রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর…
Advertisement
ইহার পরের কয়েক বৎসর (১৯২৮-৩৫) আমার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটিল না, বরঞ্চ যে নীতি সেদিন আমি গ্রহণ করিয়াছিলাম সেই নীতির সত্যতা ঐ সময়ের মধ্যে আরও দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হইল। ঐ নীতির ভিত্তিতে ঐ সময়ে যে কয়খানি ইস্তাহার লিখিয়াছিলাম তাহাতে কিছু চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হইল। অবশ্য এমন কিছু হইল না যাহাতে শত্রু ক্ষান্ত হইতে পারে। তাহারা ইচ্ছা করিয়াই আমার মধ্যে ‘‘সংগ্রামের ঊর্ধ্বে’’ পুস্তকের গ্রন্থাকারকেই দেখিতে লাগিল (ঐ পুস্তকের শিরোনামা ছাড়া অবশ্য তাহারা কিছু পড়ে নাই), তাহারা স্বীকার
করিতে চাহিল না যে, গত ১৫ বৎসর আমি স্গ্রামের মধ্যস্থলে দাঁড়াইয়া, সংগ্রামের পুরোভাগে দাঁড়াইয়া যুদ্ধ করিতেছি। সে-যুদ্ধ জাতির বিরুদ্ধে জাতির বর্বর প্রলয়ঙ্কর যুদ্ধ নহে। সে-যুদ্ধ শোষণকারী দাস ব্যবসায়ীদের লইয়া গঠিত এক অভিশপ্ত হত্যাপ্রবণ ও সমাজের বিরুদ্ধে সকল জাতিরই এক পবিত্র সংগ্রাম। গত সাত বৎসরে যে সকল প্রবন্ধ লিখিয়াছি সেগুলি সম্পর্কে মন্তব্য করা এখানে নিষ্প্রয়োজন। উহাদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি কথাই এখানে উল্লেখ করিব। পাঠক যেন সেগুলি নিজেরাই দেখিয়া লন। প্রবন্ধগুলি পড়িলেই যথেষ্ট হইবে, উহার টিকা-টিপ্পনির প্রয়োজন হইবে না। প্রবন্ধগুলিকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা চলে। একই কাজের উহারা চারিটি বিভিন্ন স্তর মাত্র।
Advertisement
১) সোভিয়েট ইউনিয়নকে রক্ষা।
২) আন্তর্জাতিক শান্তি ও তাহার আনুসঙ্গিকগুলিকে রক্ষা করা।
৩) ইউরোপেই হউক কি উপনিবেশেই হউক ধনতন্ত্রী ও সামরিকতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালনা।
৪) ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে গত কয়েক বৎসর য সংগ্রাম তীব্র হইয়া উঠিয়াছে তাহাকে পরিচালনা করা।
নিম্নলিখিত প্রবন্ধগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯২৭ সালের অক্টোবর মাসে লিখিত এবং ১৯২৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী তারিখে ইউরোপ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘‘আামার রাশিয়ান ভ্রাতাগণের প্রতি’’ শীর্ষক আমার অভিভাষণের সমালোচনা করিয়া নির্বাসিত রাশিয়ান লেখক ‘‘কনস্টান্টাইন বালমন্ট ও আইভান বুনিন আমাকে যে চিঠি লেখেন তাহার জবাব’’ (১৯২৮ সালের ২০শে জানুয়ারী)
প্রতিক্রিয়াপন্থীদের একটি আন্তর্জাতিক সঙ্ঘ আপনার গুপ্ত চক্রান্তগুলিকে শান্তির যে মিথ্যা ও ছদ্ম আবরণে ঢাকিতে চাহিয়াছিল তাহার স্বরূপ প্রকাশ করিয়া নিম্নলিখিত প্রবন্ধগুলি লিখি।
১৯২৮ সালের অক্টোবরঃ ‘‘শান্তির জন্য ডাকাতি’’। প্রধানত সোভিয়েট ইউনিয়নের বিরুদ্ধে হুগেনবুর্গ, আর্নল্ড রেশবের্গ প্রমুখ ব্যক্তিরা ফ্রাঙ্কো-বেলজিয়াম-পোলিশ-জার্মান প্রতিক্রিয়াশীল ব্লক গঠনের যে চক্রান্ত করিতেছিলেন এই প্রবন্ধে তাহার বিরুদ্ধে আমি সতর্কবাণী উচ্চারণ করি (১৯২৯ সালের ১৫ই অক্টোবর ইউরোপ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ)
১৯৩০ সালের ১৮ই জানুয়ারী ‘রোমের শিক্ষক সঙ্ঘের উদ্দেশ্যে প্রেরিত আবেদন।’’ লেফার পত্রিকায় প্রকাশিত কণ্ডেনহোভে কালেগির ‘‘প্যান-ইউরোপা’’ আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করিবার আবেদন এই প্রবন্ধে ছিল।
১৯৩০ সালের ৯ই এপ্রিলঃ ‘‘বাহিরের আক্রমণ হইতে সোভিয়েট ইউনিয়নকে রক্ষার জন্য আবেদন।’’ এই প্রবন্ধে আক্রমণ করিয়াছিলাম, ‘‘ফরাসী রাজনীতিতে বৈদেশিক তৈলব্যবসায়ীগণের উদ্ধত হস্তক্ষেপ, উদ্ধত প্রভাব বিস্তারকে—ঘৃণ্যতম পুঁজিবাদীর স্বার্থ ও রক্তপিপাসু ফ্যাশিজমের সহিত হোম, জেনেভা, জুদিয়ার সকল দেবতার নামে, ধর্মের নামে কপটতার জঘন্য গুপ্ত প্রেম’’ (১৯৩০ সালের ১৯শে এপ্রিল মঁদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়)।
১৯৩১ সালের ১লা জানুয়ারীঃ গাস্তঁ রিয়ঁ-র জবাবে লিখিত দীর্ঘ প্রবন্ধঃ ‘‘ইউরোপ নিজেকে প্রসারিত কর অথবা ধ্বংস হইয়া যাও।’’
(ক্রমশ)
Advertisement



