের সদস্য গিরিশ চন্দ্র নাগের কন্যা লীলা নাগ যিনি পরবর্তীকালে বিপ্লবী দেশনেত্রী লীলা রায় নামে অবিভক্ত বাংলা তথা বাংলার বাইরে ভারতীয় রাজনীতিতে সমধিক পরিচিত হন।

জাতির জনকের জন্মদিন হিসেবে আড়ম্বরে উদযাপিত ২ অক্টোবরেই আসামের গোয়ালপাড়ায় উনবিংশ শতকের অন্তিম বছরে এক শিক্ষিত উদার সংস্কৃতিমনা পরিবারে ভূমিষ্ঠ এই মহিয়সীর যথার্থ মূল্যায়ন আজও হয়নি— স্মরণেও অনীহা। সরকারি প্রচারের গণ্ডির বাইরে ও ক্রমে বিস্মৃতির অতলে চলে যাওয়া উপমহাদেশের নারী জাগরণের এই পথিকৃৎ কবিগুরুর স্নেহধন্যা যেমন জীবনের যাত্রাপথে বারংবার মানসিক শক্তি সঞ্চয় করেছেন সেই মহাদ্রষ্টার আশীর্বানী থেকে তেমনই স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির অনুগামী না হলেও এক সশ্রদ্ধ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে চিঠিপত্রে যোগাযোগ ছিল উভয়ের মধ্যে।

অভিজাত পরিবারের শিক্ষিতা, মেধাবী, সুদর্শনা এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্না তিনি ইচ্ছে করলেই আর পাঁচজন বাঙালী মহিলার মত সুখে স্বচ্ছন্দে নিরাপদ আরামে জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সব হেলায় সরিয়ে জীবনের কুসুমাস্তীর্ন পথ পরিত্যাগ করে স্বেচ্ছায় দুর্গমের পথযাত্রী হয়েছেন।

ভূপেন্দ্র কিশোর রক্ষিত রায়ের কথায়, ‘বিত্তশালী পিতার একমাত্র বিদুষী কন্যার পদতলে যখন ভবিষ্যৎ সুখের সংসার গড়াগড়ি যাচ্ছিল তখন তিনি সব ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবীনী হবার প্রতিজ্ঞা করলেন। তৎকালে ঢাকা শহরের আঁধার পরিবেশে একটি দীপশিখার মত তিনি সঞ্চারিত হচ্ছিলেন, কিন্তু বিপ্লবী সংস্থার সংস্পর্শে এসে সারা বাংলার গগনে তিনি সঞ্চারিত হতে থাকলেন বিদ্যুৎশিখার মত।
ক্ষুদিরামের ফাঁসির দিনে বাড়িতে অরন্ধন পালনের পারিবারিক আবহে তাঁর মধ্যে দেশাত্মবোধ ও বিপ্লবী চেতনার স্ফুরণ ঘটায় কৈশোর থেকেই দেশের জন্য আত্মনিবেদনের উদ্দেশ্যে আত্মপ্রস্তুতি। বাবা গিরিশচন্দ্র নাগও অবসর গ্রহনের পর কেন্দ্রীয় আইনসভায় আসামের প্রতিনিধিরূপে নির্বাচিত হলেও লবন কর প্রবর্তনের প্রতিবাদে এক বছরের মধ্যেই পদত্যাগ করেন।

১৯১৭-এ ঢাকার ইডেন স্কুল থেকে বৃত্তি সহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী লীলা নাগের নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা ও সাহসে কলেজ জীবনেই বড়লাটের পত্নীকে নতজানু হয়ে অভিবাদন জানানোর প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দেন।
সহপাঠী, বন্ধু এবং শিক্ষক— সকলের প্রিয় বিদুষী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম তিনি কন্ঠসঙ্গীত, যন্ত্র সংগীত, ছবি আঁকা বা খেলাধুলা সেতারের পাঠও— সব কিছুতেই বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।

বেথুন কলেজের ইংরাজিতে অনার্সে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত লীলা নাগ তখন পর্যন্ত সহশিক্ষার প্রচলনহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনমনীয় দৃঢ় চেতনায় বিশেষ অনুমতি আদায় করে ইংরাজি এমএ ক্লাসে ভর্তি হলে পরিচিতি ঘটে সহপাঠী বিপ্লবী অনিল রায়ের সঙ্গে। ১৯২৩-এ দু’জনেরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ-লীলা নাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম মহিলা হিসাবে।

