বিহারে বাদ যাওয়া ৬৫ লক্ষ ভোটারের নামের তালিকা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এই তালিকা প্রকাশ করতে সম্প্রতি নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। দিন কয়েক আগে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ এনেছিলেন, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন ভোট চুরিতে নমেছে। তাঁর দাবি ছিল, এই দুইয়ের মধ্যে অশুভ অক্ষ তৈরি হয়েছে। এই অভিযোগের পরই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার যেভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন, তা দেখে বিরোধীরা বলছেন, ওই সাংবাদিক সম্মেলনকে আসলে যাবতীয় অভিযোগের জবাব দেওয়ার রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করলেন অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ ওই আমলা। কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈর কটাক্ষ, ‘কেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে কমিটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, তা এখন স্পষ্ট।’
রাহুলের তোলা যাবতীয় অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে জ্ঞানেশ কুমার বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের তথ্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে যা চিন্তার বিষয়।’ প্রমাণ ছাড়া কারোর নাম বাদ যাবেূ না বলে আশ্বাস দিয়ে জ্ঞানেশ কুমার বলেছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ম মেনে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন জ্ঞানেশ কুমার।
Advertisement
রাহুল গান্ধী কর্ণাটকের নির্বাচন নিয়ে কারচুপির যে অভিযোগ এনেছিলেন, তার পক্ষে হলফনামা জমা দেওয়ার দাবি করেছিল নির্বাচন কমিশন। রাহুল কর্ণাটকের ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে তাঁর তো বটেই, সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় কারচুপি হয়েছে বলে বিজেপির তরফে প্রশ্ন তোলা হয়। তখন অবশ্য বিজেপি নেতাদের ওই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে হলফনামা জমা দিতে বলেন নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান জ্ঞানেশ।
Advertisement
বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় আশি হাজার বাড়ির ঠিকানায় শূন্য লেখা থাকা নিয়ে জ্ঞানেশের যুক্তি, ‘অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির নম্বর থাকে না। তাই শূন্য বসানো হয়। গত লোকসভা ভোট ও বিশেষ পরিমার্জনের কাজ শুরু হওয়ার মধ্যে আট মাসের ব্যবধান ছিল। কিন্তু বিশেষ তালিকা সংশোধনে জানা যায়, বিহারে প্রায় ২২ লক্ষ মৃত ভোটারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। রাহুলের প্রশ্ন ছিল, তা হিলে কি গত আট মাসে বিহারে ২২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন? জবাবে জ্ঞানেশ কুমার জানান, ‘গত ২০ বছরে ভোটার তালিকার সার্বিক সংশোধন হয়নি। তাই সর্বশেষ তথ্য ছিল না। বিশেষ সংশোধনের সময়ে এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার পরেই সেই তথ্য উঠে এসেছে।’
জ্ঞানেশের এই যুক্তিকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, ‘প্রতি বছর ভোটার তালিকা সংশোধন হয়। শেষবার হয়েছিল এ বছরের এপ্রিল মাসে। তার পরেও যদি সর্বশেষ ভোটার তালিকা না থাকে, তাহলে সেজন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও তাঁর পূর্বসুরীরা ও কমিশন দপ্তর দায়ী।’ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সাফাইয়ের পর অবশ্য বিরোধী দল কংগ্রেস কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, নির্বাচন কমিশন কেবল অদক্ষই নয়, তার নগ্ন পক্ষপাতিত্বও উন্মোচিত হয়েছে। সাংবাদিক বৈঠকে জ্ঞানেশ কুমার বিজেপির লেখা চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছেন। কমিশন বিজেপির ‘ভোট চুরি’-কে আড়াল করতে চাইছে।
Advertisement



