• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

নেপালের শিক্ষা নিন ইউনূস

সুশীলাও বলেছেন, ‘ভারত শুধু আমার প্রতিবেশী নয়, আত্মীয়ও। ভারত সর্বদা নেপালকে সাহায্য করেছে। আমাদের সম্পর্ক ভালো।’

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও বাংলাদেশ। নেপালে কেপি ওলি সরকারের পতন এবং সুশীলা কারকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁর কড়া অবস্থানের জন্য সে দেশে বন্ধ হয়েছে হিংসা, যা বাংলাদেশের নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূস এখনও করে উঠতে পারেননি। ক্ষমতার লোভ মানুষকে দুর্নীতিপরায়ণ করে তোলে, মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই তাঁর প্রধান কাজ ছিল। কিন্তু একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে তিনি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে চলেছেন পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে ইউনূস দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করতে পারেন না। শুধু ইউনূস নন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য পদাধিকারীরাও নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। এটাই ফারাক নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হলো দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, ফিরিয়ে এনে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। একথাই বলেছেন নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান সুশীলা কারকি। ছাত্র আন্দোলনের চাপে একই কথা বলছেন ইউনূস, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি ঘটিয়ে ক্ষমতায় থাকাটাই দীর্ঘায়িত করছেন ইউনূস।

Advertisement

একসময় বাংলাদেশ ও নেপাল, দু’টি দেশই অবিভক্ত ভারতের অংশ ছিল। এখন দু’টি দেশই ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ভারত বরাবরই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখায় বিশ্বাসী। ভারত বিশ্বাসী নির্জোট আন্দোলনে। ভারতের বিদেশনীতি গত ৭৯ বছরে পরীক্ষিত। বিশ্বে প্রশংসনীয়। তাই প্রতিবেশী দেশের সমস্যায় ভারতও চিন্তিত। বিশেষ করে এক সময়ের পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে যা বাংলাদেশ, থেকে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছেন। তাই বাংলাদেশের অশান্তি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা অসমের বহু মানুষকে চিন্তায় রাখে, কেন না এখনও উদ্বাস্তুদের স্বজনেরা মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশে মৌলবাদীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সব সময় তাণ্ডব ও অত্যাচার করে চলেছে। মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের আমলে তা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

ইউনূস সরকারের হিন্দুবিদ্বেষী মনোভাব এবং সরকারি মদতপুষ্ট জামায়েত ইসলামের হামলা বিভিন্ন দেশে তীব্র সমালোচিত। বাংলাদেশের বহু মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিট্রেন, ফ্রান্স, আরব দেশগুলি-সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন। তাঁরা বিদেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। তাই কিছুটা সম্বিত ফিরে এবার ইউনূস সরকার দুর্গাপুজোর সময় বেশ কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে আগেভাগেই জানিয়েছিলেন। তবে এসব আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। ইস্কনের চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে এখনও মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। নেপাল থেকে যদি কিছু শিক্ষা নিতে পারেন ইউনূস, তাহলে এই উপমহাদেশে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হতে পারে।
নেপালের জেন জি আন্দোলনের নেতৃত্ব নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি বেছে নিয়েছিলেন তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের জন্য। তিনি দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারের একটি মন্ত্রীসভা গঠন করে সংসদ ভেঙে দিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সরকার গঠন করে বিদায় নেবেন বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, কোনও পদের মোহ নেই তাঁর।

১৪০ কোটি ভারতীয়র পক্ষ থেকে নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, উনি যুদ্ধের দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবেন।’ পাল্টা সুশীলাও বলেছেন, ‘ভারত শুধু আমার প্রতিবেশী নয়, আত্মীয়ও। ভারত সর্বদা নেপালকে সাহায্য করেছে। আমাদের সম্পর্ক ভালো।’

সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে, চিনের কাছে দেশের অর্থনীতিকে বিকিয়ে দিয়ে ইউনূস ভাবছেন বাংলাদেশের ক্ষমতা তিনি নিজের হাতেই রাখতে পারবেন। দুর্নীতি আর সন্ত্রাসকে উসকে দিয়ে যে তা পারা যায় না, নেপাল থেকে সেই শিক্ষা নিতে পারেন ইউনূস। তাহলেই শুধু বাংলাদেশ নয়, এই উপমহাদেশেরও মঙ্গল হবে।

Advertisement