• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বাংলার বুকে এক টুকরো বিলেত

টাকি রোড হয়ে বসিরহাটের দিকে যেতে ধান্যকুড়িয়া প্রাচীন বর্ধিষ্ণু এক জনপদ। এখানে একসময় প্রচুর পরিমাণে ধানচাষ হত।

‘অচেনার আনন্দকে পাইতে হইলে পৃথিবী ঘুরিয়া বেড়াইতে হইবে, তাহার মানে নাই৷ আমি যেখানে আর কখনও যাই নাই, আজ নতুন পা দিলাম, যে নদীর জলে নতুন স্নান করিলাম, যে গ্রামের হাওয়ায় শরীর জুড়াইল, আমার আগে সেখানে কেহ আসিয়াছিল কিনা, তাহাতে আমার কী আসে যায়? আমার অনুভূতিতে তাহা যে অনাবিষ্কৃত দেশ’। ‘আরণ্যক’ সাহিত্যিক বিভূতিভূষণের উদ্ধৃত এই ‘অনাবিষ্কৃত দেশ’ আবিষ্কারের নেশায় পর্যটকরা ছুটে চলেছেন সেই প্রাচীনকাল থেকেই। শীতের হিমেল হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আমন্ত্রণ আসামাত্রই বেরিয়ে পড়ার জন্য মন ছটফট করতে থাকে। এমনই এক আমন্ত্রণ রক্ষা করতে দিনসফরে বেরিয়ে পড়েছিলাম টাকির উদ্দেশে। টাকি থেকে ফেরার পথে চলেছি ‘বাংলার প্রাসাদনগরী’ বলে খ্যাত ধান্যকুড়িয়ার দিকে। হঠাৎই এক রাস্তায় ঢুকে চমকে গেলাম।

দূর থেকে রাস্তার দু’পাশে বিশাল বড় এক ফটক, যার দু’দিকে দুটো স্তম্ভ আর মাঝখানে আর্চের আকৃতি দেখে হঠাৎ করেই মনের দর্পণে ভেসে ওঠে ছোটবেলায় পড়া আর দেখা রূপকথার গল্পের সেই সিন্ডারেলা ক্যাসেল কিংবা আধুনিক সময়ের ডিজনিল্যান্ডের দৃশ্য। হুবহু যেন সেই প্রাসাদের অনুকরণে নির্মিত এই ফটক। একঝলক দেখলে মনে হয় বিলেতের কোনও এক গ্রামে চলে এসেছি। এটাই ধান্যকুড়িয়ার বিখ্যাত প্রাসাদ যা পর্যটক মহলে ‘Cinderella Castle of Bengal’ বলে পরিচিত। গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে দেখতে থাকি এর গায়ে খোদিত প্রতিটি কারুকাজ। নজর আটকে যায় ফটকের একদম শীর্ষদেশের একটি মূর্তিতে।

Advertisement

উদ্ধত ভঙ্গিতে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত সিংহের সঙ্গে যুদ্ধরত দুই ইউরোপীয় ব্যক্তি। কেয়ারটেকারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ স্টেশন থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ফটক পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে দেখা যায় একটা ছোট পুকুর। তার বিপরীত পাশেই হয়েছে ভিক্টোরিয়া ধাঁচের তৈরি এক বিরাট বড় রাজবাড়ী। এটাই এখানকার বিখ্যাত গায়েন পরিবারের বাগানবাড়ি ছিল। সূর্যের বর্ণময় আলোকচ্ছটায় পুকুরের জলে প্রাসাদের প্রতিবিম্ব পড়ে যেন সত্যি সত্যিই এক রূপকথাময় জগতের সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় কান্ট্রিসাইডের ক্যাসেল বা দুর্গের অনুকরণে বানানো বাগানবাড়িটি যেন তার ক্ষয়িষ্ণু চেহারা নিয়েও ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে বিগতদিনের আভিজাত্য ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগেও এই বাগানবাড়িতে একটি অনাথ আশ্রম ছিল। বর্তমানে অবশ্য তারা অন্যত্র চলে গেছে। গায়েনদের আসল রাজবাড়ি এখান থেকে হাঁটা পথে মিনিট দশেক। গোলাপি রঙের এই বাড়ির সামনে বিশাল বড় মাঠ, দু’পাশে উঠে গেছে টাওয়ার।

