• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

কবিতা গুচ্ছ

মৃতদেহ টপকে এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন পিছুটান ছিঁড়ে অনন্ত বিষন্নতার চাদর বিছানো সম্মুখে— অজস্র নির্ঘুম রাত বেঁচে আছে সিগারেটের ফিল্টারে; লাথি খেতে-খেতে বাঁকা শিরদাঁড়াটা সোজা ইস্পাত হয়ে গেছে এখন, জানোয়ারগুলোর বিছানো ফাঁস, কাটতে-কাটতে বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, ছুঁয়েছে আকাশ, শুধু বয়সটা একটুও থেমে নেই— একগুঁয়ে ষাঁড়ের মত, সিং উঁচিয়ে ছুটেই চলেছে।

প্রতীকী চিত্র

সৌরী ঘটক
বিমল দেব

আজ
চৈত্রের সন্ধ্যায়
আপনাকে মনে পড়ছে

Advertisement

দিন বদলের স্বপ্ন
আপনার সৃজনে ছায়া ফেলেছে নানা রঙে
সেই কবেকার কলকাতায়
হেঁটে গেছেন উত্তর থেকে দক্ষিণে
আপনার গল্পের চরিত্ররাও
হেঁটেছে সঙ্গে সঙ্গে

Advertisement

কত টানাপড়েন
কত ঝড়ের রাত
পেরিয়ে গেছেন
আজও
মনে হয় হেঁটে যাচ্ছেন

 

অসময়ের সময়
কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়

সময় কি ঘড়ির ভিতরে থাকে?
নাকি আটকে থাকে গোপন আড্ডায়!
বারান্দায় ছিটকে আসা কাগজের
খবর, হয়ত কাগজ নিজেও জানে না!

দরজা খুললেই কি মুক্তি পাওয়া যাবে?
না দরজার ভিতরেও দরজা লুকিয়ে,
আকাশের ঝুলে থাকা কালো নক্ষত্রেরা
স্বপ্নের ভিতরে খেলে এতোল বেতোল!

ভাঙা রেডিওতে পুরোনো দিনের যত গান,
গানের কথাগুলি বার বার বদলে যায়!
সেইকথা লিখতে গিয়ে দেখি,
কলম হারিয়ে গেল শব্দের ভিতরে!

যত অর্থহীন ভাবনারা এলোমেলো,
সব শর্ত জমা আছে কালের আধারে
শহর ঘুমালে, শব্দরা নীরবতা ভাঙে
কান্নার ঘাম মুছে রাস্তায় হাঁটে সারারাত!

 

মুখ
জয়দেব চক্রবর্তী

অপমানিতের মুখ— ওকে দেখলে যা
না দেখলেও তাই। একইরকম দেখায়।
অথবা সে তোমার দেখার কথা না ভেবে
খুব দ্রুত সরে যেতে চায় ভিড় থেকে
ওই দূরে যাওয়া দিয়ে সময় হারাতে চায়
হারানো সময় নিয়ে নামে রাত্রিদেহে
পরস্পর লিপ্ত হতে চেয়ে বুঝে যায়—
দু’জনেরই শরীর ভেঙেছে

যে সময় হারিয়ে যায়, তা কি শূন্য হয়ে যায়?
হয়তো হয় না; হলেও তা স্পর্শের মতন নয়।
আবার শূন্যও বুঝি ভেঙে পড়ে নীল গ্রহান্তরে
সেসব অপূর্ণকালে রাত্রি লিখে যায়—
কারা তার কাছ থেকে ঝরে ঝরে গেছে
সাক্ষী থাকে একজন মুখ, অপমানিতের

 

দুটি কবিতা
শোভন মণ্ডল
সৈকত
একটা বাদামের জঙ্গলে হারিয়ে যেতে যেতে
আমরা খুঁজে পেয়েছি প্রিয় বালিচর
আমাদের চারপাশে ফুটে গেছে লাজুক ফুল
মুগ্ধতারও তো একটা নীল দ্বীপ আছে
যেখানে খটিয়ায় পা দুলিয়ে গান গায়
       গরিব মাঝি
লোনা জলের টান ইশারার মতো
খাবি খায় বুকের ভেতরটা
চতুর শিকারী শুধু তির বোঝে,
                             আর বোঝে বিষ
ফেনায় জড়িয়ে থাকে রোদ, রোদের নরম
পাড় ভেঙে শুরু হয় আলাপ-কাল
দু’দণ্ড ভালবাসা-বাসি পড়ে থাক অগোচরে
উল্টানো নৌকোর মতো…
পথ
এই রাস্তায় আলো কম থাকে
রাতেরবেলা ছম ছম করে গা
প্রহরে আনাগোনা বাড়ে দুর্বৃত্তের
মেয়েরা নিরাপদ নয়
এড়িয়ে চলে এ পথ
যেভাবেই হোক
রাত বাড়লে আসর বসে কাছেই
বেলাল্লাপনা সীমা পার করে
হারিয়ে যায় মান-সম্মান
শুধু দেবীপক্ষে শান্ত থাকে পথ
সর্বত্র আনন্দ-জোয়ার
পুজো শেষ হয়ে গেলে উমা
এই পথ দিয়ে কৈলাসে যান

শুধু বয়সটা থেমে নেই
সৌরভ মান্না

বারবার দায়িত্বের ভারে কাঁধটা নুয়ে পড়েছে।
কীভাবে যে গল্প বলতে-বলতে
একটা-একটা করে বয়সের পাতা নিঃশব্দে
ছন্দহীন ঝরে গেছে, চোখেই পড়েনি।

কত কিছুই না দেখলাম
যা দেখার ইচ্ছে জাগেনি কখনও—
কত কিছুই না শুনলাম
যা শোনার তুচ্ছ প্রবৃত্তিও হয়নি একটুও—
তবুও, এক তিলও ফাঁকি দেওয়ার
শূন্য পরিসর নেই কেথাও।

মৃতদেহ টপকে এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন পিছুটান ছিঁড়ে
অনন্ত বিষন্নতার চাদর বিছানো সম্মুখে—
অজস্র নির্ঘুম রাত বেঁচে আছে সিগারেটের ফিল্টারে;
লাথি খেতে-খেতে বাঁকা শিরদাঁড়াটা
সোজা ইস্পাত হয়ে গেছে এখন,
জানোয়ারগুলোর বিছানো ফাঁস, কাটতে-কাটতে
বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, ছুঁয়েছে আকাশ,

শুধু বয়সটা একটুও থেমে নেই—
একগুঁয়ে ষাঁড়ের মত, সিং উঁচিয়ে ছুটেই চলেছে।

 

যত্ন
রবীনা মিত্র

প্রতিটি শব্দের ভিতরে যত্নে
লালন করি আশ্চর্য মায়া।

লুকিয়ে রাখি হেমন্তরঙ,
পরিপাটি চিঠির বাক্স,
রাতের এস্রাজ আর
তোমার চোখের মখমল!

এদিকে, সারি সারি শব্দের
দশ-দিকে,
অযত্নে ছড়িয়ে থাকে
স্মৃতির ধারালো পেরেক!

Advertisement