• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

ঘটনার পর ঘটনা ঘটিতে লাগিল। কয়েকদিনের মধ্যেই জার্মানীতে ফ্যাশিজম্ তাহার অভিযান শুরু করিল। সমগ্র দেশকে চক্ষের পলকে পদানত করিয়া ফেলিল।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর…

Advertisement

আমিও ইহা স্বীকার করিয়াছিলাম; আমিও সংগ্রাম করিয়াছিলাম। ১৯৩২ সালের বসন্তকালে বারবুসের সহিত আমি সর্বপ্রকার ‘‘বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবীদের সংযুক্ত ফ্রন্ট’’ গঠনের জন্য আবেদন জানাইঃ ‘‘আসুন আমরা মিলিত হই! পিতৃভূমি (আমাদের আন্তর্জাতিক পিতৃভূমি) বিপন্ন’’। (১৯৩০ সালের ১লা মে তারিখে ল্যুমানিতে ও প্রাভদা পত্রিকায় প্রকাশিত)।

Advertisement

ইহার একমাস পরে যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমরা একটি সম্মেলন করিলাম। ‘‘যুদ্ধ তখন চারিদিক হইতে ঘনাইয়া আসিতেছে, বিপদের খড়্গ সমস্ত জাতির উপর উদ্যত’’। এই সম্মেলনে আমরা প্রতিনিধি আহ্বান করিলাম ‘‘সমস্ত জাতির সমস্ত দলের সদভিপ্রায়যুক্ত সমস্ত নরনারীর‘‘— আহ্বান করিলাম এবং একটি বিরাট মহাসম্মেলন যাহা ‘‘সোশিয়ালিস্ট, কমিউনিস্ট, সিণ্ডিকালিস্ট, এনার্কিস্ট, র্যা ডিক্যাল সমস্ত বিভিন্ন মতের রিপাবলিকান, স্বাধীন ভাবুক ক্রিশ্চান, অ-দলীয় ব্যক্তিগণ, শান্তিবাদী, প্রতিরোধপন্থী, বিবেকের নির্দেশে যুদ্ধবিরোধী, স্বাধীন স্বতন্ত্র ব্যক্তিগণ, ফ্রান্সে ও অন্যান্য দেশের তাহারা সকলে—যাহারা যে কোনো উপায়েই যুদ্ধ নিবারণে সংকল্পবদ্ধ’’। সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে তাহাদের সকলেরই ঐক্যকে একটা স্থায়ী রূপ দেওয়াই ছিল এই মহা-সম্মেলনের লক্ষ্য। যুদ্ধ, ফ্যাশিজম্ ও প্রতিক্রিয়া অভিন্ন। কারণ সোশিয়ালিস্ট ও কমিউনিস্ট গঠনকার্যে একমাত্র প্রয়োজন শান্তির। বাঁচিবার জন্য, জয়ী হইবার জন্য এই শান্তি তাহার চাইই। সোভিয়েট ইউনিয়ন এ-কথা ভালোভাবেই প্রমাণ করিয়াছে।

‘‘মুগ্ধ হৃদয়ের’’ এই পরিকল্পনাটিকে আমি ‘‘যুদ্ধ-বিরোধী সমস্ত দলের বিশ্বসম্মেলনের সম্মুখে পেশ করিলাম। ১৯৩২ সালের ২৭শে ও ২৮শে আগস্ট তারিখে আমস্টার্ডমে এই সম্মেলন হয়। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের নেতাদের এবং সমাজতন্ত্রের জাতীয় দলগুলির গোপন ধ্বংসমূলক ষড়যন্ত্রসত্ত্বেও এই বিরাট সম্মেলনের কি বিপুল প্রতিক্রিয়া হইয়াছিল তাহা আজ সুবিদিত। নেতাদের অপেক্ষা জনসাধারণ সমস্ত ব্যাপার স্পষ্ট করিয়া দেখিতে পাইয়াছিল; যদিও তাহারা নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল তথাপি নেতাদের তাহারা সম্মুখ পানে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়াছিল; এবং এই ধাক্কার পশ্চাতে ছিল ঐক্য ও সাধারণ ফ্রন্টের অদম্য শক্তির তাড়া। আমস্টার্ডম্ সম্মেলনের গৌরব বারবুসের নামের সহিত জড়িত। সমস্ত দেহ মন দিয়া তিনি ইহার সাফল্যের জন্য চেষ্টা করিয়াছিলেন। এই সম্মেলনই প্রথম সুদৃঢ় কেন্দ্র যাহাকে ঘিরিয়া যুদ্ধ ও ফ্যাশিজম্-বিরোধী শক্তিগুলির সুস্থ প্রভাব ঐক্যবদ্ধ হইয়াছিল।


ঘটনার পর ঘটনা ঘটিতে লাগিল। কয়েকদিনের মধ্যেই জার্মানীতে ফ্যাশিজম্ তাহার অভিযান শুরু করিল। সমগ্র দেশকে চক্ষের পলকে পদানত করিয়া ফেলিল। আমার কমিউনিস্ট বন্ধুদের সঙ্গে আমিও প্রথমদিন হইতেই এই সংগ্রামে যোগ দিলাম। চালাইলাম তীব্র সাহিত্যিক অভিযান। ১৯৩৩ সালের অধিকাংশ ভাগ ইহাতেই কাটিয়া গেল।

আমি কতকগুলি ফ্যাশিজম্-বিরোধী ইস্তাহার প্রকাশ করিলাম এবং ১৯৩৩ সালের ৯ই মে তারিখের কোয়েলনিসে ৎসাইতুং পত্রিকায় একটি বিতর্কের সূচনা করিলাম (১৫ই জুন তারিখের ইউরোপ পত্রিকায় এই চিঠিখানি প্রকাশিত এবং সকল দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিত হয়)।

(ক্রমশ)

Advertisement