হয়তো বিতর্কিত প্রশ্ন। আমেনে গৌরাণিক দেবদেবীদের গল্প-কাহিনি নিয়ে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের মধ্যে ভয়-ভক্তি-বিশ্বাসের যেন শেষ নেই। একুশ শতকের আধুনিক মননের মানুষেরাও ভয়-ভক্তি-বিশ্বাসের জোয়ারে ভেসে চলেন। আামকে যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংহতি বোধ-বিশ্বাস আমাদের মনের গভীরে এতোটাই শিকড় গেড়ে বসে আগে যে, তাকে সহজে উপড়ে ফেলা কোনওভবেই বোধহয় সম্ভব নয়। সময়ের সরণি বেয়ে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে তা ফুলে-ফেঁপে নিজের জায়গা বেশ পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।
যদি একটা বেয়াড়া প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা, বলুন তো, পৌরাণিক দেবদেবীদের কারা সৃষ্টি করেছেন? সনাতন ধর্মে আজন্ম বিশ্বাসী সিংহভাগ মানুষেরা এ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের জবাবে চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করেন। তারা কেউ-ই সম্ভবতঃ চান না এসব নিয়ে বিতর্ক হোক। অর্থাৎ পুরানের দেবদেবীদের নিয়ে অপ্রিয় প্রসঙ্গের অবতারণা হোক-এটা তাহাদের কাছে কোনওভাবেই কাম্য নয়। আরও সহজভাবে বললে বলতে হয়, আজন্ম লালিত বিশ্বাসে ধাক্কা লাগুক তা তারা চাননা। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এতে পাপ হয়।
Advertisement
একথা সম্ভবতঃ দ্বীকার্য, পাপ-পুণ্য নিয়ে আমাদের অনেকেরই মধ্যে বেশ টনটনে একটা জ্ঞান আছে। যদিও সেই ‘টনটনে জ্ঞান’-এর মধ্যেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিভেদ-বিচ্ছেদ-বিভাজন আছে এবং বলতে দ্বিধা নেই, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অনেক সময়ই পাপ-পুণ্যের কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু অন্যের বেলা তা নিয়েই আবার অকারণ মাতামাতি করি। এমন পরস্পরবিরোধী মন-মানসিকতা আমাদের অনেকের মধ্যে বাচ্চ প্রকট। অর্থাৎ আমার বেলা বা ঠিক, তোমার বেলা তাই-ই আবার বেঠিক।
Advertisement
আসলে অকারণে ‘পাপের বোঝা’ বইতে এই জগৎ-সংসারে কে-ই বা চাইবেন? সবাই তো আর অবুঝ নন। তাই আপামর ধর্মভীরু মানুষেরা বরাবর মুখ বুজে থাকাটাই ‘বুদ্ধিমানের কাজ’ বলে মনে করেন। ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’- এই প্রাচীন লোকশ্রুতিকে প্রাধান্য দিয়ে তারা নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে থাকাটাই সমিচীন মনে করেন। আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা ও উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মধ্যে আদ্যন্ত ডুবে থেকেও তারা প্রথাগত পৌরাণিক গল্প-কাহিনিকে আকড়ে ধরেই বেঁচে-বর্তে থাকতে চান। এটাই বাস্তব।
কিংবা বলা ভালো, মানুষ এত বেশি অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন। আবহমান কাল ধরে বংশ-পরম্পরা এভাবেই তো চলে আসছে। এই সাবেকি পরম্পরা সমাজ-সংসারের দু’-একজন হয়তো অগ্রাহ্য করে থাকেন; কিন্তু সিংহভাগ ধর্মভীরু মানুষই তা দিব্যি মেনে নিয়ে আছেন। যুক্তির আলোয় বিষয়টিকে বুঝতে কিংবা ব্যাখ্যা করতে চান না। তাদের নিজেদের কাছেও এমন কোনও জোরালো যুক্তি নেই যা দিয়ে পুরান-কথা আঁকড়ে থাকা যায়। একমাত্র (অন্ধ) বিশ্বাসের চাদর দিয়ে সবকিছু আড়াল করতেই তারা বিশেষভাবে আগ্রহী।
হে প্রিয়পাঠক, আমাদের চারিদিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখুন তো। তাহলেই আমাদের চারপাশের প্রকৃত ছবিটা আপনার কাছেও স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠবে নিশ্চিত। এজন্য আপনাকে গবেষকের তকমা গায়ে লাগানোর কোনও প্রয়োজন নেই। আপনার স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধি আর সহজাত সচেতনতাই আপনাকে সবকিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে। যদি আপনি সত্যি-সত্যিই তা দেখতে চান। বুঝতে চান। কিংবা জানতে চান। অর্থাৎ সত্যি-সত্যিই সংশ্লিষ্ট বিষয়টার গভীরে ঢুকতে চান।
