• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

বিধায়ক থেকে উপ-রাষ্ট্রপতি, রাজনীতির দীর্ঘ যাত্রার ইতি টানলেন ধনকড়

দীর্ঘ ও বহুমাত্রিক রাজনৈতিক জীবনের এক অধ্যায়ের অবসান ঘটালেন জগদীপ ধনকড়। আচমকাই ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি।

দীর্ঘ ও বহুমাত্রিক রাজনৈতিক জীবনের এক অধ্যায়ের অবসান ঘটালেন জগদীপ ধনখড়। আচমকাই ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। সোমবার রাজ্যসভায় বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে সভাপতিত্ব করার পর, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘স্বাস্থ্যজনিত অসুবিধা’ উল্লেখ করেছেন ধনখড় নিজেই।

১৯৫১ সালের ১৮ মে, রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার কিথানা গ্রামে জন্ম জগদীপ ধনখড়ের। গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে তাঁর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক জীবনের যাত্রা নিঃসন্দেহে অনন্য। কিথানা গ্রামের মাটি থেকে দিল্লির রাষ্ট্রপতির ভবন পর্যন্ত তাঁর পথ চলা ছিল অধ্যবসায়, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার প্রতিচ্ছবি।

Advertisement

আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭৯ সালে রাজস্থান বার কাউন্সিলে নাম নথিভুক্ত করার মাধ্যমে। ১৯৯০ সালে তাঁকে ‘সিনিয়র অ্যাডভোকেট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাজস্থান হাইকোর্ট। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের একাধিক উচ্চ আদালতে তিনি আইনি চর্চা করেছেন। কয়লা, ইস্পাত, খনিজ সম্পদ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিশি সংক্রান্ত মামলায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল উল্লেখযোগ্য।

Advertisement

১৯৮৯ সালে ঝুনঝুনু লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ধনখড় সংসদে প্রবেশ করেন। চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভায় তাঁকে সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে তিনি রাজস্থানের কিশনগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। দলের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সাংবিধানিক বিষয়ের ওপর তাঁর প্রখর দখল ক্রমে তাঁকে তুলে আনে কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মঞ্চে।

২০১৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ওই পদে থাকাকালীন তাঁর প্রশাসনিক ভূমিকা, বিশেষত রাজ্য সরকার ও রাজভবনের দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্ক, রাজনীতির ময়দানে বহুল চর্চিত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হয় দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে, যেখানে জয়ী হয়ে জগদীপ ধনখড় পৌঁছে যান ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে।

রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও ধনকড়ের গভীর আগ্রহ ছিল। রাজস্থান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজস্থান টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দিল্লি ও পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবেও (এক্স-অফিসিও) যুক্ত ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন ভারতীয় আইন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সালিশি সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

নিজের পদত্যাগপত্রে ধনখড় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের এক রূপান্তরকালীন সময়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকার সুযোগ পাওয়া ছিল আমার জীবনের এক নিখাদ গৌরব।’

উল্লেখ্য, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর পদত্যাগ নানা জল্পনা সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও ধনখড় নিজের ইস্তফার পেছনে শুধুই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যার কথা জানিয়েছেন, তবু রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে এর গভীরতর তাৎপর্য নিয়ে।

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে সংশয় প্রকাশ করেছেন ধনখড়ের ইস্তফার কারণ নিয়ে। মঙ্গলবার সকালে সংসদ চত্বরে প্রবেশের সময় তিনি বলেন, ‘কী কারণ, তা একমাত্র তিনিই (ধনখড়ই) জানেন। এই নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। হয় তিনি জানেন, নয়তো সরকার জানে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার সকালে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে উপরাষ্ট্রপতি সহ বিভিন্ন পদে ধনখড়ের কাজের কথা উল্লেখ করেছেন।

Advertisement