নিজের কথা নিজেই পাল্টে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সময় নিলেন ৩৪ দিন। পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর বিধানসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের জন্য ‘অনুপ্রবেশ’ ইস্যুকেই পাখির চোখ করছে বিজেপি। দমকল জেল ময়দানের সভায় সেই কথা বুঝিয়ে গেলেন মোদী। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘একবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে সরকারে আনুন। ঘুস-পেটিয়ো (অনুপ্রবেশকারীদের) উচিত শিক্ষা দেব। এটাই মোদীর গ্যারান্টি।’ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে বিজেপিকে জেতাতে হবে বিধানসভার ভোটে।
কিন্তু ৩৪ দিন আগে দুর্গাপুরের সভায় তো এই দাবি করেননি। গত ১৮ জুলাই দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামের জনসভায় মোদী বলেছিলেন, ‘কান খুলে শুনে রাখুন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুসারেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ অর্থাৎ অনুপ্রবেশকারীদের ধরবে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনিই পদক্ষেপ নেবেন।
Advertisement
কিন্তু ৩৪ দিন পরই দাবি করলেন যে, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আনতে হবে বিজেপিকে। মোদী বলেছিলেন, ‘বাংলার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। এরাই যুবকদের চাকরি, আদিবাসীদের জমি সবই কেড়ে নিচ্ছে। এদের বিতাড়িত করতে হবে।’
Advertisement
অনুপ্রবেশকারী কারা? বিজেপির হিসাবে তারা সব মুসলিম। হিন্দুরা ভারতে বেআইনিভাবে এলেও শরণার্থী। অর্থাৎ এই ইস্যুতে ধর্মীয় পরিচয়-নির্ভর সমাজে ভাগাভাগি বাড়াতে চাইছে বিজেপি। সংশয় দেখা যাচ্ছে মোদীর আহ্বান নিয়ে। কোন অতীতের কথা বলতে চাইছেন মোদী? তৃণমূলের আগে রাজ্যে সরকার চালিয়েছে বামফ্রন্ট। তার আগে সরকারে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস।
সেই সরকারগুলির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের সামনে বলেছেন, ‘প্রথমে কংগ্রেস, তারপর বামেদের শাসন দেখেছে বাংলা। ১৫ বছর আগে আপনারা ‘মা মাটি মানুষের’ স্লোগানে বিশ্বাস করে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আগের চেয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। এটা নিশ্চিত যে, যতদিন বাংলায় তৃণমূলের সরকার থাকবে ততদিন বাংলার উন্নয়ন থমকে থাকবে। তৃণমূল গেলে তবেই আসল পরিবর্তন আসবে। তৃণমূল যাবে, তবেই আসল পরিবর্তন আসবে।’
একসময় বাংলা ব্রিটিশদের শাসনে ছিল। মোদী তাহলে কোন অতীতে ফেরাতে চাইছেন পশ্চিমবঙ্গকে? তাঁর কাছে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির স্বপ্নের বাংলা’ই বা ঠিক কেমন, তাও স্পষ্ট করেননি মোদী। তিনি বলেছেন, ‘১৩০তম সংবিধান সংশোধন অ্যান্টি-কোরাপশন বিল সংসদে পেশ হওয়ার পর দেশের কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ না করলেও এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।’ এতেই নাকি প্রমাণ হয় বিরোধীরা দুর্নীতির পক্ষে। আর বাংলায় বিকাশের পথে বড় বাধা হল দুর্নীতি, এটাই মোদীর বক্তব্য।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, চোরদের তিনি জেলে পুরবেন। সবারই শাস্তি হবে। কিন্তু গত ১৪ বছরে কোনও নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। কারোর কোনও শাস্তি হয়নি। গ্রেপ্তার হওয়া অনেক মন্ত্রী-নেতাই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। মোদীর দাবি অনুযায়ী উন্নয়নের টাকা গরিব মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। রেগা, আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। তাতে গরিব মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে। রাজ্যের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বন্ধ করার চেষ্টা করে চলেছে কেন্দ্র। তবু জনমুখী প্রকল্পগুলি চালু রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোরালো গলায় মিথ্যা বললেই তা সত্যি হয় না।
Advertisement



