নিবিরল রোগের শিকার এক ১৭ বছরের কিশোরীর জীবন বাঁচাল কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে কিশোরীর পেট থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের একটি বিশাল টিউমার বের করে আনা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, পূর্ব ভারতে প্যানক্রিয়াসের অস্ত্রোপচারের যে সমস্ত মেডিক্যাল রেকর্ড রয়েছে তা ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এত বড় ‘সিউডোপ্যাপিলারি নিউপ্লাজম অফ প্যানক্রিয়াস’-এর ক্ষেত্রে হুইপল প্রসিডিওর এই প্রথম।
জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পাস করার পর থেকেই ওই কিশোরীর পেটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। প্রথমদিকে সাধারণ চিকিৎসায় সে সুস্থ হয়ে উঠলেও, ২০২৫ সালের শুরুতে তার সমস্যা আবার ফিরে আসে। তারপর আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে তার পেটে একটি পেল্লায় টিউমার রয়েছে। কিন্তু, পরিবারের দোটানার কারণে অস্ত্রোপচার পিছিয়ে যায়। এর মাঝেই একদিন হঠাৎ টিউমারটি ফেটে যায়।
Advertisement
রোগীর অবস্থা তখন অত্যন্ত জটিল। টিউমার ফেটে যাওয়ায় মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এতে তার শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। দ্রুত তাকে ৬ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। এরপরই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন যে, জরুরি ভিত্তিতে জটিল অস্ত্রোপচার হুইপল প্রসিডিউর করা প্রয়োজন।
Advertisement
এসএসকেএম-এর সার্জিকাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সুকান্ত রায়-এর নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন। এই দলে ছিলেন ডা. সুজন খামরুই এবং ডা. হেমাভ সাহা। অ্যানেস্থেশিয়া টিমে ছিলেন অধ্যাপক তাপস ঘোষ ও ডা. সৈকত ভট্টাচার্য।
চিকিৎসকরা জানান, এই ধরনের অস্ত্রোপচারকে চিকিৎসা পরিভাষায় হুইপল প্রসিডিউর বলা হয়, যা তলপেটের সবচেয়ে জটিল অস্ত্রোপচারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রক্রিয়ায় কিশোরীর অগ্ন্যাশয়ের মাথার অংশ, জেজুনামের কিছুটা এবং পিত্তনালীর অংশ বাদ দেওয়া হয়। ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১২ সেন্টিমিটার চওড়া টিউমারটি এতটাই বড় ছিল যে এটি কোলনের একটি বড় অংশও গ্রাস করেছিল, তাই অস্ত্রোপচারের সময় কোলনেরও কিছুটা অংশ বাদ দিতে হয়।
ডা. হেমাভ সাহা জানিয়েছেন, টিউমারটি থেকে ক্যানসারের কোষ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে রোগী স্থিতিশীল রয়েছেন এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। এই বিরল ও জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করে এসএসকেএম হাসপাতাল আরও একবার চিকিৎসাক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিল।
Advertisement



