একটানা ভারী বর্ষণ, ডিভিসি এবং সিকিম কর্তৃক বারংবার জল ছাড়া – এই ত্রিফলায় বাংলা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুক্রবার মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের বন্যাকবলিত অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়েছেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার কেবল মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ-সহ একাধিক এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং শনিবার মালদহের রতুয়া, মানিকচকে যাবেন। পরিদর্শন শেষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভপ্রকাশ করে তাঁর মত, বাংলায় বারংবার বন্যা সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রের চক্রান্ত!
মন্ত্রীর ভাষায়, ‘বাংলার বন্যা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। আগেও বাম সরকারের সময়ে এই সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান বার করা হয়নি। বর্তমানে আমাদের সরকারের প্রবল প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চনা, অসহযোগিতা করে চলেছে কেন্দ্র। এর মাঝেও রাস্তা সংস্কার থেকে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরুর মতো একাধিক পদক্ষেপ রাজ্য করছে। বন্যা পরিস্থিতি আদতে বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের একটি চক্রান্ত, যার উদ্দেশ্য বাংলাকে ছোটো করে দেখানো।’
Advertisement
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন (এসআইআর) ইস্যুতেও সুর চড়িয়েছেন মন্ত্রী সুজিত বসু। কেন এসআইআরে রাজ্যের আপত্তি, অবস্থান স্পষ্ট করে সুজিতের ব্যাখ্যা, ‘এসআইআর নিয়ে আপত্তি নেই রাজ্যের। তবে এসআইআরের নামে বাংলার প্রকৃত কোনো ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হলে আন্দোলন-প্রতিবাদ হবেই। একজনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর জায়গা নেই, এটাই স্বাভাবিক। তবে কীসের ভিত্তিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে তকমা দেওয়া হচ্ছে, সেটাও বিচার্য বিষয়। কেবল ভাষার ভিত্তিতে কারও উপর অত্যাচার চালানো যায় না।’
Advertisement
এরপরই লাগাতার ‘কেন্দ্রীয় চক্রান্ত’র বিরুদ্ধে সরব হয়ে সুজিত বলেন, ‘দিল্লির সরকার মানুষের সরকার নয়। কেন্দ্র সর্বদা মানুষকে যন্ত্রণা দিতেই তৎপর। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই কখনও ডিভিসি জল দিচ্ছে, এক্ষেত্রে আবার সঙ্গী হয়েছে সিকিমও। বাংলাভাষীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বাংলার হিন্দিভাষী পরিযায়ী শ্রমিকের উপর কখনও অত্যাচার চালানো হয়েছে? বাংলা রবীন্দ্র-নজরুল-বিবেকানন্দ-বিদ্যাসাগরের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং শিক্ষায় শিক্ষিত। আমরা জাত-ধর্ম-ভাষা ভুলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একত্রে রুখে দাঁড়াই। স্বাধীনতার এত বছর পরও কেন্দ্র ভাষার ভিত্তিতে মানুষকে ভেদাভেদ করছে, দুর্ভাগ্যজনক!’
দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুদান বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েও কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। পাল্টা জবাব দিয়ে সুজিত বলেন, ‘আমি অনেক ছোটো বয়স থেকে দুর্গাপুজো করি, বিপুল খরচসাপেক্ষ আয়োজন। মুখ্যমন্ত্রীর অনুদান বৃদ্ধি সংক্রান্ত এই পদক্ষেপ কেবল আমাদের দুর্গাপুজোর সংস্কৃতিকেই আরও বাড়িয়ে তুলবে না, পাশাপাশি ছোটো উদ্যোক্তারাও সুদিনের মুখ দেখবেন।’
Advertisement