এবার আসা যাক আমাদের উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধের আপাত-বিতর্কিত শিরোনামটি প্রসঙ্গে। যেখানে স্পর্ধিত প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘মা-দুর্গা সত্যিই কী দুর্গতিনাশিনী?’ বাংলার স্বনামধন্য সাধুসন্ত আর সাধকজনেরাই (যেমন সাধক রামপ্রসাদ সেন, বামাক্ষ্যাপা, ভবা পাগলা প্রমুখ আরও অনেকেই) শুধু নন, ভক্তজনেরাও পৌরাণিক দেবদেবীদের ‘ঘরের জন’ করে নিয়েছেন। বৎসরান্তে উমা-মা তাঁর সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে মর্ত্যধামে অর্থাৎ ‘বাপের বাড়ি’ আসবেন-এই সহজ-সরল বিশ্বাসে আপামর বাঙালি আজও মেতে ওঠেন।
তাই এ সময় আমাদের এই ‘অভিশপ্ত বাংলা’ তো বটেই, গোটা ভারতের চারদিক জুড়েই একটা সাজ সাজ রব উঠে যায়। কী সেই রব? শারদ লগ্ন উপস্থিত। ‘মা আসছেন।’ আকাশে-বাতাসে তারই একটা অদৃশ্য মায়াবী রেশ যেন দাবানলের মতোই সর্বত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা তা সরাসরি চর্ম-চোখে দেখতে পাই না বটে; কিন্তু তার অন্তর্গত রেশ বেশ অনুভব করতে পারি। সেই না-দেখা অনুভব-অনুভূতির ওপর ভর দিয়ে মায়ের মর্ত্যে আগমনকে কেন্দ্র করে চলতে থাকে উৎসব-অনুষ্ঠানের বিপুল আড়ম্বর-আয়োজন।
এতো গেল সাধারণ ভক্তজনের মনের গোপন কথা। ইদানিং আমাদের রাজ্য সরকারও এগিয়ে এসেছে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। ঘরে-বাইরে বিপুল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও তারা আর্থিক অনুদানের অকৃপণ হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তাদের দিকে। রাজ্যের ছোট-বড়ো সব ক্লাব-সংগঠন-প্রতিষ্ঠানই পাবেন মোটা অঙ্কের পুজো-অনুদান। কোনও ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের (রাজ্য কিংবা কেন্দ্র) পক্ষে এটা কতোটা সমীচিন তা ভেবে দেখার বিষয়। কিন্তু ভোট-রাজনীতি কোনও যুক্তি-তর্ক মানতে নারাজ।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এসেছে পুজোর স্বীকৃতি। ইউনেসকো-র তরফ থেকে একে ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিলমোহর দেগে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরফলে আয়োজক-উদ্যোক্তারাও প্রাণিত হয়েছেন। একে কিভাবে আরও ভালো, আরও অভিনব ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়- তা নিয়ে চলছে প্রতিবছর চিন্তাভাবনার গভীর অনুশীলন। নামিদামি শিল্প-চিত্তকেরা মাথা ঘামাচ্ছেন। কে কাকে কতোটা টেকা দেবেন- তা নিয়েও বছরভর চলে গভীর ও গোপন রেষারেষি।
‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী’ এই বিশেষ শব্দ দু’টি আমাদের সবার কাছেই কিন্তু কমবেশি পরিচিত। কারণ মা দুর্গাকে উদেশ্য করে আমরা বরাবরই দুই সাবেকি শব্দ দু’টি গভীর বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের সঙ্গে উচ্চারণ করে থাকি। বিশেষ করে শারদলগ্নের আবেশী রেশ ছড়াতেই। সনাতন ধর্মে আদ্যন্ত বিশ্বাসীরা পৌরাণিক কাহিনিকে মান্যতা দিয়ে মা দুর্গাকে প্রকৃত ক্ষমতাবান দেবী হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকেন। তাই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ‘দুর্গতিনাশিনী’ মা দুর্গা তাদের যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা হরণ করে জাগতিক সুখ-শান্তি-স্বস্তি প্রদান করবেন।
তাই প্রতিবারই সুদূর কৈলাস পর্বত থেকে তিনি যখন মায়াবী শারদ-লগ্নে তাঁর প্রিয় সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গে নিয়ে এই ‘অভিশপ্ত’ মর্ত্যভূমে আসেন, তখন তাঁর কাছে আমাদের মতো ভক্তজনের আন্তরিক আর্তি থাকে অনেক কিছুই। কেন থাকে? আসলে তিনি যে, ‘মা-দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী।’ এই ‘দুর্গতিনাশিনী’ যে তাঁর মর্ত্যের সন্তানদের বড় আস্থা-ভরসার স্থল। ‘পারলে একমাত্র তিনি পারেন’- এই একমুখী বিশ্বাসে ভরপুর আমাদের সমস্ত দেহ-মন-প্রাণ। তাঁর প্রতি ভক্তির সঙ্গে বিশ্বাসও যে আমাদের অটুট। একে অস্বীকার করি কিভাবে?
