• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

১৭ মাসেও মেলেনি বুলেটপ্রুফ গাড়ি, সাধারণ গাড়িতেই যাতায়াত করতেন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়

দেশের উপরাষ্ট্রপতির মতো সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থেকেও নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারি উদাসীনতার শিকার হতে হয়েছিল জগদীপ ধনখড়কে।

দেশের উপরাষ্ট্রপতির মতো সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থেকেও নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারি উদাসীনতার শিকার হতে হয়েছিল জগদীপ ধনখড়কে। দায়িত্বে থাকাকালীন দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত একটি সাধারণ ইনোভা গাড়িতেই যাতায়াত করতে বাধ্য হন তিনি। একটি রিপোর্টে থেকে মিলেছে এই বিস্ময়কর তথ্য, যা ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে দেশের ভিআইপি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপরাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে স্পষ্ট করে জানানো হয়, উপরাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ তিনটি বিএমডব্লিউ গাড়িরই অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তিনটির মধ্যে দু’টির বয়স ছ’বছরের বেশি এবং একটি গাড়িও প্রায় পাঁচ বছরের পুরনো। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে একটি নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়ি বরাদ্দ করার আবেদন জানানো হয়।

Advertisement

চার মাস পরে, ২০২৩ সালের ১২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটি বিশেষজ্ঞ বোর্ড গঠন করে পুরনো গাড়িগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। বোর্ডে ছ’জন আধিকারিককে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও জানানো হয়। কিন্তু এরপর আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। মাসের পর মাস কেটে গেলেও না এল বোর্ডের পরবর্তী সিদ্ধান্ত, না এল নতুন গাড়ি। উপরাষ্ট্রপতির দপ্তর ফের একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফল মেলেনি।

Advertisement

অবশেষে পরিস্থিতির চাপে পড়ে গত ২৮ নভেম্বর উপরাষ্ট্রপতির দপ্তর বাধ্য হয় একটি নন-বুলেটপ্রুফ সাধারণ ইনোভা গাড়ি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে। আর সেই থেকেই, দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি নিয়মিতভাবে একটি সাধারণ ইনোভা গাড়িতেই যাতায়াত করেছেন – যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং নজিরবিহীন।

প্রসঙ্গত, উপরাষ্ট্রপতি ‘জেড প্লাস’ স্তরের নিরাপত্তা পান, যা দেশের অন্যতম উচ্চতম নিরাপত্তা বলেই বিবেচিত। এই নিরাপত্তার আওতায় সাধারণত সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী, বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং সর্বোপরি বুলেটপ্রুফ গাড়ি থাকে। প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিচারপতি, এবং শীর্ষ আমলারা এই পর্যায়ের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে, উপরাষ্ট্রপতির মতো ব্যক্তিত্বের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুপস্থিতি ভিআইপি নিরাপত্তা কাঠামোর কার্যকারিতা নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

এমন এক বিতর্কের মাঝেই আসে আরেক চমকপ্রদ মোড়। গত ২১ জুলাই আচমকাই উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং পরের দিনই তা গৃহীত হয়। নিজের পদত্যাগপত্রে ধনখড় শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করলেও বিরোধী শিবির এই ব্যাখা মানতে নারাজ।

সূত্রের খবর, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে ধনখড়ের ভূমিকা নিয়ে বহু দিন ধরেই বিরোধীদের অসন্তোষ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও আনা হয়েছিল সংসদে। সেই পরিস্থিতিতে এমন ‘হঠাৎ’ পদত্যাগ রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

সব মিলিয়ে, দেশের উচ্চতম প্রশাসনিক পরিকাঠামো এবং ভিআইপি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘিরে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এই ঘটনা। উপরাষ্ট্রপতির মতো দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন ব্যক্তি যদি মাসের পর মাস ধরে বুলেটপ্রুফ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেও সাধারণ গাড়িতে যাতায়াত করতে বাধ্য হন, তাহলে অন্যান্য স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র কী – তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে নানা মহলে।

Advertisement