• facebook
  • twitter
Sunday, 7 December, 2025

জলবায়ু সঙ্কট রুখতে

কলোম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রীর ভাষণকে সমর্থন জানিয়েছে ভারত, চিন সহ বিশ্বের ১৩০টি উন্নয়নশীল দেশ। ‘জি৭৭ এবং চিন’ নামে পরিচিত এইসব দেশ এবারের ‘কপ-২৯’ সম্মেলনের একটি প্রধান পক্ষ হয়ে উঠেছে।

প্রতীকী চিত্র

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্যোগে এ বছরের জলবায়ু শীর্ষক সম্মেলন শেষ হচ্ছে রবিবার। এখনও পর্যন্ত জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নির্মাণে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির বরাদ্দ আর্থিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার বিষয়ে মতানৈক্য থেকেই গিয়েছে। পরিবেশ কর্মী ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি অন্তত ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার দাবি করেছে। উল্টোদিকে, প্রথম বিশ্বের দেশগুলি এক হাজার কোটি ডলারের বেশি আর্থিক অনুদান দিতে রাজি নয়। অবশ্য বাতিল হয়ে যাওয়া এই প্রস্তাব এখনও খসড়া আকারে রয়েছে বলে দাবি করে শেষ বেলায় সমস্ত পক্ষ একমত হয়ে কোনও একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আশাবাদী সম্মেলনের সভাপতি ও অন্য আহ্বায়করা।

রাতভর আলোচনার পর ‘কপ-২৯’ শীর্ষক সম্মেলনে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় আর্থিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা সংক্রান্ত এক প্রস্তাব পেশ করা হয় বৃহস্পতিবার। আগের প্রস্তাবগুলির তুলনায় তা অনেকটা ছোট হলেও খসড়ার মূল বক্তব্য একই রয়েছে। তবে অনেক দেশের প্রতিনিধি এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করেছেন। খসড়াটিতে চোখ বোলালে দেখা যাবে, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিকাঠামো বাড়াতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির প্রতি বছর ঠিক কতটা আর্থিক অনুদান প্রাপ্য, তা আগাগোড়া এড়িয়ে গিয়েছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি। এই একগুঁয়েমি তৃতীয় বিশ্বের প্রতিনিধিদের যে ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করেছে, তা বাকুর এই সম্মেলনে ভালোই বোঝা যাচ্ছে। কোনও মতে তারা এবার ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি ডলার আর্থিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রার এক কানাকড়িও ছাড়তে রাজি নয়।

Advertisement

আমরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ অন্যান্য প্রথম বিশ্বের দেশগুলি নানা প্রভাব ও কূটনৈতিক চালে আর্থিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা যাতে কোনওভাবে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি না হয়, তার জন্য তাঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবশ্য প্রথম বিশ্বের দেশগুলি অনুদান বরাদ্দ নিয়ে পাকাপাকিভাবে কিছু জানায়নি। এই দীর্ঘসূত্রিতা এবং একগুঁয়েমিতে বিরক্ত হয়ে কলোম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সুসানা বলেছেন, ‘এই সম্মেলন আস্তে আস্তে পুরো অর্থহীন হয়ে উঠছে। বিষয়টা কিন্তু এমন নয় যে, প্রথম বিশ্বের দেশগুলির টাকা নেই। তাদের প্রতিনিধিরা এই সঙ্কটকালেও মানবতার কথা না ভেবে সঙ্কীর্ণ ফায়দার কথা মাথায় রেখে সমানে গোঁয়ার্তুমি করে যাচ্ছে।

Advertisement

কলোম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রীর ভাষণকে সমর্থন জানিয়েছে ভারত, চিন সহ বিশ্বের ১৩০টি উন্নয়নশীল দেশ। ‘জি৭৭ এবং চিন’ নামে পরিচিত এইসব দেশ এবারের ‘কপ-২৯’ সম্মেলনের একটি প্রধান পক্ষ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু সঙ্কটের যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির সব থেকে বড় শিকার এই দেশগুলি সম্মেলনের জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলার বিষয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ লক্ষ্যের থেকে সরিয়ে এনে ‘সময়োপযোগী জরুরিভিত্তিক প্রয়োজন’ হিসাবে বাখ্যা করেছেন। পরিবেশবান্ধব পরিকাঠামোয় বিনিয়োগকারী বৃহৎ পুঁজির কর্পোরেট সংস্থাগুলির বাণিজ্যিক স্বার্থ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি সম্মেলনের সাধারণ সভায় এই প্রস্তাব রাখায় প্রথম বিশ্বের দেশগুলি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। জলবায়ু সঙ্কটের দায় নেওয়ার প্রশ্নে আরও বেশি বিপাকে পড়েছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির সরকার। উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিরা চাইছেন, এর জন্য উন্নত দেশগুলি বেশি অর্থ দিক।

কারণ, বিশ্বের বর্তমান দূষণ পরিস্থিতির জন্য মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলিই দায়ী। আবার অন্যদিকে উন্নত দেশগুলি এখন সরকারি অর্থ বরাদ্দের বদলে বেসরকারি সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থাগুলি যে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে, তার জন্য সুপারিশ করেছে।

জলবায়ু সম্মেলনে সামগ্রিকভাবে অর্থ বরাদ্দের জন্য আলাদাভাবে একটি তহবিল গড়ার কথা হচ্ছে। এর নাম ‘নিউ কালেক্টিভ ও কোয়ান্টিফায়েড গোল’ (এনসিকিউজি) অর্থাৎ নতুন সম্মিলিত ও পরিমিত লক্ষ্যমাত্রা। এই তহবিলে কোন দেশ কত অর্থ দেবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত দর কষাকষি চলছে। পরিমণ্ডলে কার্বন নির্গমণের ভারসাম্য ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নিয়ে আসার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ নেট জিরো) তার জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরবর্তী পর্যায়ের জন্য ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের কথা খসড়াপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত বরাদ্দ ঘোষণার অপেক্ষা।

Advertisement