এমএ পাস করার পরপরই লীলা নাগ তাঁর বারো জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ঢাকায় ‘দীপালি সংঘ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে নারীশিক্ষা বিস্তারে বারোটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র এবং শিল্প শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকায় প্রথম বেসরকারি ইংরাজি বিদ্যালয় ‘দীপালি স্কুল’ও। দীপালি সংঘ যেমন সকল স্তরের নারীদের মধ্যে এক অনাস্বাদিত আনন্দ প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টির সঙ্গে স্বাবলম্বনের আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করেছিল। এর নিরলস কর্নধার রূপে লীলা নাগও সারা বাংলাদেশে সুপরিচিত হয়ে উঠলেন।

১৯২৫ সালে দীপালি সংঘের পক্ষ থেকে ঢাকায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের অভিনবত্ব এবং অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যার বিশালত্ব দেখে কবি বলেছিলেন— ‘এশিয়াতে মেয়েদের এত বড় সভা দেখিনি কোথাও…।’

সবার অলক্ষ্যে দীপালি সংঘের মাধ্যমে বিপ্লবের দুর্গম দুঃসাহসিক পথের ডাক পেয়ে সেদিকেই পা বাড়ানো লীলা নাগের গড়া মহিলা ‘আত্মরক্ষা কেন্দ্র’এ অস্ত্রচালনা ও লাঠি খেলা শেখানো হত। সেই সময় ঢাকায় সক্রিয় বিশেষত শহরের তরুণদের মধ্যে, অনিল রায়ের সংগঠন ‘শ্রীসঙ্ঘ’। ঢাকার মানিকগঞ্জের বায়রা গ্রামে ভুমিষ্ঠ ও কৈশোরেই বৈপ্লবিক কাজে হাতেখড়ি হওয়া অনিল রায় একদিকে গোপন বিপ্লবী দলের সংগঠক-নেতা আবার সঙ্গীতের তন্ময় সাধকও। পদ্য, গীত রচনায় সহজাত শিল্পী-সাহিত্য-সংস্কৃতির উপাসক। তাঁর ভাবনাতেই প্রথম এসেছিল মহিলা সংগঠনের রাজনৈতিক দিকটি। একদা সহপাঠী বিপ্লবী অনিল রায়ের সংস্পর্শে এসেই অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হলেন লীলা নাগ। জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে গান্ধীজীর অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনে আস্থাহীন তাঁরা পথের নির্দেশ পেলেন সুভাষচন্দ্রের বক্তব্যে। বিপ্লববাদকে পন্থা হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ায় লীলা নাগও যোগ দিলেন বিপ্লবী দল শ্রীসঙ্ঘে ১৯২৬-এ আরও একগুচ্ছ মহিলাও প্রধানত অনিলের উদ্যোগেই।

১৯২৮ সালে কলকাতায় নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে বাংলার অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে অনিল রায় শ্রীসঙ্ঘের নেতারূপে এবং লীলা নাগও নারী আন্দোলনের অবিসংবাদী নেত্রীরূপে যোগ দিলে নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনে বাংলার নারী আন্দোলনের ইতিহাস উপস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত লীলা নাগের জাতীয় আন্দোলনের আঙিনায় প্রবেশ। ঢাকায় ফিরে চলল একই সঙ্গে নারী আন্দোলন এবং অন্তরালে বিপ্লবপথের প্রস্তুতি। ক্রমে বিপ্লবী গুপ্ত আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্কহেতু বোমা বারুদের স্পর্শে ও সেতারের তার ঝংকৃত করা তাঁর হস্তাঙ্গুলি থেকেছিল অচঞ্চল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

১৯৩১-এর এপ্রিলে ‘মেয়েদের মধ্যে দেশাত্মবোধ ও শংকাহীন দেশসেবার ভাব জগ্রত করবার’ উদ্দেশ্যে লীলা নাগের উদ্যোগে এবং সম্পাদনায় নারী আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ-নামকরণকৃত সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক রুচিশীল পত্রিকা ‘জয়শ্রী’ প্রকাশিত হয় ঢাকা থেকে কবিগুরুর এই আশীর্বাণীকে পাথেয় করে—
বিজয়িনী নাই তব ভয়,/ দুঃখেও বাধায় তব জয়।
অন্যায়ের অপমান / সম্মান করিবে দান,
জয়শ্রীর এই পরিচয়।।

