• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘স্যার, চাঙড় খসে খসে পড়ছে!’, খুদে পড়ুয়াদের কথায় কান দেননি শিক্ষকেরা

ছাদ থেকে বালি-পাথর পড়ছে। ক্রমশ হেলে পড়ছে স্কুলের ছাদ। রাজস্থানে স্কুলভবন ভেঙে পড়ার আগে এভাবেই শিক্ষকদের সাবধান করেছিল খুদে পড়ুয়ারা।

ছাদ থেকে বালি-পাথর পড়ছে। ক্রমশ হেলে পড়ছে স্কুলের ছাদ। রাজস্থানে স্কুলভবন ভেঙে পড়ার আগে এভাবেই শিক্ষকদের সাবধান করেছিল খুদে পড়ুয়ারা। শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়ারও অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে উল্টে বকাবকি করেন শিক্ষকেরা। শিশুদের সতর্কবার্তা উড়িয়ে তাদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন তাঁরা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ। পড়ুয়াদের জীবন নিয়ে কীভাবে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পিম্পলোদ প্রাইমারি স্কুলের দুর্ঘটনা।

রাজস্থানের ঝালাওয়ার জেলার পিম্পলোদ গ্রামের ওই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শুক্রবার সকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুলের ছাদ ধসে পড়ে সাত খুদে পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছে এবং ২৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গ্রামবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং সরকারি উদাসীনতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

Advertisement

এক পড়ুয়ার কথায়, ‘সকালের প্রার্থনায় অংশ নিতে শ্রেণিকক্ষের ভিতর আমরা বসেছিলাম। শিক্ষকেরা প্রাতঃরাশ করছিলেন। তখনই ছাদ থেকে বালি-পাথর পড়ছিল। আমরা বিষয়টি জানালেও শিক্ষকেরা গুরুত্ব দেননি। উল্টে আমাদের বকাঝকা করে নিজেদের আসনে বসতে বলেন।’ অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া বলে, ‘ছাদ থেকে বালি-পাথর খসে পড়ছিল। আমরা শিক্ষকদের বিষয়টা জানাই। তাঁরা আমাদের বকেন। যদি ওই সময়েই সবাইকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বার করা যেত, তা হলে হয়তো সবাই বেঁচে যেত।’

Advertisement

জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় ছিল। যদিও এক মাস আগে কিছু রক্ষণাবেক্ষণ কাজ হয়েছিল, তবে তা পর্যাপ্ত ছিল না। স্কুলের ছাদ ও দেওয়ালের অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা প্রশাসন ও পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। পাঁচজন শিক্ষককে কর্তব্য গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল নেগলিজেন্স’ বা ফৌজদারি গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

একজন ছাত্রের আত্মীয় বলেন, ‘আমরা বহুবার জানিয়েছিলাম স্কুল ভবনের বিপজ্জনক অবস্থার কথা। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট বলেন, ‘এই ঘটনা রাজস্থানের উপর এক কালো দাগ। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপি এখন রাজ্য এবং কেন্দ্র, দুই জায়গাতেই ক্ষমতায়। এই সরকারই তো গত দেড় বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এতদিনে কী করে জানা হয়নি কোন স্কুলগুলো বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে? এত শিশুর প্রাণহানির দায় কী ভাবে এড়ানো যাবে?’

ঝালাওয়ার জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই স্কুল তৈরি হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই চার কামরার ওই স্কুলবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। কিন্তু গত ৩১ বছরে কতবার স্কুলবাড়ির সংস্কার হয়েছে, তা জানাতে পারছেন না কেউই।

Advertisement