Advertisement

টাকি রোড হয়ে বসিরহাটের দিকে যেতে ধান্যকুড়িয়া প্রাচীন বর্ধিষ্ণু এক জনপদ। এখানে একসময় প্রচুর পরিমাণে ধানচাষ হত। তাত্ত্বিকদের মতে ‘ধান্যকুড়িয়া’ নামটা সম্ভবত ‘ধান’ শব্দ থেকে এসেছে। ধান্যকুড়িয়া বাংলার বুকে এমন একটি গ্রাম যেখানে পায়ে হাঁটা পথের দূরত্বের মধ্যেই আছে বাংলার বহু জমিদার এবং ‘বাবু’ উপাধি পাওয়া ব্যক্তিদের গথিক শৈলীতে নির্মিত তিনটি বৃহৎ প্রাসাদ, দুটো বাগানবাড়ি আর একটি খুব সুন্দর রাসমঞ্চ। এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায় খুব নিপুণ পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়েছিল এইসব ইউরোপীয় ঘরানায় তৈরি বড় বড় প্রাসাদগুলো।‌ এগুলো বাংলার বুকে কলোনিয়াল স্থাপত্যকলার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ধান্যকুড়িয়াকে ঘিরে রয়েছে একটি প্রবাদঃ
‘টাকির লাঠি, ধানকুড়ের চাকি গোবরডাঙার হাতি, তারাগুণের নাগ আর সোঁদরবনের বাঘ!’

এই প্রবাদের কারণ জানতে চাইলে ইতিহাসের সরণি বেয়ে যদি একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে। প্রাক-স্বাধীনতাকালে টাকির জমিদারবাবুদের লাঠির ক্ষমতা, ধান্যকুড়িয়ার জমিদারদের অঢেল টাকার জোর, গোবরডাঙ্গার জমিদারদের হাতি পোষার শখ আর তারাগুনিয়ার বারো মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা নাগচৌধুরী বংশের খ্যাতি তখন সুন্দরবনের বাঘের মতোই এখানকার বাসিন্দাদের মনে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে নিয়েছে। এই অঞ্চলে কোনোদিনই প্রতিষ্ঠিত খুব বিখ্যাত রাজা ছিলেন না। কুমির আর শ্বাপদসঙ্কুল এই জায়গার বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবন বন্যজন্তু, ঝড়-বৃষ্টি, নদীবাঁধ ভেঙে বন্যায় জেরবার ছিল। প্রায় দু’শো বছর আগে আজকের বসিরহাট মহকুমার ধান্যকুড়িয়া নামক এই জনপদে চাল, পাট আর গুড়ের ব্যবসা করে বিপুল অর্থলাভ করেন গায়েন, সাঊ আর বল্লভ পরিবার।

ব্রিটিশ শাসনাধীনকালেও এই পরিবারগুলোর বৈভব, ঐশ্বর্য, অর্থের প্রাচুর্য আর প্রতিপত্তি এতটুকুও কমেনি। বরং তাদের সঙ্গে ব্যবসার সূত্রে এই জমিদার পরিবারগুলো ধনকুবের হিসাবে পরিচিত হয়েছিল। তবে এঁরা কেউ অত্যাচারী ছিলেন না, বরং গ্রামবাসীদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতেন। এখানে তখন নীলকর সাহেবদের রাজত্ব। সঙ্গে রয়েছে ‘দাদন’ নামক এক ভয়ঙ্কর গলার ফাঁসের মতো বস্তু যা নিলে অথবা ফেরত না দিলে চাষীদের উপর শুরু হয়ে যেত অকথ্য অত্যাচার। বাংলার ভূস্বামীরা তখন কেউ বা ক্ষমতার লোভে, কেউ বা নিতান্তই বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কারণে এঁদের বিরাট প্রাসাদগুলিতেও ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।

প্রথমে গেলাম গায়েন বাড়িতে। প্রায় দু’শো বছরের কাছাকাছি এই প্রসাদ ও বাগানবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহেন্দ্রনাথ গায়েন-বংশের প্রথম পুরুষ গোপীনাথ গায়েনের সুযোগ্য পুত্র। গায়েন বংশের বসতবাড়ি হিসেবে এই বাড়িটি বাঙালি এবং কলোনিয়াল স্থাপত্যকলার মেলবন্ধনের আদর্শ নিদর্শন হয়ে উঠেছে। প্রথনেই ইন্দো-ইউরোপিয়ান শৈলিতে নির্মিত গেটের মুখে একটি মিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর প্রথম দুটো তলা গ্রীক-কোরিন্থিয়ান শিল্পশৈলী অনুযায়ী পিলারের ওপর নির্মিত। একদম তিনতলার মাথায় রয়েছে গম্বুজ। গায়ে রয়েছে বেশ কিছু ফ্রেসকো পেন্টিং।