কিন্তু ওই বছরেরই ২০ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হলেন লীলা নাগ ও রেনু সেন। ১৯৩১-এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৯৩৭-এর ৮ অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘদিন বিভিন্ন জেলে দীর্ঘ কারাবাসের পর ভারতবর্ষে বিনাবিচারে আটক প্রথম মহিলা রাজবন্দী লীলা নাগের ১৯৩৭-এ কারামুক্তির পর তাঁকে আশীর্বাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন— ‘মানুষের হিংস্র বর্বরতার অভিজ্ঞতা তুমি পেয়েছ— আশা করি এর একটা মূল্য আছে, এতে তোমার কল্যানসাধনাকে আরও বেশি বল দেবে… তুমি আমার সর্বান্তকরণের শুভকামনা গ্রহণ করো।’

জেল থেকে বেরিয়েই আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন কর্মযজ্ঞে। ‘জয়শ্রী’ও প্রকাশিত হতে লাগল।
একটা সময় বাংলার প্রথিতযশা প্রায় সকল কবি-সাহিত্যিক, বিদগ্ধজনের সৃজনে সমৃদ্ধ ব্যতিক্রমী রুচিশীল এই পত্রিকাটির মান বজায় রাখতে বিশিষ্ট আদর্শ ও চিন্তাধারার প্রতীক প্রতিষ্ঠাত্রী সম্পাদিকার সতর্ক নজর থাকত।

১৯৩৮-এ সুভাষচন্দ্র কর্তৃক জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি গঠিত হলে সেই কমিটিতে বাংলা থেকে মহিলা সাবকমিটির সভ্য মনোনীত হলেও ১৯৩৯-এর জুন মাসে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করলে অনিল রায় এবং লীলা রায় সেইদলে যোগদান করেন।

আপন আদর্শনিষ্ঠা, নিরলস পরিশ্রম এবং কর্মদক্ষতায় সুভাষচন্দ্রের আস্থা, নির্ভরতা অর্জন করায় সুভাষচন্দ্র গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব এসে পড়ে অনিল রায় লীলা রায়ের উপর এবং দলের ইংরাজি সাপ্তাহিক ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ সম্পাদনার ভার পড়ে লীলা রায়ের উপর। সুভাষবাদী আদর্শ প্রচারে অনিল রায়ের দুর্জয় নিষ্ঠা ও সাহসের বিশিষ্টতায় বাংলার বাইরেও তখন তাঁঁদের রাজনৈতিক পরিচিতি।

১৯৪১ সালে সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান এবং বার্লিন থেকে তাঁর বেতার ভাষণে বৈদেশিক সাহায্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশে ক্ষিপ্ত ব্রিটিশ সরকার ফরোয়ার্ড ব্লক সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে আরম্ভ করল। ইতিমধ্যে ১৯৪১ সালের ২১ জুন জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করে বসায় ভারতীয় কম্যুনিস্টদের কাছে রাতারাতি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ‘জনযুদ্ধে’ রূপান্তরিত হল। হঠাৎ ব্রিটিশ সরকারকে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়া তাঁদের প্রচণ্ড আক্রোশ গিয়ে পড়ল নেতাজী অনুগামীদের উপর। বামপন্থার দাবিদার কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যরা দেওয়ালে দেওয়ালে নেতাজী অনুগামীদের বিরুদ্ধে পোস্টার সেঁটে দিলেন ‘shoot them’। ব্রিটিশ সরকারের সমর্থক ইংরেজি স্টেটসম্যান পত্রিকাও পিছিয়ে ছিল না।

