শুধু ছাত্র-ছাত্রীরাই নন, কসবা ল’ কলেজে ২০১৬ সাল থেকে মনোজিতের দাদাগিরির শিকার হন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়াত অধ্যক্ষের স্ত্রী নবনীতা চট্টোপাধ্যায়, যিনি নিজেও একজন অধ্য়াপক। তাঁর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, অবৈধভাবে ভর্তি করানোর জন্য মোটা টাকা তুলতেন মনোজিৎ মিশ্র। তা সত্ত্বেও তাঁকে কীভাবে অস্থায়ী কর্মী পদে নিয়োগ করা হল? বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই ল’ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষের স্ত্রী। তিনি বলেছেন, এখনকার নেতারা তাঁর প্রয়াত স্বামীর অর্থাৎ সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষের কথা মেনে চললে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।
মনোজিতের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ ছিল তখন থেকে? এ বিষয়ে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষের স্ত্রী একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভর্তির টোপ দিয়ে টাকা তুলত মনোজিৎ। কখনও কখনও সেই টাকার অঙ্ক লাখের গণ্ডি ছাড়িয়ে যেত। তার সুপারিশ না মানলেই শুরু হত অত্য়াচার। এইসব অভিযোগের কারণে তৎকালীন অধ্যক্ষ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় কলেজ থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে মারা যান তৎকালীন অধ্যক্ষ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। সেই সুযোগে কলেজে ফিরে আসেন মনোজিৎ।
প্রয়াত প্রাক্তন অধ্যক্ষের স্ত্রী নবনীতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, মেধাতালিকা টপকে, যেখানে হয়তো ৬০০ র্যাঙ্ক অব্দি চান্স পাওয়ার কথা, সেখানে দু’হাজারে যার নাম আছে, তাকে ভর্তি নিতে হবে। এরকম নানান অন্যায্য, অযৌক্তিক দাবি ছিল মনোজিতের। যে মেধাতালিকার বাইরে ছিল, তাঁকেও টাকার বিনিময়ে ভর্তি নেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করতো। তার সুপারিশগুলো না মানলেই নারকীয় অত্যাচার শুরু হয়ে যেত। এবং এর জন্য সে যে টাকা তুলত, অবশ্যই সেটা ঘুরপথে। সেই টাকার অঙ্ক অনেক সময় লাখের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত প্রয়াত দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় একসময় তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন অর্থাৎ ওয়েবকুপার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। স্ত্রী নবনীতাও ওয়েবকুপার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তৃণমূল কর্মী মনোজিতের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ ছিল তাঁদের। নবনীতা চট্টোপাধ্য়ায়ের দাবি, মনোজিতের দৌরাত্ম্য়ের কথা দলকে এবং দলের শিক্ষক নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে, মনোজিৎকে কলেজ থেকে রাস্টিকেট করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ দেবাশিস চট্টোপাধ্য়ায়।
নবনীতা বলেন, মনোজিৎ যাদের নেতা বলে জাহির করতো তাঁদেরও জানিয়েছিলেন। তখন থেকেই মেয়েদের টিজ করা, পিছনে লাগা, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের সঙ্গে এসব করতো। ওকে বারে বারে সতর্ক করা হয়েছে। যার এই ট্রাক রেকর্ড তাকে কিভাবে জিবি ওকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করল? সবাই মোটামুটি অবহিত ছিলেন। কিন্তু কিছু করেননি। এরপরই মেরুদণ্ড সোজা রেখে দেবাশিস বলেছিলেন, ‘হয় আমি প্রিন্সিপাল থাকব, না হলে মনোজিৎ থাকবে।’