• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজ’, কলকাতার নবতম মহিলা কলেজ

১৮৭৯ সালে 'বেথুন' ভারতের প্রথম 'মহিলা' কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই কলকাতারই নবতম সংযোজন 'ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজ'।

ভারতের প্রথম মহিলা কলেজ কলকাতার ‘বেথুন’ কলেজ। যার প্রথমে নাম ছিল ‘হিন্দু মহিলা স্কুল’ এবং এটি এশিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীনতম মহিলা স্কুল। ১৮৭৯ সালে ‘বেথুন’ ভারতের প্রথম ‘মহিলা’ কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই কলকাতারই নবতম সংযোজন ‘ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজ’। কলকাতার পূর্ব প্রান্তে এক মনোরম পরিবেশে ২.০২ একর জমিতে ১৯৯২ সালে যা গড়ে ওঠে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজটি স্থাপিত হলেও বর্তমানে এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। লেকটাউন রোডের বি ব্লকের পি ২৩৭ নম্বরে কলেজটি অবস্থিত। দু’টি বহুতল বিশিষ্ট ভবনে ক্লাস হয়। বর্তমানে ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজ ন্যাকের B++ গ্রুপে উত্তীর্ণ হয়েছে। কলেজ তৈরির সময় এর লক্ষ্যই ছিল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সাথে সাথে ব্যক্তিগত বিকাশ ও সমষ্টিগত ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার উন্নতিকরণ। ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজ চিরাচরিত শিক্ষা ছাড়াও জীবনের সর্বাঙ্গীণ ক্ষেত্র উন্নতিকল্পে সর্বদা সচেষ্ট।

বর্তমানে কলেজে কলা, বানিজ্য ও বিজ্ঞান তিনটি বিভাগেই পড়ানো হয়। এখানে স্নাতক ছাড়া স্নাতকোত্তর পর্যায়েও পড়া যায়। এখানে স্নাতক পর্যায়ে ১৭টি বিষয় ও স্নাতকোত্তর বিভাগে দুটি বিষয় পড়ানো হয়। কলা বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সমাজতত্ত্ব, শিক্ষাবিজ্ঞান (এডুকেশন) সবই মেজর বিষয়। বানিজ্য বিভাগে একাউন্টেন্সি মেজর বিষয়। আর বিজ্ঞানে বিভাগে , ভূগোল, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণী বিদ্যা ও কম্পিউটার সায়েন্স মেজর বিষয়। মাইনর হিসেবে পড়ানো হয় সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন, রসায়ণবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এখানে শিক্ষাবিজ্ঞান ও ভূগোল পড়ানো হয়।

Advertisement

এই কলেজটি শুধু শিক্ষাগত উৎকর্ষ বৃদ্ধিতেই সচেষ্ট নয়। উন্নত মানের শিক্ষা দানের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে আধুনিক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যম রয়েছে। আধুনিক শিক্ষার এখন যে মূল স্তম্ভ সেই কম্পিউটার বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের পারদর্শীতার জন্য চারটে ল্যাবরেটরি আছে। প্রতিটি বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আছে আধুনিক প্রযুক্তির ল্যাবরেটরি। কলেজের গ্রন্থাগারটি আধুনিক প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। প্রতিটি শিক্ষার্থী বাড়িতে বসেই জানতে পারবে তার প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বইটি লাইব্রেরীতে আছে কিনা। থাকলে তবেই শিক্ষার্থীরা সেই বইয়ের জন্য রিকুইজিশন স্লিপ জমা দেয়। পাঠাগারে মুদ্রিত বইয়ের সংখ্যা তেরো হাজার। এছাড়াও জীবন ও জীবিকার উপযোগী বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকা পাওয়া যায়। পাশাপাশি গ্রন্থাগার অনলাইন পরিষেবাও দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারে বৈদ্যুতিন গ্রন্থ, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থাগারের নিজস্ব পোর্টাল (E gyandhara)। অনলাইন ক্যাটালগ ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারের সংগ্রহ সম্বন্ধে অবহিত হয়েই তবে তারা তাদের নির্দিষ্ট বিষয় বা বইয়ের রিকুইজিশন জমা দেয় এবং আগেই বলেছি এব্যাপারটা তারা তাদের বাড়িতে বসেই করতে পারে।

Advertisement

শিক্ষার্থীদের সম্বন্ধে সদা সজাগ এই কলেজ সরকারি বৃত্তি ছাড়াও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থাও করে। অ্যাকাডেমিক বিষয় ছাড়াও এই কলেজ প্রতিনিয়ত বহুমুখী সামাজিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত। কলেজে দু’টি সক্রিয় জাতীয় সেবাপ্রকল্প ইউনিট (এন এস এস) আছে। যারা বিভিন্ন ধরনের যেমন হেল্থ সেল। সেখানে নানা কর্মসূচি যেমন রক্তদান, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অরগ্যান ডোনেশন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। বর্তমান সময়ে যে বিষয়টা খুব জরুরী সেই প্লেশমেন্ট বিষয়টির ওপর ও কলেজ বিশেষ নজর প্রদান করে থাকে। প্রতি বছর কলেজ থেকে ক্যাম্পাসইং হয় যেখানে মেয়েরা বহু বেসরকারি সংস্থায় চাকুরীর সুযোগ পায় । এছাড়াও উইমেন সেল ও enterpreneurship সেল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের পাশাপাশি তার মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার হাতের কাজ শেখানো ও তা বিপননের চেষ্টা করা হয় এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক জোর পায়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক গঠনের স্বার্থে কলেজে আধুনিক জিম আছে। এছাড়াও ভারতীয় চিরাচরিত যোগার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে সাহায্য করা হয়।

কলেজ নানাবিধ পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে যেমন ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং’, 45 K W সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। বিদ্যা চর্চার পাশাপাশি এইসকল সামাজিক প্রকল্প ও কার্যকলাপে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কলেজের কৃতি ছাত্রীরা দেশে এবং বিদেশে বহু জায়গাতে নিজ নিজ জায়গাতে সুপ্রতিষ্ঠিত। নানাধরনের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ব্যাংক, রেল, পুলিশ, কলেজ ও স্কুল শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির অধীনে প্রতি বছর ইউনিভার্সিটি ফাইনাল পরীক্ষাতে এ কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীরা স্থান অধিগ্রহণ করে থাকে। বিগত বছরে ইতিহাস, ইংলিশ, শিক্ষবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা স্থান অধিকার করেছে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে কলেজের ছাত্রীরা বিভিন্ন ইন্টার কলেজ কম্পিটিশনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে ও পুরস্কার লাভ করে থাকে। কলেজের একটি খোকো টিম আছে যারা নিয়মিত বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি লেভেল প্রতিযোগিতায় সুনামের সাথে অংশগ্রহণ করে থাকে। কলেজের এই বিশাল কর্মকান্ডের হাল ধরে রেখেছেন ষাটজন শিক্ষক ও আঠারোজন শিক্ষাকর্মী।

Advertisement