• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণ চিনের, উদ্বেগে ভারত-বাংলাদেশ

তিব্বতের মালভূমি দিয়ে প্রবাহিত এই নদীবাঁধ প্রকল্পের ফলে নদী উপত্যকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ও বাংলাদেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চিন সরকার তিব্বত ভূখণ্ডে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্রের উপর বিশ্বের এই বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তিব্বতের মালভূমি দিয়ে প্রবাহিত এই নদীবাঁধ প্রকল্পের ফলে নদী উপত্যকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ও বাংলাদেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি আশেপাশের পরিবেশ এবং স্থানীয় তিব্বতিদের উপরও এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং শনিবার ইয়ারলুং জাংপো নদীর নির্মাণ কাজ শুরু করার একটি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।গত জুলাই মাসেই এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। চিনে ব্রক্ষ্মপুত্র ইয়ারলুং জাংপো নামে পরিচিত। ২০২৪-এর ডিসেম্বরে চিন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের উপর বৃহত্তম এই বাঁধ নির্মাণের কথা ঘোষণা করে। ইয়ারলুং যেখান থেকে বাঁক নিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে সেখানেই এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই বাঁধ নির্মাণ হলে নিম্ন অববাহিকায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত জল কম আসবে। ফলে ভারত এবং বাংলাদেশে কৃষিকাজ এবং জলের উপর নির্ভরশীল শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আবার ভরা বর্ষার সময় নিম্ন অববাহিকায় অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেওয়া হলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে ব্রহ্মপুত্র লাগোয়া অরুণাচল প্রদেশ এবং আসামের একাংশ।

Advertisement

বিশেষজ্ঞ এবং আধিকারিকদের উদ্বেগ, নতুন বাঁধের মাধ্যমে চিনের ইয়ারলুং জাংপোর জল নিয়ন্ত্রণ বা ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের দিকে এটি সিয়াং, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীতে মিশবে।চলতি মাসের গোড়ার দিকে এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে, বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে সিয়াং এবং ব্রহ্মপুত্র অনেকাংশে শুকিয়ে যেতে পারে।

Advertisement

অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাঁধটি ‘আমাদের উপজাতি এবং আমাদের জীবিকার ক্ষেত্রে এক অস্তিত্বের সংকটের সৃষ্টি করবে। তাঁর মতে, এটি খুবই গুরুতর এজন্য যে, চিন এটিকে এক ধরনের ‘জল বোমা’ হিসাবেও ব্যবহার করতে পারে।’

গত জানুয়ারিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেছিলেন যে, তাঁরা এই মেগা-বাঁধের প্রভাব সম্পর্কে চিনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ব্রক্ষ্মপুত্র তীরবর্তী নিম্ন অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন। বাংলাদেশও এই প্রকল্প সম্পর্কে চিনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ফেব্রুয়ারিতে বেজিংকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন।

সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পাল্টা অরুণাচল প্রদেশে ব্রহ্মপুত্রের উপর একটি বাঁধ তৈরি করতে চাইছে দিল্লি। এই বাঁধ তৈরি হলে সেটিই হবে দেশের বৃহত্তম বাঁধ। এই নিয়ে গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দপ্তরে একটি বৈঠকও হয় বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি। ভারতের হিসাব অনুযায়ী, তিব্বতের এই বাঁধের কারণে অন্ততপক্ষে ৪ হাজার কোটি কিউবিক মিটার জলের প্রবাহ ঘুরিয়ে দিতে পারে চিন। জলের গতিপথ এভাবে বদলে গেলে শুষ্ক মরসুমে জলের অভাব দেখা দেবে ভারতে। তাই ১ হাজার ৪০০ কোটি কিউবিক মিটার জল ধারণ করতে পারে এমন একটি বাঁধ নির্মাণ করলে শুষ্ক মরসুমে ওই বাঁধ থেকে জল সরবরাহ করে ঘাটতি কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে বলে আশা ভারতের।

অরুণাচল প্রদেশে ব্রক্ষ্মপুত্রের উপর এই বাঁধ নির্মাণ না হলে শুষ্ক মরসুমে গুয়াহাটিতে ব্রহ্মপুত্রের জল ২৫ শতাংশ কম যাবে। সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ভারতের তৈরি বাঁধ যে উচ্চতায় নির্মাণ হবে, তাতে বর্ষার মরসুমে অতিরিক্ত জলও আটকে দেওয়া সম্ভব হবে।

সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মে মাসে অরুণাচলে বাঁধের জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এক দফা সমীক্ষার কাজ চালানো হয়। এই কাজ করেন ভারতের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা এনএইচপিসি-র আধিকারিকরা। তবে এই কাজে স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের মুখে পড়েন তাঁরা। মনে করা হচ্ছে, ওই এলাকায় বাঁধ তৈরি হলে অন্তত ১৬টি গ্রাম জলের তলায় চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন অন্তত ১ লক্ষ মানুষ। ফলে একটি মজবুত ও শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করতে একটি সঠিক পুনর্বাসন প্যাকেজের কথা ভাবছে দিল্লি।এতে সায় রয়েছে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুরও।

তবে চিনের দাবি, মোটুও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে এই প্রকল্পের কারণে নিম্ন অববাহিকায় জলের প্রবাহে কোনও পরিবর্তন হবে না।বেজিং বলেছে যে, আনুমানিক ১৬৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও এলাকাকে সমৃদ্ধ করবে।এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ হলে, বিশ্বের বৃহত্তম হিসাবে পরিচিত থ্রি গর্জেস বাঁধকে ছাড়িয়েও যাবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং তিনগুণ বেশি শক্তি উৎপাদন করতে পারবে।

Advertisement