এরকম এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনুগামীদের মনে সাহস যোগাতে এগিয়ে এসে দেশনেত্রী বিপ্লবী নায়িকা লীলা রায় বলিষ্ঠ উচ্চারণে প্রতিবাদ করেছিলেন— ১৯৪২-এর ১৯ মার্চ থেকে পরপর তিনদিন হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় We shall not stand it, শিরোনামে প্রকাশিত শানিত লেখনীতে।
‘বামপন্থীদের’ দ্বিচারিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে তিনি স্পষ্টত বলেছিলেন, ‘… সর্বোপরি, আমাদের কম্যুনিস্ট ও র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক বন্ধুগণও সমস্বরে ‘গণযুদ্ধ’ ও ‘যুক্তফ্রন্ট’-এর চিৎকারে গগন বিদীর্ণ করছেন, সেই সঙ্গে তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছন থেকে ছুরি মারার উদ্দেশ্যে একটি স্থানীয় কলহকে মতাদর্শের বিরোধ হিসাবে উপস্থিত করছেন। আর এই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীরাই এমন একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় স্তম্ভের পেছনে আশ্রয় নিচ্ছেন— যার কাজই ছিল ভারতের জাতীয় আকাঙ্ক্ষার নিয়মিত বিরুদ্ধতা করা। ভারতীয় রাজনীতিতে এদের একমাত্র ভূমিকা হল সেই পথে চলা— যে পথে চলতে গেলে বাধা স্বল্পতম। যতদিন ভারত শৃঙ্খলিত রয়েছে, ততদিন এযুদ্ধ কখনো তার কাছে জনযুদ্ধ হতে পারে না’।

ফল আবার কারাবাস দু’জনের। ১৯৪৬-এ জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তাঁরা আবার ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আবার ‘জয়শ্রী’ এবং ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ পত্রিকা প্রকাশ করতে উদ্যোগী লীলা রায় সে বছরই লক্ষ্মীপূজোর দিনের নোয়াখালীর ঘটনার খবর পেয়েই গান্ধীজি নোয়াখালী পৌঁছনোর আগেই উপদ্রুত এলাকায় গিয়ে সাহস করে প্রতিদিন মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ভীত সন্ত্রস্থ গ্রামগুলিতে ঘরেঘুরে চারশোর বেশি মহিলাকে উদ্ধার করেন। নোয়াখালীতে ঐতিহাসিক পদযাত্রায় লীলা রায় এবং অনিল রায়কে সঙ্গে নিতে অনিচ্ছুক গান্ধীজিও তাঁর এ কাজের প্রশংসা করেছিলেন।
লীলা রায় অনিল রায় দেশবিভাগের বিরোধিতা করছিলেন তীব্রভাবে। ভারতীয় গণপরিষদে অবিভক্ত বাংলা থেকে একমাত্র মহিলা সদস্য লীলা রায় দেশভাগের প্রতিবাদে কয়েক মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। তবু দেশবিভাগ হলে তাঁরা ঢাকাতেই থেকে যাওয়া মনস্থ করেন।

কিন্তু ক্রমে তাঁরা পাকিস্তান সরকারের চক্ষুশূল হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে কলকাতায় চলে আসেন প্রিয় শহর, প্রিয় দেশ ছেড়ে। উভয়ের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠল কলকাতা। লীলা রায় উদ্বাস্তু এবং দুঃস্থ মহিলাদের পুনর্বাসনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সঁপে দিলেন। ১৯৫১ সালে ভারত সরকারে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিলের বিরোধিতা করলে আবার কারাবন্দি হন।

কিন্তু তাঁদের তেরো বছরের বিবাহিত জীবনের, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ বছর কারাবাস— আকস্মিক পরিসমাপ্তি হল, ১৯৫২ সালে কর্কট রোগে মাত্র একান্ন বছর বয়সে অনিল রায়ের মৃত্যু হওয়ায়।
সুভাষবাদের এই একনিষ্ঠ অনুগামী ও ব্যাখ্যাকার মনস্বী কারাবাসে থাকাকালীন রচনা করেছেন— ‘সমাজতন্ত্রীর দৃষ্টিতে মার্ক্সবাদ, নেতাজীর জীবনবাদ’ এবং ‘What Netaji standsfor’, ‘ধর্ম ও বিজ্ঞান গান্ধীবাদ ও অহিংসা’, ‘বিবাহ ও পরিবারের ক্রমবিকাশ’, ‘হেগেল প্রসঙ্গে’, ‘ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা’ প্রভৃতি গ্রন্থ। তিনি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতেন— নেতাজীর পথই ভারতের সামনে একমাত্র পথ এবং বিপ্লবী বা সমাজবাদী হতে গেলে মার্ক্সবাদী হওয়া অপরিহার্য নয়। দর্শন শাস্ত্রে পণ্ডিত, সাহিত্যমনষ্ক তিনি ছিলেন আবার রবীন্দ্রগানের তন্ময় সাধক।

