আন্তর্জাতিক কূটনীতির ময়দানে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে প্রথমবারের জন্য প্যালেস্টাইনকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলেছে ফ্রান্স। বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই ঘোষণা করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
মাক্রোঁর এই ঘোষণার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আমেরিকা ও ইজরায়েল। ওয়াশিংটন সরাসরি ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক ও অবিবেচক’ বলে মন্তব্য করেছে। মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিয়ো বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত হামাসের প্রচারকে শক্তি জোগাবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইজরায়েল আক্রমণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ হামলায় নিহতদের অপমানের শামিল।’
Advertisement
ইজরায়েলও ফ্রান্সের অবস্থানকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্যালেস্টিনিদের লক্ষ্য আলাদা রাষ্ট্র নয়, বরং ইজরায়েলের অস্তিত্ব মুছে দেওয়া।’ ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদেয়োন সারও কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠন হলে তা হামাস পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সে ক্ষেত্রে ফ্রান্স কি ইজরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসবে?’
Advertisement
অন্যদিকে, ফ্রান্স জানিয়েছে, পশ্চিম এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠাই তাদের এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ফ্রান্স এই স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে। বর্তমানে প্যালেস্টাইনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের ১৩৮টি দেশ। তবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ফ্রান্সই প্রথম এমন পদক্ষেপ করতে চলেছে। ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্যালেস্টাইনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনাও জোরদার হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মাক্রোঁ লেখেন, ‘শান্তি সম্ভব। আমাদের এখনই একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, সব বন্দীর মুক্তি এবং গাজার জনগণের জন্য বিপুল মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, গাজাকে সুরক্ষিত করতে হবে ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, তার টিকে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, জি৭-এর সদস্য দেশগুলির মধ্যে এই প্রথম কোনও দেশ প্রকাশ্যে প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলায় কূটনৈতিক ময়দানে এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য অনেক। বিশেষত, যখন গাজা সহ প্যালেস্টিনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ বাড়ছে, তখন ফ্রান্সের এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই নতুন মোড়ে আগামিদিনে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ সম্পর্ক, বিশেষ করে ফ্রান্স ও আমেরিকার কূটনৈতিক সমীকরণ কোন দিকে যায়, তা সময়ই বলবে।
Advertisement



