• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখতে পারবেন, নতুন লাইসেন্স নীতি অসম সরকারের

নতুন এই নীতির আওতায় অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই রাজ্যের ‘ভূমিপুত্র’ হতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।

অসম সরকারের নতুন অস্ত্র নীতির আওতায় এবার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ও সংখ্যালঘু-প্রধান অরক্ষিত অঞ্চলের আদি বাসিন্দারা নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে পারেন। মে মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভার গৃহীত এই সিদ্ধান্ত এবার বাস্তবায়িত হল। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করেছেন, অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে, যেখানে বাসিন্দারা সরাসরি আবেদন করতে পারবেন।

এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী ও সংবেদনশীল এলাকায় বহু ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সংখ্যা অত্যন্ত কম থাকে। অন্য সম্প্রদায়ের আধিপত্য থাকলে সেখানে সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক টানাপড়েনে উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি হতে পারে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘এমন এলাকায় ছোটখাটো ঘটনা থেকে বড় দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, ঘরবাড়ি পোড়ানো কিংবা প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে।’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বহু প্রত্যন্ত এলাকায় একটি থানায় মাত্র ৬ থেকে ১২ জন কনস্টেবল থাকেন। উত্তেজনা তৈরি হলে জেলা সদর থেকে বাহিনী আসতে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যেই বড়সড় ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত বাসিন্দাদের আত্মরক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। তাঁর কথায়, ‘যদি কেউ জানে, যাঁর উপর হামলা চালাতে যাচ্ছে, তাঁর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে, তাহলে সেই হামলাকারী দু’বার ভাববে।’

Advertisement

নতুন এই নীতির আওতায় অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই রাজ্যের ‘ভূমিপুত্র’ হতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। বাসিন্দাকে অবশ্যই সংবেদনশীল, অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা থাকা চলবে না। আবেদনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে এবং অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণের শংসাপত্র দাখিল করতে হবে, যা ২০১৬ সালের অস্ত্র আইনে নির্ধারিত। তবে কোন কোন অঞ্চল ‘অরক্ষিত ও সংবেদনশীল’ হিসেবে চিহ্নিত, তা এখনও স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। আবেদনপত্রে অবশ্যই পরিচয় ও ঠিকানা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, মে মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী শর্মা অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের ভূমিপুত্র ও জনজাতিরা তাঁদের নিজেদের জমিতেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্প। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, নতুন নীতি প্রাথমিকভাবে ধুবুড়ি, বরপেটা, মরিগাঁও, নগাঁও, দক্ষিণ শালমারা এবং গোয়ালপাড়া জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে।

এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ এটিকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ বলে প্রশংসা করছেন, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন যে, এটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা – এই সিদ্ধান্ত আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছে।

Advertisement