সক্রিয় রাজনীতির উদ্দাম ঢেউয়ে উথাল পাথাল জীবনের ভেলায় অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিজের আদর্শ ও কর্মের লক্ষ্যে দৃঢ় থেকে প্রায় ৩৮ বছর ভেসে থাকার পর গুরুতর রোগের আক্রমণ এবং তারপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের পরও দুর্গত মানুষদের পাশে সবসময় ছিলেন দেশনেত্রী। ১৯৬৪ সালে পূর্ব বাংলা বাস্তুহারা বাঁচাও কমিটির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে আবার গ্রেফতার। আবার বন্দিজীবন। এর ফলে শরীর ক্রমশ ভেঙে পড়ছিল ১৯৬৭ সালে পা ভেঙে হলেন শয্যাশায়ী। সে বছরই হল আরেকবার স্ট্রোক।

নেতাজীর ঘনিষ্ট সহযোগীদের অন্যতম তিনি, তাইহোকুতে তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু ‘কাহিনী’ বিশ্বাস করতেন না এবং তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল এলাহাবাদের কাছে ফৈজাবাদের গুমনামী বাবা’ই (ভগবানজী) নেতাজী। যাঁর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। নেতাজির আর এক বিশ্বস্ত সহযোগী পবিত্র মোহন রায়ের কাছ থেকে ১৯৬৩-র জানুয়ারির এক প্রাক অপরাহ্নে গুমনামী বাবাই যে নেতাজি এবং তাঁর অবস্থান জানার পর তাঁর মনের অনুভূতি তিনি ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেছেন এভাবে—
‘৭/১/৬৩ আজ দুপুরে এক অত্যাশ্চর্য সত্য উদঘাটিত হোলো। অভাবনীয় তার সম্ভাবনা, অচিন্ত্যনীয় ওর আনুসঙ্গিক সবকিছুই। আমার অনুভূতিকে বিশ্লেষণ করতে বা ভাষা দিতে চেষ্টা করবো না। কেবল বলবো— হে অঘটনপটিয়সী দেবতা আবার দেখলাম অকস্মাৎ কোথায় কি ঘটে— চির অসম্ভব আসে চির সম্ভবের বেশে। যাদের বল্লাম তাদের নানা বিচিত্র প্রতিক্রিয়া।’

এরপর নৈমিষারণ্যে গিয়ে গুমনামী বাবাকে দর্শন করার পরে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন পত্র বা বিশ্বস্ত লোক মারফৎ। ১৯৬৩-র জানুয়ারী থেকে ১৯৬৮-র জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে ‘জয়শ্রী’ পত্রিকায় তাঁর সম্পাদকীয় প্রতিবেদনগুলিতেও যেন অস্ফুট ইঙ্গিত ছিল কোনও আগমনের পদধ্বনির। তাঁর এই দৃঢ় প্রতীতির ভিত্তি যে কি, তা অবশ্য প্রকাশ্যে আসেনি, তবে এই অগ্নিময়ীর মৃত্যু ভগবানজীর কাছেও ছিল এক বিরাট আঘাত।

