প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ নামটা এমন কেন?
উত্তর: না, না, নাম নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এটা চরিত্রের নাম। তবে আগে অ্যাডভোকেট বসানোর কারণ, ও যে আইনজীবী তা বোঝানোর জন্য (হাসি)।
প্রশ্ন: সিরিজ ওয়ান তো হিট। এবার সিজন ২। মানুষ জানেন আইনজীবী আইচের ধরন। আগের বারের থেকে কতটা আলাদা হবে এই সিজন?
উত্তর: আগের সিজন মানুষ পছন্দ করেছেন বলে সেকেন্ড সিজন হয়েছে, এটা খুব সরল কথা। একটা সিরিজের যখন সেকেন্ড সিজন বেরোয় তখন বেশ কিছু ক্যারেকটার সেম থাকে। কিন্তু ব্যাপারটা হল, প্রথম সিজন থেকে দ্বিতীয় সিজনে চরিত্রের গ্রো দরকার। অভিনেতা হিসেবে আমারও তাই চাওয়া। মানুষ যেন আলাদা শেড পায়।
Advertisement
প্রশ্ন: অচিন্ত্য একটু অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী। কিন্তু একটু সাদামাটা।
উত্তর: নাহ্, আমার কাছে অচিন্ত্য খুব ভালো একটা মানুষ। ন্যায়-অন্যায়ের বিভেদ করতে পারে, সাহস আছে, মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে পারে, নির্বিবাদী। তবে অচিন্ত্যর ক্ষমতা নেই। রাস্তায় কেউ যদি ওকে এসে থাপ্পড় মারে, লোক যদি জিজ্ঞেস করে, তুই উলটে মারলি না কেন, ও বলবে, অচেনা লোককে মারা যায়! প্রথম সিজনে অচিন্ত্যর প্রতিপক্ষ ছিল অপুদা। ওর মতো দুঁদে উকিল অচিন্ত্য ছিল না। কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে থাকার মানসিকতা ছিল। এই সিজনেও অচিন্ত্য ওখানে পৌঁছতে পারেনি। এবারের কেসটা একটু কঠিন। একটা রেপ-মার্ডার কেস। এবারে অচিন্ত্যর প্রতিপক্ষ সোহিনী। সেখানে কী করে অচিন্ত্য দাঁড়িয়ে কেস সলভ করবে সেটাই দেখার।
Advertisement
প্রশ্ন: এত চরিত্র করেছো, কোনও চরিত্র করে ভালো লেগেছে? বা এমন কোনোও স্বপ্নের চরিত্র আছে যা করতে চাও।
উত্তর: না। আমার কোনও স্বপ্নের চরিত্র নেই। যে চরিত্রই আসে, সেই চরিত্র করাই আমার কাছে সব। আর আমার কাছে ভালো লাগা মানে হচ্ছে, চরিত্রটাকে অভিনয় করা। যখন ওই চরিত্রে অভিনয় করি একটা বিশুদ্ধ ভালোলাগা কাজ করে। ওকে বাক্যে বা শব্দে কীভাবে এক্সপ্রেস করা যায় জানি না। ওটা একটা অনুভুতি। আমার চরিত্রে আমি যতটা দিই, সেটা মানুষের কাছে ভালো লাগলে বুঝি ব্যাপারটা ক্লিক করেছে। এটুকুই। সব চরিত্র আমার কাছে আমার মত। আমি নিজের মত করে বুঝে একাত্ম হয়ে কাজ করি। চরিত্রের বোধ-বুদ্ধি বিচার দর্শনের জন্য দর্শক আছেন।
আর আমার মনে হয় না পেশাদার অভিনেতাদের স্বপ্নের চরিত্র ভেবে রাখা মানে অকারণে খেয়ালি পোলাওয়ের ভাবনায় থাকা। দরকার নেই। আমার কাছে চরিত্র আসবে। আমি পড়ব, ভাববো, করব। তা না করে, খামোকা ভাবতে যাব কেন স্বপ্নের চরিত্র নিয়ে! আমি রবীন্দ্রনাথের চরিত্র কিংবা তাঁর ছোট ছেলের চরিত্র করব। এসব ভেবে করবই বা কী! (হাসি)
প্রশ্ন: বই পড়া হয়?
উত্তর: বই পড়া তো একপ্রকার ধাক্কা খেয়েছে। আমারও বই পড়া কম হয়। তবে অডিও বুক এখন খুব ভালো একটা বিষয়। গোটা গল্পটা শোনা হয়। পড়াও হয় একপ্রকার। তবে হাতে নিয়ে বই পড়তে তো ভালো লাগেই।
প্রশ্ন: ঘোরা তো তোমাদের বেশ হয়। আগামী ঘোরা কোথায়?
