• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

‘টেইল সেকশন’-এ গোলযোগের সূত্র খুঁজছেন তদন্তকারীরা

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা

ফাইল চিত্র

আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। বোয়িং ড্রিমলাইনারের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে বিমানটির লেজ অর্থাত ‘টেইল’ অংশে কোনও বৈদ্যুতিক গোলযোগ হয়েছিল কি না এবং তারই জেরে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন এখন ভাবিয়ে তুলেছে তদন্তকারীদের। মনে করা হচ্ছে, বিমানটি ওড়ার পর বিমানের যন্ত্রাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। বিমান দুর্ঘটনা এবং জ্বালানি বিস্ফোরণে বিমানটির ‘টেইল’ অংশ তুলনামূলকভাবে সামান্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ওড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১ উড়ানটির জ্বালানি সুইচ। এর ফলে অকেজো হয়ে পড়ে বিমানের দু’টি ইঞ্জিন। আর এর জেরেই এত বড় দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে। কিন্তু জ্বালানি সুইচ কী করে বন্ধ হল তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না। তদন্ত চলাকালীন দেখা যায় বিমানটি ভেঙে পড়ার পর বিস্ফোরণের জেরে সামনের এবং মাঝের অংশ পুড়ে গেলেও পিছনের অংশটি অক্ষত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও তেমন হয়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমানের ওই অংশ থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলি আহমেদাবাদে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিমানটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

বিমান দুর্ঘটনার পর বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদে বিমানের পিছনের ব্ল্যাকবক্স পাওয়া যায়। তবে বিস্ফোরণের জেরে সেই ব্ল্যাকবক্সের ক্ষয়ক্ষতি এতটাই বেশি হয়েছিল যে, তথ্য উদ্ধার সম্ভব হচ্ছিল না। ১৬ জুন ধ্বংসস্তূপ থেকে সামনের ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা হয়। সেটি থেকে বিমানের ৪৯ ঘণ্টার উড়ানের তথ্য এবং দুর্ঘটনার ২ ঘণ্টা আগের অডিও রেকর্ডিং বের করা হয়।

Advertisement

দুর্ঘটনার আগে, এআই-৪২৩ উড়ানের সময় স্ট্যাবিলাইজার পজিশন ট্রান্সডিউসার্স-এ একটি ত্রুটি রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে আমেদাবাদের রক্ষণাবেক্ষণ টিম সেটি ঠিক করে দিয়েছিল। দুর্ঘটনার সময় সেই যন্ত্রাংশটি বিমানের টেল সেকশনে অবস্থান করছিল। ফলে সেটিই এখন তদন্তকারীদের কাছে তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও বিমানে থাকে অগজিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট। ‘এটি এমন এক ধরনের ইঞ্জিন, যেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। কোনও ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে, এপিইউ তা জোগান দেয়। সরকারি আধিকারিকেরা সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, ওই এপিইউ অক্ষত অবস্থাতেই পাওয়া গিয়েছে। এখন বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, উড়ানের সময়েই কোনওভাবে শর্ট সার্কিট হয়ে টেল সেকশনে আগুন লেগেছিল, না কি বিমানটি ভেঙে পড়ার পর বিস্ফোরণে ঘটেছিল। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ বলেছেন, কেবিনের লাইটগুলি বার বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে ত্রুটিরই ইঙ্গিত দেয়।

দুর্ঘটনার মুহূর্তে ককপিটে দুই পাইলটের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তার উল্লেখ আছে রিপোর্ট। সেখানে এক পাইলট বলছেন, ‘কেন তুমি বন্ধ (জ্বালানি সুইচ) করে দিলে?’ জবাবে আর এক জন বলছেন, ‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’ বিমান বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক চালক ওড়ার সময় কখনওই ওই জ্বালানি সুইচ বন্ধ করে দেবেন না। এটা সম্ভবই নয়। তা ছাড়া ভুল করেও জ্বালানি সুইচের অবস্থান বদল সম্ভব নয়। এক সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি সুইচ বন্ধ করাও অসম্ভব।

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এক সরকারি আধিকারিক জানান, আকাশে ওড়ার আগেই যদি বিমানের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় কোনও গোলযোগ হয়, তা হলে বিমানের সব ক’টি সেন্সরেই তার প্রভাব পড়বে। যদি সেন্সর সঠিক ভাবে কাজ না করে, তা ভুল তথ্য দেবে বিমানের ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তথা ইসিইউ-কে। ইসিইউ হল ইঞ্জিন ব্যবস্থার মস্তিষ্ক। এর কাজই হল বিভিন্ন সেন্সর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তার ভিত্তিতে ইঞ্জিনের কার্যকারিতা এবং জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় গোলযোগ দেখা দিলে বিমানের সেন্সর কখনওই সঠিক তথ্য দিতে পারবে না। ফলে ইসিইউ মনে করবে, নিশ্চয়ই কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে। তখনই ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে ইসিইউ। ফলে ইঞ্জিনও বন্ধ হয়ে যাবে এবং দুর্ঘটনা ঘটবে।

দুর্ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর টেল সেকশন থেকে এক বিমান অ্যাটেনডেন্টের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি আগুনে দগ্ধ হননি, সংঘর্ষের কারণে এবং সিট বেল্টে আটকে পড়ে মারা যান। এর পর অনেকটা সময় চলে যাওয়ায় অগ্নিনির্বাপক রাসায়নিকের কারণে দেহটি পচে যায়।

Advertisement