স্বাধীনতার দীর্ঘ ৭৮ বছর পর অবশেষে রেলপথের মানচিত্রে জায়গা করে নিল মিজোরাম। উত্তর-পূর্ব ভারতের দুর্গম এই রাজ্যে রেল সংযোগের স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈরাবী–সৈরাং রেলপথের উদ্বোধন করবেন এবং সবুজ পতাকা দেখিয়ে যাত্রা শুরু করবেন নতুন ট্রেন পরিষেবার।
রেল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন রেলপথটি হবে মিজোরামের রাজধানী আইজলের প্রাণসঞ্চারী ‘লাইফলাইন’। যাত্রী চলাচল যেমন সহজ হবে, তেমনই রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে। কলকাতা, দিল্লি ও আগরতলার সঙ্গে সরাসরি রেল সংযোগ চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
Advertisement
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রকল্পের সমীক্ষা এবং পুনঃসমীক্ষার পর অবশেষে তা জাতীয় প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয়। ২০১৪ সালে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১১ বছরের নিরলস প্রচেষ্টার পর এখন তা সফল হয়েছে।
Advertisement
প্রায় ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ নির্মাণের জটিলতা ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। কারণ পুরো পথটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। রেল দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, লাইনে রয়েছে ৪৮টি টানেল, যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। তৈরি হয়েছে ৫৫টি বড় সেতু এবং ২৭টি ছোট সেতু। চারটি আধুনিক স্টেশনও তৈরি হয়েছে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তিতে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়, এই রেলপথের একটি সেতুর উচ্চতা ১০৪ মিটার, যা দিল্লির ঐতিহাসিক কুতুব মিনার (৭২.৫ মিটার) থেকেও উঁচু। এই লাইন ধরে ট্রেন সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলতে পারবে। ফলে বৈরাবী থেকে আইজল পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা, যেখানে এতদিন এই যাত্রা সম্পূর্ণ করতে লেগে যেত ৫-৬ ঘণ্টা।
রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এই প্রকল্প উত্তর-পূর্ব ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে। এই রেললাইন চালু হলে ত্রিপুরা (আগরতলা), অসম (দিসপুর), অরুণাচল প্রদেশ (ইটানগর) ও মিজোরাম (আইজল) সরাসরি যুক্ত হবে রেল নেটওয়ার্কে, যা বাকি চারটি রাজ্যকেও পর্যায়ক্রমে রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, এই প্রকল্প তাঁদের জন্য এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করবে। শুধু যাতায়াতের সুবিধা নয়, পণ্য পরিবহন, পর্যটন এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এই রেললাইন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে এই প্রকল্পকে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৩ সেপ্টেম্বরের উদ্বোধনের মাধ্যমে মিজোরামের সঙ্গে দেশের মূল স্রোতের সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছে রেল মন্ত্রক।
Advertisement



