• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘রেগা’ তুলতে চাইছে কেন্দ্র

রেগা প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বরাদ্দ আর্থিক কমিটির রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে একটি সর্বভারতীয় দৈনিক পত্রিকায়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

একশো দিনের কাজের প্রকল্প, যা সংক্ষেপে ‘রেগা’ নামে পরিচিত। কর্মহীন ভারতে ন্যূনতম কাজের স্বীকৃতি দিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে চালু হয়েছিল ‘রেগা’। এখন রেগার কাজের চাহিদা বাড়লেও বরাদ্দ হ্রাসে প্রতি বছর কাজ মিলছে কম। তাই রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের ব্যয় বরাদ্দ আর্থিক কমিটি। আগামী পাঁচ বছরের (২০২৯-৩০ পর্যন্ত) রেগায় বরাদ্দ ১২ শতাংশ হারে বাড়িয়ে তা ৫.২৩ লক্ষ কোটি টাকা করার সুপারিশ করেছে কমিটি। উল্লেখ্য, ২০২১-২২ থেকে ২০২৪-২৫ পাঁচ বছরে বরাদ্দ ছিল ৪.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা।

রেগা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে প্রকাশ, রেগায় কাজের চাহিদা গত বছর থেকেও বেড়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রেগায় কাজের চাহিদা তার আগের বছর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ৮.৩ শতাংশ হারে। রেগা ওয়েবসাইটের তথ্যে দেখা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে প্রথমে কাজের নাম নথিভুক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই কোটি পরিবার। তা বছর শেষে কমে হয় ১৮ কোটি পরিবার। ২০২৪-২৫ সালে চাহিদা বেড়ে নাম নথিভুক্তি হয় প্রায় ২২ কোটি পরিবার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দেশে শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কমে যাওয়ায় রেগায় নাম নথিভুক্তির সংখ্যা বাড়ছে। তবে যে হারে নথিভুক্তি বাড়ছে সেই হারে রেগায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রেগা আইনে ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও দেখা গিয়েছে ৫০ দিনের বেশি কাজ মেলে না বেশিরভাগ রেগা শ্রমিকের।

Advertisement

এদিকে, রেগা প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বরাদ্দ আর্থিক কমিটির রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে একটি সর্বভারতীয় দৈনিক পত্রিকায়। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ সালে করোনার সময় লকডাউন থাকায় দেশে রেগার চাহিদা সবচেয়ে বেড়ে যায়। সেই বছর রেগায় বরাদ্দ হয় সর্বাধিক, ১ লক্ষ ৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এতে দেশে ৭.৫৫ কোটি গ্রামীণ পরিবারের কর্মসংস্থান হয় রেগায়। করোনা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে রেগায় ক্রমশ কাজের পরিবারের সংখ্যা কমতে থাকে। রেগায় কাজের সুযোগ মেলা পরিবারের সংখ্যা ২০২১-২২ সালে ছিল ৭.২৫ কোটি। ২০২২-২৩ সালে তাকমে হয় ৬.১৮ কোটি, ২০২৩-২৪ সালে তা আরও কমে হয় ৫.৯৯ কোটি, ২০২৪-২৫ সালে হয় ৫.৭৯ কোটি। মাত্র তিন বছরে ২ কোটি পরিবার রেগায় কাজের সুযোগ হারিয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ২০২৪-২৫ সালে কমে হয়েছে ৮৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ২০২২-২৩ থেকে রেগায় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ রাজ্যের বিরুদ্ধে এনে এই বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার নিজের তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করে ন্যূনতম ৫০ দিনের কাজ সুনিশ্চিত করেছে।

Advertisement

গত বছর থেকে রেগায় কাজের চাহিদা বাড়লেও রেগায় কাজের সুযোগ ক্রমশ কমেছে। কাজের সুযোগ কমার অন্যতম কারণ হলো রেগায় গত তিন বছরে ৫.৯ কোটি জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। নতুন জব কার্ড বিলি হয়েছে ১.১৬ কোটি। স্বাভাবিকভাবেই ৪ কোটি জব কার্ড গ্রাহক রেগায় কাজের সুযোগ হারিয়েছে। জব কার্ড বাতিল হওয়ায় কর্মদিবস কমে গিয়েছে রেগায়। যেমন ২০২৩-২৪ সালে রেগায় ২৮৯ কর্মদিবস তৈরি হয়। ২০২৪-২৫ সালে তা কমে হয় ২৬৮ কোটি কর্মদিবস। পরিবারের গড় কাজ ৫৩ দিন থেকে কমে হয় ৫০ দিন। রেগায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাঁচ বছরে কমেছে ১৫ হাজার কোটি টাকার উপর। যেমন, ২০২০-২১ সালে রেগায় বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, তা ২০২৪-২৫ সালে কমে হয়েছে ৮৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। গত বছর থেকে রেগায় কাজের চাহিদা ৮.৯ শতাংশ হারে বাড়লেও দেখা গেল বরাদ্দ ১৫ শতাংশ হারে কমে গিয়েছে। চাহিদা থাকলেও কাজ নেই, বরাদ্দও কমছে। সাধারণ শ্রমিকদের বেঁচে থাকার প্রকল্প ‘রেগা’ তুলেই দিতে চাইছে মোদী সরকার।

Advertisement