• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

মমতার পাশে মোদি

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই আম্ফান বিধ্বস্ত বাংলা পরিদর্শনে শুক্রবার রাজ্যে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শুক্রবার পৌনে এগারোটা নাগাদ কলকাতায় নামে প্রধানমন্ত্রীর বিমান। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। (Photo: Twitter | @PIB_India)

সুপার সাইক্লোনের দমকাতে আপাতত কেন্দ্র-রাজ্য গুমোট সম্পর্কে ইতি ঘটেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই আম্ফান বিধ্বস্ত বাংলা পরিদর্শনে শুক্রবার রাজ্যে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আকাশপথে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিদর্শনের পর আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলায় রাজ্যকে হাজার কোটি টাকা অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন মোদি। সেইসঙ্গে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থসাহায্য করা হবে।

Advertisement

এদিন প্রধানমন্ত্রী করোনা এবং আম্ফান মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আম্ফানে রাজ্যের ক্ষতিপূরণে কেন্দ্রের এই ভূমিকা রাজনৈতিক সম্পর্কের মেরামতি করতে কতটা কাজে লাগবে তা অবশ্য এখনই বলা মুস্কিল। তবে আম্ফান মোকাবিলায় আপাতত যে কেন্দ্র ও রাজ্য পাশাপাশি এসেছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

Advertisement

শুক্রবার পৌনে এগারোটা নাগাদ কলকাতায় নামে প্রধানমন্ত্রীর বিমান। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরী সহ দলীয় নেতা নেত্রীরা। তারপর একই চপারে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল রাজারহাট, গোসাবা, মিনাখাঁ, হাসনাবাদ, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর কাছে থাকা বিপর্যয়ের কিছু ছবিও প্রধানমন্ত্রীকে দেখান। অন্য একটি হেলিকপ্টারে ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরী, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং ক্ষুদ্র শিল্পমন্ত্রী প্রতাপচন্দ্র সারেঙ্গি।

আকাশপথে পরিদর্শনের পর বসিরহাট কলেজ মাঠে নামে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান উত্তর চব্বিশ পরগণার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। এরপর বসিরহাট কলেজে একঘন্টার প্রশাসনিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং মমতাকে একসঙ্গে নিয়ে আম্ফানে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হয়। এরপরই এক হাজার কোটি টাকা বাংলাকে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের পরিবার এবং আহতদের অর্থসাহায্যের কথাও বলেন। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে একটি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলকে রাজ্যে পাঠানো হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। দুই চব্বিশ পরগণার বেশ কিছু অঞ্চল পরিদর্শনের পর এদিন মোদি আশ্বাস দেন, এই বিপর্যয়ে সারা দেশ সবরকম সাহায্য নিয়ে রয়েছে বাংলার পাশে তিনি বলেন, ছবিতেও দেখলাম ভয়ংকর ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের। রাজ্যের মানুষের কল্যাণ কামনায় যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

মোদি এদিন বলেন, এই কঠিন সময়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এদিন মোদি দরাজ গলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন। বলেন, মহামারী ও মহাপ্রলয়ে মমতাজির নেতৃত্বে বাংলা ভালোভাবেই লড়াই করছে। করোনাভাইরাসে লড়াই আর আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলার সব প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার পাশে রয়েছে। আমরা চাই বাংলা ভালোভাবে এগিয়ে চলুক।

পশ্চিমবঙ্গে বৈঠক সারার পর এদিন ওড়িশার উদ্দেশে রওনা হন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর এদিনের পশ্চিমবঙ্গ সফরকে ঐতিহাসিক বলে মনে করছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের মতে, আম্ফান দুর্যোগে রাজনৈতিক নেতা নয়, প্রকৃত দেশনেতার মোই বাংলার পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আম্ফান বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ পরিদর্শনে এসেছেন, বৈঠক করেছেন প্রত্যন্ত এলাকায।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত, প্রধানমন্ত্রী সেটা বুঝিয়েছেন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী রাজ্যকে সাহায্য করেছে। রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্রের নিন্দা না করে কর্তব্য পালন করা।

দিলীপ ঘোষ এদিন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা সরাসরি নিহতের পরিবার ও আহতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেন। অতীতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বুলবুলের সময় তৎকালীন রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসাহায্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন শাসক সরকার বামফ্রন্টের হাতে না দিয়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দিতে। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শই রাজ্যের ক্ষেত্রে কার্যকর করার সুপারিশ করেন দিলীপ ঘোষ।

Advertisement