উত্তর: পুজোয় যাব। কোথায় জানি না। অপরাজিতা কাজ থেকে কিভাবে ছুটি পাবে জানি না। পুজোয় টিকিট নিয়েও সমস্যা থাকে। গাড়ি করে যাব। একটা হোটেলের ব্যবস্থা করতে পারলেই কোথাও একটা চলে যাব।
প্রশ্ন: এবার একটা অন্য প্রশ্ন করব। এই যে বাংলায় হিন্দি ছবির বাড়বাড়ন্তে বাংলা ছবিকে কম জায়গা দেওয়া হয়, তাই নিয়ে এত চর্চা, আন্দোলন, অভিনেতা হিসেবে তোমার কী বক্তব্য?
উত্তর: উত্তরটা সবাই জানে। তাও বলব। প্রথমে বলো বাঙালি হিসেবে তোমার চাওয়া নিশ্চয়, বাংলা ছবির জন্য যেন জায়গা থাকে। এটাই বিষয়। অন্যান্য রাজ্যে রিজিওনাল ছবির জন্য জায়গা থাকে। বাংলা ছবি যেন সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন না হয়ে যায়। বাঙালি হিসেবে তো চাইবোই৷ আর এই সেক্টরে কাজ করি, তাই আমরা আরও বেশী করে চাইবো যে বাংলা ছবির জন্য আলাদা জায়গা থাকুক। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে লড়াইটা শুরু হল, সেটা দেরিতে শুরু হল। তবুও হল তো। এটার মীমাংসা দরকার। বাংলা ছবির জন্য আলাদা জায়গা থাকা দরকার।
প্রশ্ন: বাংলায় এখন বেশ কিছু ভালো ছবি হচ্ছে। তোমার দেখা হল কিছু ছবি?
উত্তর: দারুণ দারুণ কিছু কাজ হচ্ছে। ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘অঙ্ক কী কঠিন’ আরও বেশ কিছু ছবি। কিন্তু এখনও কোনও ছবি দেখে উঠতে পারিনি।
প্রশ্ন: ‘বাংলা ছবির সুদিন গিয়েছে, ভালো কাজ হচ্ছে না, টাকা ঢেলে লাভ নেই’— এরকম বহু অভিযোগ এখন উঠে আসে। এর মধ্যেই বেশ কিছু ভালো ছবিও হচ্ছে। এবিষয়ে কী বক্তব্য তোমার?
উত্তর: ‘বাংলা ছবির’ মত করে প্রতিবছরই কিছু বাংলা ছবি হয়। কখনও বেশি, কখনও কম। কোনও ছবি ভালো হয়, কোনও ছবিকে আঁতেল বলা হয়, কোনও ছবি গ্রামে চলে, কোনও ছবিকে শহুরে ছবি বলা হয়। এই যে ধারণাগুলো আছে এগুলোকে একটু সাইড করতে হবে বলে আমার মনে হয়। ছবি মানেই স্টার থাকতে হবে? ‘অঙ্ক কী কঠিনে’ই দেখো, এই ছবিতে স্টার নেই কিন্তু। আসলে কিছু কিছু ছবি স্টার বানায়। কখনও কখনও ছবিটার গল্পই স্টার হয়। কন্টেন্টই সব হয়। স্টার দেখেই মানুষ ছবি দেখলে স্টারেদের সব সিনেমা হিট হত। ছবির গল্প ম্যাটার করে। এগুলো কোনও অজানা বা অচেনা কথা বলছি না। এগুলো ফ্যাক্ট।
আরেকটা কথা হল, হলে ছবির ডিস্ট্রিবিউশন দেখা, সব নিয়েই একটু ভাবনা চিন্তা করা উচিত। যাঁরা ব্যবসার দিকটা দেখছেন তাঁদের এই বিষয়ে ভাবা উচিত। আমরা কাজ করছি। বাংলা ছবির ব্যবসা ভালো হলে আমারও ভালো হবে। তাই সবারই নজর দেওয়া উচিত বিষয়টাতে।
প্রশ্ন: পরিচালক জয়দীপদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? শুনেছি উনি খুব মেপে কাজ করেন।
উত্তর: জয়দীপদার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। আসলে জয়দীপদা কাজের আগে খুব হোমওয়ার্ক করেন। আর এই মেপে কাজটা তার ফসল। আমাদের সময় কম থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ঘেঁটে যাওয়ার ব্যাপার থাকে। জয়দীপদা, হোমওয়ার্ক করে কাজ করেন বলেই সবটা স্মুদ হয়। এক্সট্রা শট নেন না। তাই সময় বাঁচে। কাজ ভালো হয়। এছাড়াও জয়দীপদা দারুণ মানুষ। বন্ধু। কাজ করার সময় আমরা অভিনেতা-পরিচালক হয়ে থাকি না। আমাদের অনেক কথা হয়। গল্প হয়। হাসি ঠাট্টা। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন: দর্শকদের কী বলবে?
উত্তর: ১৫ তারিখ আসছে ‘অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ ২’। যাঁরা এখনও দেখেননি, তাঁরা দেখে নেবেন। যাঁরা দেখেছেন দ্বিতীয় সিজনটা দেখুন। কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন।
Advertisement