বসতবাড়ি হওয়ার কারণে জমিদারবাড়িতে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অনেক অনুরোধ করে খুব স্বল্প সময়ের জন্য অনুমতি পেলাম। দোতলা জমিদারবাড়ির আনাচে-কানাচে বিলাসবাহুল্যের ছাপ এখনও স্পষ্ট। পুরনো আলোকস্তম্ভ, বাড়ির গৃহদেবতা শ্যামসুন্দর জিউর মন্দির, সুদৃশ্য ঠাকুরদালান… এসব দেখে হঠাৎ করে টাইমমেশিনে চড়ে পৌঁছে গেলাম সেই সময়ে আর সাহিত্যের পাতা থেকে একের পর এক ভেসে আসতে থাকে আরতির দৃশ্য, কাঁসর-ঘন্টার শব্দ, সমবেত উলুধ্বনি, বিশুদ্ধ সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ। অন্দরমহলের অভিজাত মহিলাদের নতুন শাড়ি, পায়ের নুপুরের ধ্বনি আর হাতের স্বর্ণালঙ্কারের ঝনঝন শব্দে পুজোর থালা হাতে করে অঞ্জলি দিতে আসছেন। লোকে লোকারণ্য বারমহলের উঠোন। বৈঠকখানায় বসে জমাটি আড্ডা দিচ্ছেন বাড়ির পুরুষগণ আর অতিথি-অভ্যাগতদের সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। হইচই, হাসির লহরীতে ভেসে যাচ্ছে সারামহল।

হঠাৎ করে সব মায়াবী দৃশ্য হারিয়ে গেল হাজব্যান্ডের ডাকে। ফিরে আসি জাগতিক সময়ে। বাড়ির প্রতিটি কড়ি, বর্গা, দরজা, দালান, সিলিং অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী। আজও হয়তো অনেক ইতিহাস তাদের বুকের ভিতর পিঞ্জরাবদ্ধ হয়ে চাপা পড়ে আছে। সময়ের বিবর্তনে এইসব প্রাসাদগুলো এখন আমাদের কাছে শুধুই দর্শনীয় স্থান। কয়েকজন উৎসাহী দর্শক অতীত ইতিহাস অনুভবে জাগ্রত করি। তবে কয়েক বছরের মধ্যে রাজপ্রাসাদগুলো আর টিকে থাকবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কেয়ারটেকারের কাছে জানতে পারলাম ইতিমধ্যেই গায়েনদের বাগানবাড়ি যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকারও বেশি তা মাত্র ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে এখানকার বর্তমান প্রজন্ম। ভবিষ্যতে হয়তো সে জায়গায় দেখব কোন বিলাসবহুল হোটেল কিংবা শপিং মল এই জায়গার ইতিহাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে।

নোনাধরা, ভাঙনে ভাঙনে ক্ষয়প্রাপ্ত প্রসাদের কোণে কোণে বনেদিয়ানার ছাপযুক্ত এই রাজবাড়িগুলো শুধুমাত্র আমাদের স্মৃতিপটে আর ইতিহাস কিংবা কোনও ভ্রমণ বইয়ের পাতায় ছবি হয়ে থেকে যাবে। যেমন শেষ কয়েক মাস আমরা দেখেছি নিমতিতা, আন্দুল প্রভৃতি জায়গার রাজবাড়িগুলোর ক্ষেত্রে। প্রসঙ্গত জানাই, এখানে অতীতে পঞ্চাশের দশকে উত্তমকুমারের ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’ সহ তৎকালীন সময়ের বহু চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ হয়েছিল এখানে। অতি সম্প্রতি ব্যোমকেশের ছবির কিছু দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল। শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে একসময় ‘গায়েন গার্ডেন’ নামক ছোট্ট রেলস্টেশনেও ছিল। চলাচল করত মার্টিন কোম্পানির বাষ্পচালিত ট্রেন। তবে বর্তমানে সেই রেলস্টেশনের অস্তিত্ব তো নেই-ই, বাড়ির লাগোয়া পুকুরও ব্যবহারের অনপুযুক্ত। ভীষণ খারাপ লাগল দেখে যে তালা দেওয়া বিরাট সিংহদরজায় এখন স্থানীয়রা কাপড় শুকোতে দেয়। এ দৃশ্য দেখে মনে পড়ে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দুবাবুর লেখা ‘হরিণগড়ের রাণীমা’-র রাজবাড়ির দেওয়ালেও ঘুঁটে দেওয়ার কথা।

