কসবা ল’ কলেজে ধর্ষণ কাণ্ডে সোমবার চার অভিযুক্তের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেজন্য মঙ্গলবার ধৃতদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে ফের তাঁদের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিন তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ফের অভিযুক্তদের ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। কিন্তু আদালত মনোজিৎ, জাইব ও প্রমিতকে আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত এবং ধৃত নিরাপত্তারক্ষী পিনাকীকে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত তথা অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্র ওরফে ‘এম’, বাকি দুই পড়ুয়া জাইব ওরফে ‘জে’ এবং প্রমিত ওরফে ‘পি’-কে বৃহস্পতিবারই গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে কলেজের নিরাপত্তা রক্ষীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এই চারজনকে আদালতে হাজির করানো হলে প্রথমে চারদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
Advertisement
এদিকে কলকাতা পুলিশ অভিযোগ তুলেছে, নির্যাতিতার পরিচয় ফাঁস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সকালে লালবাজারের তরফে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে কলকাতা পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশের যে কোনও চেষ্টাই আইনত অপরাধ। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সকলকেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নির্যাতিতার আত্মসম্মান এবং গোপনীয়তাকে সম্মান জানানো আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যেই পড়ে। সেজন্য নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ্যে চলে আসে এমন কোনও তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
সমাজমাধ্যমে কলকাতা পুলিশের তরফে করা ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘কসবার ঘটনায় গোপন নথি ছড়িয়ে দিয়ে কিংবা অন্য কোনও উপায়ে নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। এটা আইনের লঙ্ঘন।’ এরপরই পুলিশের তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এই ধরনের কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে। তবে কে বা কারা এবং কী ভাবে এই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছেন, তা প্রকাশ্যে আনেনি কলকাতা পুলিশ।
এদিকে কসবার ওই ল’ কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মনোজিৎ মিশ্রর পক্ষে বলতে গিয়ে তাঁর আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিস্ফোরক দাবি করলেন। তিনি আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। ধর্ষণের ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে অভিযুক্তের ঘাড়ে লাভ বাইট কী করে থাকতে পারে?’
প্রসঙ্গত গত বুধবার রাতে কসবা ল’ কলেজের ওই ছাত্রীকে নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত এক অস্থায়ী কর্মী এবং দুই পড়ুয়া ছাত্র। প্রথমে কলেজের ইউনিয়ন রুমে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে তাঁকে জোর করে রক্ষীর ঘরে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। এই পাশবিক অপরাধের জন্য রক্ষীকে তাঁরা বাইরে বসিয়ে রাখে। ঘটনার তদন্তে কলকাতা পুলিশ ন’জন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল অর্থাৎ সিট গঠন করেছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষাল এই তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এমনকি ঘটনার দিন ওই কলেজের সাড়ে সাত ঘন্টার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই ফুটেজের সঙ্গে নির্যাতিতার বয়ান মিলে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
Advertisement