সুতরাং তাঁর কাছে এমন আর্তি জানাবে না তো কার কাছে জানাবেন জাগতিক-শুট-জটিলতা আর দুঃসহ যন্ত্রণায় নিমঙ্গিত মর্ত্যের মানুষ? মায়ের সঙ্গে যে তাদের সন্তানের সম্পর্ক যে সম্পর্ক চিরন্তন। একে অস্বীকার করা যাবে কিভাবে? বছরের তিনটে দিন তো তিনি থাকবেন আমাদের এই মর্ত্যভূমে। তারপর আবার ফিরে যাবেন তাঁর ভোলেভালা স্বামীর কাছে সেই সুদূর কৈলাস পর্বতে। সুতরাং ‘দুর্গতিনাশিনী’র কাছে বছরভর জমিয়ে রাখা প্রার্থনা জানাবেন না তো কার কাছে জানাবেন তাঁর প্রিয় সন্তান-তুল্য ভক্তজনেরা?
অনেকে হয়তো বেয়াড়া প্রশ্ন করবেন, কেন তিনি ‘মা-দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী?’ কেন তাঁর উদ্দেশ্যে ওই কথা কটি বলেন মর্ত্যের আপামর মানুষ? কতোটুকুই বা তাঁর প্রদান-ক্ষমতা? আসলে যিনি মহিষাসুরকে দাপটের সঙ্গে বধ করে স্বর্গের ‘ক্ষমতাবান’ দেবতাদের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অনিবার্য ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন এবং তাঁদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারেন, তিনি তাঁর মর্ত্যের সমস্যা-জর্জরিত দুর্বল সন্তানদের রক্ষা করতে সক্ষম একথা বিশ্বাস না করে উপায় কী। অতএব তাঁর কাছে সম্মিলিত প্রার্থনা জানানো যেতেই পারে।
এমনিতেই দেবদেবীদের কাছে আমাদের আর্তি-প্রার্থনা জানানোর শেষ নেই। আমরা অনেকেই তাঁদের কাছে এটা দাও, ওটা দাও, সেটা দাও বলে কেবল প্রার্থনা জানাই। কেবল দাও দাও আর দাও। ভক্তদের সবকিছু দেওয়ার জন্যেই যেন তাঁর মর্ত্যে আগমন। যাবতীয় চাহিদার জোগান দেওয়াই যেন তাঁর একমাত্র কাজ। এভাবেই দেখতে শিখেছি আমরা। দেবতা মানেই দান। তামাম ভক্তদের মুক্তহয়ে দান করার জন্যেই যেন তাঁর সৃষ্টি। এই ধারাই চলে আসছে আবহমান কাল থেকে। একে কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় কি প্রিয়পাঠক।
এখন প্রশ্ন হল, গণ-প্রার্থনা তো জানানো হচ্ছে কিন্তু তার কোনও সুফল (পড়ুন প্রতিকার) এযাবৎ মর্ত্যবাসী ভক্তজনরা পেয়েছেন কি? এ নিয়ে ধর্মভীরু সনাতনী ভক্তজনরা কী বলেন? যতদূর জানি, (এই পৌরাণিক দেবীর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান নিয়েই বলতে পারা যায়) না, মর্ত্যবাসীর দুঃখ-দুর্দশা-যন্ত্রণা আজও দূর হয়নি। বরং দিনে দিনে তা আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক দর্শন নির্বিশেষে আমাদের শাসকদলের মহামান্য নেতা-মন্ত্রীদের মতোই মা দুর্গাও তাঁর মর্ত্যবাসী দুর্ভাগা সন্তানদের কথায় বোধহয় কর্ণপাত করেন না।
কিন্তু তাতে কী? আমাদের দুর্নিবার (একচেটিয়াও বলা যায়) ভক্তি-বিশ্বাস বলে কথা। মা-দুর্গার সার্বিক অপারগতা দেখেও আমাদের স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনার সামান্যতম উন্মেষ ঘটে না। আমাদের অন্তর্গত বোধ ও বোধির উদ্বোধন ঘটে না। আমাদের চোখের ঠুলিও খোলে না। অন্ধত্বও ঘোচে না। যুগ-যুগান্ত ধরে নির্বিকল্প বার্থতাও আমাদেরকে পার্থিব চাওয়া-পাওয়ার ক্ষুদ্র গন্ডি থেকে বের করে আনা যায় না। ধর্মভীরু মানুষের মধ্যে এমন মনুষ্য-প্রবণতা আমাদেরকে অবাক করে বৈকি। স্বভাবতই প্রশ্ন আগে, আর কবে বাস্তবের মুখোমুখী হবো আমরা?