১৯৬৮-এর ৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে সদা কর্মতৎপর সাহসী, বাগ্মী অকস্মাৎ বাকশক্তিহীন হয়ে গেলেন, চলাফেরার ক্ষমতাও রইল না। ২৩ জানুয়ারি তাঁর লেখা শেষ সম্পাদকীয়। শেষ প্রায় দু’বছর এসএসকেএম-এ প্রায়অচেতন অবস্থায় ঠাঁই হওয়া সুভাষবাদে অবিচল আস্থাশীল এই অনির্বান দীপশিখা, উপমহাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ ও আমৃত্যু এক নিরলস অনন্যা যোদ্ধা চিরপ্রণম্য বিপ্লবী দেশনেত্রীর জীবনদীপ নির্বাপিত হল ১৯৭০-এর ১১ জুন। সব পিছুটান ছিন্ন করে চলে গেলেন, আত্মনিবেদিত সেই বিপ্লবী। দেশমাতৃকার চরণে নিবেদিতপ্রাণ এক মহাজীবনের অনন্তের পথে যাত্রায় মহাকালের রথে, অবসান হয়ত হল এক যুগের। এক মহীরুহেরও যেন পতন।
ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে তাঁর কর্মকাণ্ডের সূচনা ও আবর্তিত হলেও সমগ্র দেশের কথাই তাঁর ভাবনায় যে ছিল, তা পরিস্ফুট হয় ‘জয়শ্রী’র সম্পাদকীয় স্তম্ভে ও অন্যত্র তাঁর বিবিধ রচনায় এবং তাঁর রাজনৈতিক ভাবনার প্রেক্ষিত থেকে। পণ্ডিত নেহরুর এবং কংগ্রেসের নীতির কঠিন সমালোচক যে তিনি ছিলেন, ‘জয়শ্রী’ পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন রচনায় তা স্পষ্ট। অতএব মূল্য তো দিতেই হবে। একথা অনুমান করা যায় যে, যদি তিনি নীতির প্রশ্নে একটু আপোষ করতেন, তৎকালীন ক্ষমতাধরদের কাছে একটু মাথা নত করতেন, তবে হয়ত তিনি রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার অলিন্দের কাছে পৌঁছতে পারতেন।

রাজনৈতিক প্রাপ্তিযোগও অলভ্য ছিল না কিন্তু তাঁর আদর্শনিষ্ঠা, আত্মসম্মান বোধ, পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত নির্লোভ দেশাত্মবোধ আত্মোৎসর্গের প্রেরণা তাঁকে সঠিক দিশা দিয়েছে। অন্যায়কে মেনে নেওয়া বা এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। স্বাধীন ভারতেও তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছে একাধিক বার পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য।

হয়ত স্বাধীনোত্তর দেশে একটি পরিবারের হাতে ক্ষমতার রাশ চলে যাওয়ায় প্রথম থেকেই সরকারি প্রচার যন্ত্রের সাহায্যে সেই পরিবারের মাহাত্ম্য-কীর্তনে ক্রমে সুভাষচন্দ্রকে প্রান্তিকতায় নির্বাসিত করার ব্যর্থ অপচেষ্টার পাশাপাশি সকল সুভাষ অনুগামীকেও অবহেলা কিংবা প্রলোভনে বশ করার চেষ্টা চলতে থাকে। যিনি তারা জেনকিনসের কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, ‘It is true, I did let subhash down, তাঁর উত্তরসুরীদের আমলে বা উদ্যোগে সেই অপপ্রচার জোরদার হবে সেই স্বাভাবিক। সুযোগ আসে এই অপকর্মে বসুবাড়ির একাংশের ভূমিকায় এবং হাতিয়ার হিসেবে জরুরি অবস্থা জারির কাছাকাছি সময়ে প্রকাশিত অনুগত খোসলা কমিশনের রিপোর্টটি। বাড়তি সুবিধা ১৯৮৫-র পর থেকে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭০-এ দেশনেত্রীর প্রয়াণের পর প্রথম শ্রেণীর এক বাংলা দৈনিকের সম্পাদকীয় স্তম্ভে লেখা হয়েছিল— ‘দেশনেত্রী লীলা রায়ের লোকান্তরে বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিক্ ক্ষেত্র হইতে একজন অসামান্যা মহিলার তিরোধান হইল।… কিন্তু দেশবাসীর স্মৃতিতে তাঁহার ভাবমূর্তি অমর হইয়া রহিয়াছে এবং দেশপ্রেম, মানবপ্রীতি যতদিন সদগুণ বলিয়া বিবেচিত হইবে ততদিন দেশবাসী তাঁহাকে ভুলিতে পারিবে না’। অথচ কোনও সংবাদপত্রেই ইদানীং বহুবছর ২ অক্টোবর কিংবা ১১ জুন সেই অসামান্যার জন্ম বা প্রয়াণ দিবসের উল্লেখটুকুও থাকে না, কিন্তু গুরুত্ব সহকারে মাঝে মধ্যেই প্রকাশিত হয় সেই ইতিহাসপুরুষের ‘উত্তরাধিকারী’ ছলে কতিপয় স্বার্থান্ধের রেঙ্কোজী মন্দিরের ‘চিতাভস্ম’ দেশে আনার অসৎ দাবির কথা এবং বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর উদ্দেশ্যমূলক কল্পকাহিনী। বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর ‘কাহিনী’তে আস্থাহীন সুভাষবাদে তন্নিষ্ঠ দেশনেত্রীর কথা আজ আর তাই স্থান পায় না।