গায়েনদের হাল্কা গেরুয়া রঙয়ের নতুন প্রাসাদ অবশ্য সুন্দর, বসবাসযোগ্য। বছরের অন্যান্য সময় ভিতরে ঢোকার অনুমতি না থাকলেও পুজোতে সর্বসাধারণের অবারিত দ্বার। বসিরহাটের বহু উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে এঁদের নাম জড়িত। কাছাকাছিই অবস্থিত পতিত পাবন সাঊ রোড ধরে সাঊ বাড়ি। এই বাড়িটির স্থাপত্য এখনও কিছুটা অটুট থাকলেও বাড়ির অবস্থা অত্যন্ত শ্রীহীন। শরিকি বিবাদের জেরে পুজোতেও তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে। এরপরে গেলাম বল্লভ বাড়ির দিকে। পথে পড়ে প্রাচীন লাইব্রেরী। সোনালি সাদায় রঙ করা বল্লভবাড়িটি এখনও যত্ন সহকারে সংরক্ষিত। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানেও সেই ইউরোপীয় স্থাপত্যকলার কোরিন্থিয়ান থাম। বাড়ির ছাদের প্রতি কোণে একটি করে ইউরোপীয় স্ট্যাচু দেখা যায়। প্রবেশের ঠিক মুখে, প্রাসাদের উপরে একজন মুকুটপরা জমিদারকে মাঝে রেখে দু’পাশে দুই সশস্ত্র ইংরেজ সিপাহীর মূর্তি সহজেই প্রমাণ করে বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ইংরেজদের তোষণ করতে সদাতৎপর ছিলেন।

এমন পুতুলের মতো অনেকগুলো স্ট্যাচু থাকার কারণে স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘পুতুলবাড়ি’ বলে পরিচিত। এখানেও প্রবেশমুখে বড় লোহার গেট। মূল ভবনের সামনে রয়েছে রঙ-বেরঙের ফুলের গাছ। প্রাসাদের নির্মাতা শ্যাম বল্লভ পাটের ব্যবসা করে প্রচুর লাভবান হয়েছিলেন। কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালের সামনে তার আরও একটি প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে। এই বল্লভ বাড়ি থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই দেখা যায় নবরত্ন ঘরানার সাদা রঙের একমাত্র রাসমঞ্চ। জনশ্রুতি এখানকার বিখ্যাত তিন জমিদারেরই অবদানে গড়ে উঠেছিল এই রাসমঞ্চ। এছাড়া টুরিস্ট স্পট হিসেবে আছে সত্যজিৎ রায় বিনোদন পার্ক। তবে ইন্দো-ইসলামিক- ফার্সি- ইউরপিয়ান স্থাপত্যরীতিতে তৈরি ধান্যকুড়িয়ার প্রাসাদগুলি দেখে মনে হয় যে এখানে সর্বধর্ম সমন্বয় সম্ভব হয়েছিল।

এই জনপদ অনেক পুরোনো হলেও প্রতি বাড়িতে বৈভবের তুলনায় স্নিগ্ধতাই বেশী নজরে পড়ল। শান্ত নিরালা অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সামনে তুলসীমঞ্চ, স্বচ্ছ জলের পুকুর, চারিদিকে ঘন সবুজ গাছপালা দেখে মনে হয় ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’। বাংলার একটা গ্রামে এরকম বিরাট বিরাট ইন্দো-ইউরোপিয়ান শৈলীতে তৈরি প্রাসাদ, কোরিন্থিয়ান স্তম্ভ, প্রাসাদের উপরে গথিক আর্কিটেকচারের নানারকমের ভাস্কর্য গোটা ধান্যকুড়িয়াকে অনন্য করে তুলেছে। ইতিহাস, হেরিটেজ স্থাপত্য, বাংলার বণিকদের বৈভব স্বচক্ষে দেখতে চাইলে যেকোনওদিন ঘুরে আসতে পারেন ধান্যকুড়িয়া থেকে।যদি এই প্রাসাদগুলোকে UNESCO ‘World Heritage Site’ হিসাবে ঘোষণা করে তাহলে বিশ্বের দরবারে এই জায়গার পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ততদিনে এদের মালিকানার হাত বদল না হয়ে যায়! বল্লভ বাড়ির পিছনে দিনান্তের নিভে আসা আলোর ঝলক দেখতে দেখতে একবার দুর্গাপুজোর সময় ধান্যকুড়িয়া গ্রামে আবার আসব মনে মনে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে চললাম গাড়ির দিকে।

কীভাবে যাবেন : ট্রেনে করে গেলে শিয়ালদা-হাসনাবাদ লাইনের কাঁকড়া-মির্জানগর স্টেশনে নামতে হয়। সড়কপথে টাকি রোড ধরে বসিরহাট যাওয়ার পথে বেড়াচাঁপা পার করেই ধান্যকুড়িয়া।

কোথায় থাকবেন : ধান্যকুড়িয়াতে পর্যটকদের থাকার জন্য কোনও জায়গা নেই। টাকিতে থেকে এই জায়গা ঘুরে দেখে নেওয়া যায়। টাকিতে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস আছে।

Advertisement