চলে প্রতিবছরই ‘মা-দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী’র কাছে ভাঙা রেকর্ডের মতোই আমাদের ওই একই আর্তি আর প্রার্থনা। হে মা দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী, যাবতীয় আগতিক দুর্যোগ-বিদদ থেকে তুমি আমাদেরকে রক্ষা করো। তুমি আমাদেরকে সম্পদশালী কর। তুমি আমাদেরকে রূপ দাও, যশ দাও, অর্থ দাও, খ্যাতি দাও, সুখ দাও, শান্তি দাও, স্বস্তি দাও। কিন্তু তিনি তা আদৌ দেন কী? তবু ‘মা-দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী’র প্রতি আমাদের প্রবল ভক্তি-বিশ্বাসে সামান্যতন চিড় ধরে না। না পেয়েও বিশ্বাস হারাই না। ব্যর্থ হয়েও শিক্ষালাভ করিনা।
প্রশ্ন তুলি না, তিনি কী সত্যিই ‘মা-দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী?’ তিনি যদি সত্যিই তাই (কল্পতরু) হতেন অর্থাৎ ‘দুর্গতিনাশিনী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তো আমাদের প্রার্থনা কেন এতোদিনেও বাস্তবায়িত হয়নি। এখন বোধহয় আমাদের প্রশ্ন তোলার সময় হয়েথে। তাঁর ‘অলৌকিক ক্ষমতা’র বহর নিয়ে সংশয় আগার পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কেবল ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাসে ভর করে তাঁকে অবশ্বম্বন করার দিন ফুরিয়েছে। আর প্রার্থনা নয়, এবার কঠোর ও কঠিন সত্য উচ্চারণ করার সময় এসেছে। তিনি আসলে ‘দুর্গতিনাশিনী’ নন।
ধর্মভীরু মানুষ তবুও কিক্ত বেশ আশাবাদী। ধর্মীয় বাতাবরণে নিমন্বিত সনাতনীজনেরা আজও তাই প্রবলভাবেই বিশ্বাস করেন, দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা একদিন নিশ্চয়ই শুনবেন তাঁর মর্ত্যের যন্ত্রণাকাতর অবুঝ সন্তানদের আন্তরিক আর্তি। ঘুচে যাবে তাদের যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা-গ্লানি আর বিভেদ-বিদ্বেষ-বিভাজন, অসাম্য-বৈষম্যের অবান্বিত পরিমন্ডল। পৃথিবীটা হয়ে উঠবে মানুষের বাসযোগ্য। স্বর্গরাজা না হোক- অন্ততঃ সাধারণভাবে বেঁচে-বর্তো থাকার মতো একটা মনুষ্যতর পরিস্থিতি। মর্ত্যের রাজনৈতিক অসুরেরা হবে জব্দ।
আসলে ‘আশার ছলনে ভুলি’ আমরা অনেকেই। এটাই মানুষের অন্তর্জগতের সম্ভবতঃ মুগ্ধ-সত্তা। তাই শারদ-উৎসবকে কেন্দ্র করে আর্তি প্রার্থনার পাশাপাশি আমরা মেতে উঠি নানাবিধ সারস্বত কর্মকান্ডে। উৎসব-অনুষ্ঠান আযোজনের পাশাপাশি প্রকাশিত হয় সাহিত্য-পত্রিকার বর্ণময় সব শারদ সম্বার। আজকের নেট-যুগে কতোটা পড়েন ঠিক জানা নেই; কিন্তু প্রকাশিত হয়ে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রকাশিত হচ্ছে। যাতে সাহিত্যের প্রিয়পাঠকেরা পুজোর আনন্দের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পান সাহিত্যপাঠের অমৃতসুধা।
Advertisement



