রং বদলানো পাখি

Written by SNS April 27, 2024 2:37 pm

হাননান আহসান

‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি৷
দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী—‘ রবীন্দ্রনাথ
সত্যিই আমরা জানি না৷ গোটা পৃথিবীর খবর আমাদের কাছে অজানা৷ চোখের সামনে যেগুলি দৃশ্যমান হয়, সেসব নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষ থাকে না৷ ভাবলেই অবাক লাগে এই বিশ্বের সিংহভাগ জিনিসই আমাদের অগোচরে থেকে যায়৷ আর যখন বিশ্বয়কর কিছু দেখি, আনন্দের সীমা থাকে না৷ আমাদের ঔৎসুক্য বেড়ে যায়৷ সুন্দর কিছু তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি৷ কখনো অবাক হই, কখনো প্রকৃতির এই বিপুল ভাণ্ডার নিয়ে আলোচনা করি৷ আজ এক আজব পাখির গল্প শোনাব৷ যার সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব সকলকে মুগ্ধ করবেই৷

রং বদলানো পাখি৷ আমরা জানি গিরগিটি নিজের রং বদলে নিতে পারে৷ কিন্ত্ত পাখি যে এই রং বদলানোর খেলায় মস্ত পারদর্শী, তা কেউ ভেবে দেখেনি৷ হ্যাঁ, রং বদলানো পাখি বহাল তবিয়তে এই পৃথিবীতে রয়েছে৷ গল্পকথা নয়, বাস্তবেই এমন পাখির উপস্থিতি রয়েছে৷ যাদের দেখা পাওয়া গেছে উত্তর আমেরিকায়৷ খুব বড়োসড়ো নয়, আকারে বেশ ছোট্ট, তবে দেখতে দারুণ সুন্দর৷ নজরকাড়া এই পাখিটির নাম সুরাকাভ৷ সুরাকাভ মাত্র কয়েক ইঞ্চি লম্বা হয়৷ চঞ্চু অনেক লম্বা ও নরম৷ আকারে ছোট হওয়ায় এদের দেখা পাওয়া বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে৷

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, হামিংবার্ড প্রজাতির পাখি সুরাকাভ৷ উত্তর আমেরিকান হামিংবার্ড এরা৷ এদের রঙ বদলানো পাখি হিসাবে সবাই জানে৷ নিজের পালক নেডে় কিংবা মাথা ঘুরিয়ে নিমিষেই নিজের রং বদলাতে পারে সুরাকাভ৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আরো জানান, অপূর্ব উজ্জ্বল ও দু্যতিময় পালকের অধিকারী হয় আশ্চর্য এই পাখি৷ যে প্রতিবার মাথা ঘুরালেই বদলে নিতে পারে নিজের রং৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব জনপ্রিয় সুরাকাভ৷ তার রং বদলানোর ভিডিওতে লাইক-কমেন্টের ছড়াছড়ি৷ নেটিজেনরা মুগ্ধ না হয়ে পারে না৷ দেখা যায়, এক ব্যক্তি হাতের আঙুলে বসিয়ে রেখেছে এক সুরাকাভকে৷ আর আঙুলে বসেই সে যতবার মাথা ঘোরাচ্ছে ততবারই বদলে যাচ্ছে গায়ের রং৷ কখনো কমলা-গোলাপি কখনো বা বেগুলি-গোলাপি৷ তখন অভূতপূর্ব দেখতে লাগে তাদের৷ ছুটে গিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে৷

এই পাখি নিয়ে গবেষণার শেষ নেই৷ বিস্তর গবেষণা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সুরাকাভের পালকে কেরাটিন লেয়ার্স নামের এক স্তর থাকার কারণে সে ইচ্ছেমতো রং বদলাতে পারে৷ দ্রুত রং বদলের বৈশিষ্ট্যটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা৷ এদের পালকের ওপরের দিকে কেরাটিন নামক এক ধরনের পাতলা প্রোটিনের স্বচ্ছ স্তর রয়েছে৷ এই স্তরের উপর সূর্যের আলো পড়ার পর কিছু আলো প্রতিফলিত হয়, কিছু আলো পালকের ভেতর প্রবেশ করে আর কিছু আলো ৩টি স্তরের ওপর গিয়ে পডে়৷ নানা জায়গায় পড়ে এই যুক্ত আলোর সমষ্টি বিভিন্ন রকম রং তৈরি করে৷

একটি সুরাকাভের দাম অনেক৷ একটি পাখি কিনতে খরচ পড়বে ভারতীয় টাকায় ২৭ লাখ৷