পূর্ব প্রকাশিতের পর
ইস্কুলের মধ্য বিভাগে বীথিকা-ঘরে ভাণ্ডারে সীট পেল। এ ঘরটি এখন আর নেই তবে ভিতটি স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। তারই সমুখ দিয়ে গেছে শালবীথি। তারই এক প্রান্তে লাইব্রেরি, অন্য প্রান্তে দেহলী। গুরুদেব তখন থাকতেন দেহলীতে।
দেহলী থেকে বেরিয়ে, শালবীথি হয়ে গুরুদেব চলেছেন লাইব্রেরির দিকে। পরনে লম্বা জোব্বা, মাথায় কালো টুপি। ভাণ্ডারে দেখামাত্রই ছুটলো তাঁর দিকে। আর সব ছেলেরা অবাক। ছোকরা আশ্রমে এসেছে দশ মিনিট হয় কি না হয়। এরই মধ্যে কাউকে কিছু ভালো-মন্দ না শুধিয়ে ছুটলো গুরুদেবের দিকে!
Advertisement
আড়াল থেকে সবাই দেখলে ভাণ্ডারে গুরুদেবকে কি যেন একটা বললে। গুরুদেব মৃদুহাস্য করলেন। মনে হল যেন অল্প অল্প আপত্তি জানাচ্ছেন। ভাণ্ডারে চাপ দিচ্ছে। শেষটায় ভাণ্ডারে গুরুদেবের হাতে কি একটা গুঁজে দিলে। গুরুদেব আবার মৃদ্যুহাস্য করে জোব্বার নিচে হাত চালিয়ে ভিতরের জেবে সেটি রেখে দিলেন। ভাণ্ডারে এক গাল হেসে ডরমিটরিতে ফিরে এল। প্রণাম না, নমস্কার পর্যন্ত না।
Advertisement
সবাই শুধালে, ‘গুরুদেবকে কি দিলি?’
ভাণ্ডারে তার মারাঠি-হিন্দীতে বললে, ‘গুরুদেব কৌন? ওহ্ তো দরবেশ হৈ।’
‘বলিস কিরে, ও তো গুরুদেব হায়।’
‘ক্যা ‘গুরুদেব’ ‘গুরুদেব’ করতা হৈ। হম্ উসকো এক অঠন্নী দিয়া।’
বলে কি? মাথা খারাপ না বদ্ধ পাগল? গুরুদেবকে আধুলি দিয়েছে!
জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, দেশ ছাড়ার সময় ভাণ্ডারের ঠাকুরমা তাকে নাকি উপদেশ দিয়েছেন, সন্ন্যাসী দরবেশকে দান-দক্ষিণা করতে। ভাণ্ডারে তাঁরই কথামত দরবেশকে একটা আধুলি দিয়েছে। তবে, হ্যাঁ দরবেশ বাবাজী প্রথমটায় একটু আপত্তি জানিয়েছিল বটে, কিন্তু ভাণ্ডারে তালেবর ছেলে সহজে দমে না, চালাকি নয়, বাবা, একটি পুরী অঠন্নী!
(ক্রমশ)
Advertisement