বর্তমান আবহে অগ্নিকন্যা বিপ্লবী লীলা রায়ের আদর্শবাদিতা, অতুলনীয় নির্লোভ আত্মত্যাগ হয়ত রূপকথাসদৃশ মনে হলেও। দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গিত সমকালীন আরও অনেক মহাপ্রাণের মধ্যে নিঃসন্দেহে সেই মহিয়সী ছিলেন অনন্যসাধারণ ব্যতিক্রমী এবং অননুকরণীয়। তাঁর ব্যক্তিত্বে একই সঙ্গে জননীর স্নেহপরায়ণতা কিন্ত আদর্শের প্রতি আপসহীন অবিচল আস্থা আর অন্যায়ের প্রতিরোধের কর্তব্যবোধের কাঠিন্য।

প্রসঙ্গত, উপমহাদেশে নারীজাগরণের এই পথিকৃতের কর্মকাণ্ডের সূচনাভূমি ঢাকা শহর হয়ত এই মহিয়সীকে ভোলেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা ছাত্রীর কথা শ্রদ্ধায় স্মরিত হত কিছুকাল আগেও শিক্ষার সেই মহাঙ্গনে। তাঁর স্মৃতিরক্ষার প্রয়াসে ১৯২৩ নির্মিত ‘লীলা নাগ: দ্য রেবেল’ এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রটি সে বছরের নভেম্বরে অতিথিদের উপস্থিতিতে প্রথম প্রদর্শনী উপলক্ষে তাঁর স্মরণে এক আলোচনাসভাও অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের উপস্থিতিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের এই প্রথম ছাত্রীটির কথা সশ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়। ১৯২৩-এর মার্চে উপাচার্য দ্বারা নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের একটি পরীক্ষা হলের ‘লীলা নাগ পরীক্ষার হল’ নামকরণ অনুষ্ঠানেও নারী শিক্ষা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক রূপান্তরের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগের ‘দীপালী সঙ্ঘ’ প্রতিষ্ঠা ও সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগের অনন্য ভুমিকা পালনের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখিত হয়।

তবে অতীব দুঃখের ও দুর্ভাগ্যের যে শিক্ষা সংস্কৃতির পীঠস্থান এবং তাঁর ছাত্রজীবনের ও কর্মজীবনের দুই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যাপিত হয়েছে মহাপ্রয়াণ ঘটেছিল যে মহানগরে সেই কলকাতায় তিনি এখন বিস্মৃতপ্রায়।

‘রাজনীতি, সমাজসেবা ও সাহিত্য—ত্রিধারায় লীলা রায়ের বহমান ব্যক্তিত্ব, রাজনীতি ক্ষেত্রে তাঁর অতুলনীয় অবদান, তীক্ষ্ণধী, অপরিসীম বুদ্ধি, আদর্শ কর্মক্ষমতা তাঁর প্রতিটি কর্মে’— সশ্রদ্ধে উল্লেখিত সাহিত্যিক বাণী রায়ের লেখনীতে।

এমন এক মহতী জীবনের স্মরণে চর্চায় প্রাণিত হলে আধুনিক প্রজন্ম এবং এদেশের বর্তমান নারীবাদীরা, এক অত্যাশ্চার্য ঐতিহ্যের উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ত সম্ভব।

তেমনই দার্শনিক বিপ্লবী অনিল রায়ের অগাধ পাণ্ডিত্যের স্বাক্ষর বহনকারী তাঁর গ্রন্থগুলি অবশ্যপাঠ্য হতে পারে আজকের প্রজন্মের।

কিন্তু দুঃখের এই যে, এই আত্মনিবেদিত অগ্নি সন্তানদ্বয়ের জন্ম ও প্রয়াণ দিবস নীরবে নিভৃতে চলে যায় আত্মবিস্মৃত বর্তমান বাঙালিয়ানার নাগরিক পরিসরের উদাসীনতায়। রাজনীতি তথা বৌদ্ধিক পরিসরে আজ তাঁরা সচেতনভাবে প্রান্তকায়িত। এ লজ্জা ও আক্ষেপ কি একবারও পীড়িত করে না সচেতন বাঙালি মানসকে!

Advertisement