বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশনে পেশ হওয়া বাজেটে শহরবাসীর মাথায় করের বোঝা কমানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে বিকল্প আয়ের পথ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আগামী বছর দুটি নির্বাচন রয়েছে। সেই আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই কি এই চাণক্যের চাল দিয়েছেন মেয়র? রাজনৈতিক মহলে এ ধারনায় প্রকট হচ্ছে। তবে বাজেটে বাড়তি খরচ সামলানো হবে কীভাবে? এব্যাপারে ঠিক কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি? জানা গিয়েছে, পুরসভার বিকল্প আয় বাড়াতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চার্জ বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন, লাইসেন্স ফি, বিনোদন কর এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জঞ্জাল কর-সহ বিভিন্ন খাতে চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ, নির্মাণের আয়তন ও এলাকার ভিত্তিতে একাধিক ফি ধার্য হয়ে থাকে। এ বারের বাজেটে সেই সংক্রান্ত চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া গঙ্গাবক্ষে নৌকাবিহার, পার্টি কিংবা অনুষ্ঠানের মতো ক্ষেত্রে বিনোদন কর কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন এইসব ক্ষেত্রে পুরসভা কোনও কর নিত না, কিন্তু এ বার থেকে সেই সমস্ত ক্ষেত্রে কর বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন মাঠে টার্ফ তৈরি করে যে খেলাধুলার আয়োজন হয়, সেখান থেকেও বিনোদন কর আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার বড় কোনও পরিবর্তন না হলে ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। ফলে এই জোড়া নির্বাচনের জেরে শহরের বাসিন্দাদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপালে শহরবাসীর একটি অংশ শাসক দলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে। রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে তৃণমূল।
Advertisement
গত বছর লোকসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলের ভোটে ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টির বেশি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। সূত্রের খবর, এই ফলাফল নিয়ে শহরের নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই থেকেই শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের শহরবাসীর প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে। এবার কলকাতা পুরসভার বাজেট তৈরি হয়েছে সেই কথা মাথায় রেখে। এমনটাই ধারনা কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের একাংশের। সেজন্য বাড়তি কর বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল কলকাতা পুরসভা। বরং ঘুরপথে আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর এই বাজেটের মাধ্যমে শহরের বাসিন্দাদের উপর করের বোঝা না চাপিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। তবে বিরোধী দল বিজেপির মতে, এটি নিছক রাজনৈতিক কৌশল।
তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, কলকাতা পুরসভার খরচ ক্রমশ বাড়ছে, তাই নতুন আয়ের পথ খুঁজতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শহরের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবা বজায় রাখতে এই বাজেট বাস্তবসম্মত ও প্রয়োজনীয় বলে তিনি দাবি করেছেন।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই এই বাজেট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, শহরের নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত কর চাপানো না হোক, বরং বিকল্প পথে আয় বাড়ানো হোক। সেই পরিকল্পনাকে মাথায় রেখেই মেয়র বাজেট প্রস্তুত করেছেন।
Advertisement



