• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

মোদীকে ওয়াকফ-ধাক্কা

মূলত দু’টি প্রধান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়ে তড়িঘড়ি ওয়াকফ আইন সংশোধনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মোদী সরকারের তৈরি করা ‘ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫’-এর কয়েকটি বিতর্কিত ধারা অন্তর্বর্তীকালীন রায় দিয়ে স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যে ধারাগুলি স্থগিত হয়েছে তার সবগুলি সম্পর্কেই গুরুতর আপত্তি জানিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। সরকার সেগুলিকে বিবেচনার ন্যূনতম আগ্রহ না দেখিয়ে পত্রপাঠ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রমাণ হয়ে গেল বিরোধীরা সঠিক ছিল। সেদিন যদি সরকার বিরোধীদের আপত্তিতে গুরুত্ব দিত, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে এমনভাবে বেইজ্জত হতে হতো না।

যে কোনও ধর্মের মানুষ তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারেন স্বাধীনভাবে। সেখানে সরকার বা রাষ্ট্রের খবরদারি বা কর্তৃত্ব কায়েম ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সকল ধর্মের মানুষকেই সেই অধিকার ও স্বাধীনতা দিয়েছে। যদি কোথাও গুরুতর কোনও অনিয়ম বা বেআইনি কাজ হয়ে থাকে তবে সরকার অবশ্যই আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সরকার যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের থেকে কেড়ে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায়, তাহলে বুঝতে হবে সরকার নিজেই সংবিধানকে অস্বীকার কর্ছে, সংবিধানের বিরুদ্ধাচরণ করছে। সেক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ করবে, এটাই স্বাভাবিক। যথারীতি সুপ্রিম কোর্ট সেটাই করেছে।

Advertisement

মূলত দু’টি প্রধান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়ে তড়িঘড়ি ওয়াকফ আইন সংশোধনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। প্রথমত, সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে ধর্মীয় বিরোধ ও সংঘাতের জমি তৈরি করা। তাতে প্রবল বিদ্বেষ ও ঘৃণার আবহে ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণ তীব্র করা যাবে। সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির স্বার্থেই সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় পরিসরে হস্তক্ষেপ করার ব্যবস্থা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ওয়াকফের অধীনে সারা দ্শে বিপুল সম্পত্তি আছে। মূলত শহরাঞ্চলে এই সম্পত্তির মূল্য লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। সরকারের কুদৃষ্টি পড়েছে এই জমির দিকে। ওয়াকফের অধীনে থাকা এই জমি সরকারের অধীনে এনে তারপর বেসরকারি কর্পোরেট ও প্রোমোটারদের হাতে তুলে দিতে চায় সরকার। একদিকে বেসরকারি সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় লোভনীয় জমি পাবে অপেক্ষাকৃত কম দামে আর সরকার এই ফাঁকে পেয়ে যাবে মোটা টাকা।

Advertisement

এই দুই প্রধান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ওয়াকফ আইন সংশোধন করা হয় সংবিধানকে উপেক্ষা করে। ওয়াকফের হাতে নতুন সম্পত্তি আসা ঠেকাতে একটি ধারা যুক্ত হয়। এতে বলা হয়, অন্তত পাঁচ বছর মুসলিম ধর্মাচরণ না করলে ওয়াকফে সম্পত্তি দান করা যাবে না। বিতর্কিত ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় জেলাশাসককে। অর্থাৎ আমলাকে দিয়ে ওয়াকফ সম্পত্তি হাতিয়ে সরকারের অধীনে আনার ব্যবস্থা। কোনও জমি সরকার দখল করতে চাইলে কাউকে দিয়ে অভিযোগ করিয়ে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিতর্কিত জমি জেলাশাসককে দিয়ে দখলে নিতে পারবে। কেন্দ্র ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য বাড়িয়ে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অমুসলিম সদস্য বেশি থাকলে মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্থা পরিচালনায় মুসলিমদের চেয়ে অমুসলিমদের ভূমিকা বাড়বে।
ওয়াকফ আইন সংশোধন করে এই তিনটি ধারা যুক্ত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলি। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আপত্তিজনক ওই তিনটি ধারার প্রয়োগই স্থগিত করে দিয়েছে। ব্যক্তি ধারাগুলিতে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করেনি। যদিও মুসলিম সংগঠনগুলি ও বিরোধী দলগুলি গোটা সংশোধনী আইনটিই বাতিল করার দাবি জানিয়েছে।

Advertisement