• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

একুশে জুলাই

প্রতিবছর একুশে জুলাইয়ের দিন বৃষ্টি হয়। এবারও আবহায়ো দপ্তরের পূর্বাভাস সেকথাই বলছে। তবু ‘দিদি’র কথা শুনতে হাজার হাজার মানুষ দু’দিন আগেই হাজির কলকাতা শহরে।

নিজস্ব চিত্র

একুশে জুলাইয়ের রক্তাক্ত স্মৃতির ৩২টি বছর কেটে গেল। তবু এখনও ফিকে হয়নি সেদিনের আবেগ। প্রতি বছর ধর্মতলায় মঞ্চ করে একুশে জুলাই শহিদ তর্পণে অতীতকে স্মরণ করা হয়। এখানেই স্থির হয় ভবিষ্যতের কর্মপন্থা। ২১ জুলাই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রামের একটি নির্দিষ্ট দিন। সেদিন সেই সময়ের যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ডাক দেওয়া হয়েছিল মহাকরণ অভিযানের। নিরস্ত্র শান্তিকামী মানুষের সমাবেশে বামফ্রন্টের পুলিশ গুলি চালিয়ে ১৩টি তরতাজা প্রাণকে ছিনিয়ে নেয়। প্রতি বছর সেই শহিদদের স্মরণ করেই ২১ জুলাই ‘শহিদ তর্পণ’।

একত্রিশ বছর আগে মমতা তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়ে তাঁর দাবি ছিল, ‘নো আইডেনটিটি কার্ড, নোট ভোট’। ভোট দেওয়ার জন্য প্রত্যেককে সচিত্র পরিচয়পত্র আবশ্যিক করতে হবে। এই দাবিতে মহাকরণগামী পাঁচটি রাস্তায় মঞ্চ করে জনসমাবেশের আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্র্যাবোন রোর্ড, স্ট্র্যান্ড রোড, বউবাজার, এসপ্ল্যানেড ইস্ট এবং মেয়ো রোডে পরিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার মেয়ো রোডে মঞ্চ তৈরি করতে দেয়নি। এখানে একটি ম্যাটাডোর ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়েই মমতা বক্তব্য রাখেন।

Advertisement

১৯৯৩ সালের একুশে জুলাই কার্যত শহিদদের রক্তের বিনিময়ে যেমন বামফ্রন্টের ললাটলিপি লেখা হয়ে গিয়েছিল, তেমনই এক সংগ্রামী দলের জন্মের সম্ভাবনা তৈরি করে দিল। এর ঠিক পাঁচ বছর পর তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়। ২১ জুলাইয়ের শহিদদের স্মরণের পাশাপাশি ওইদিন যে কয়েক হাজার কর্মী মারা গেছেন সিপিএম এবং বিজেপির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, তাঁদেরও স্মৃতিচারণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব শহিদ পরিবারের পাশে ছিলেন এবং এখনও আছেন। এরপর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নানুর, সূঁচপুর—চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনে অনেকেই রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছেন। এইসব শহিদ পরিবারকেও সম্মান জানানো হয় একুশের মঞ্চ থেকে।

Advertisement

প্রতিবছর একুশে জুলাইয়ের দিন বৃষ্টি হয়। এবারও আবহায়ো দপ্তরের পূর্বাভাস সেকথাই বলছে। তবু ‘দিদি’র কথা শুনতে হাজার হাজার মানুষ দু’দিন আগেই হাজির কলকাতা শহরে। সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ ও যাদবপুরের বাঘাযতীন স্টেডিয়ামে রাখা হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে আগাম আসা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। দু’দিন আগেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সল্টলেক বইমেলা প্রাঙ্গণে হাজির বেশ কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে রীতিমতো উৎসবের ছবি। পসরা সাজিয়ে বসেছেন অস্থায়ী ক্রেতারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছবি থেকে ব্যাগ, হাতা, খুন্তি কী নেই? অনেকেছোট ছোট উপহার কিনছেন বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে। অনুসন্ধান কেন্দ্রে অনবরত ঘোষণা চলছে। পাশেই রয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প। বহু কর্মী শরীর চেক-আপ করাচ্ছেন। বাইরে থেকে আগত কর্মী-সমর্থকদের দেখভালের জন্য রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা।

রাজপথ থেকেই উত্থান মা-মাটি-মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই রাজপথ থেকে তিনি কোনওদিন সরে যাননি। তিনি শপথ নিয়েছিলেন, শহিদদের স্মরণ করে নতুন বাংলা গড়বেন। সেই লক্ষ্যে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এমন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণকরা হয়নি। জননেত্রী থেকে দেশনেত্রী হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement