• facebook
  • twitter
Saturday, 2 November, 2024

বিশ্বে প্রথমবার নাইট্রোজেন প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড আমেরিকায়, ভয়াবহতা দেখে হতবাক প্রত্যক্ষদর্শীরা 

ওয়াশিংটন, ২৭ জানুয়ারি –  আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রথমবার ব্যবহার করা হল বিষাক্ত নাইট্রোজেন গ্যাস। আমেরিকার আলাবামা প্রদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে বিষাক্ত এই গ্যাসের মাস্ক পরিয়ে হত্যা করা হয়। ফাঁসি, ইলেকট্রিক চেয়ার বা প্রাণঘাতী ইনজেকশন দেওয়ার বদলে হত্যায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হল। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হল। আলাবামা সরকারের

ওয়াশিংটন, ২৭ জানুয়ারি –  আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রথমবার ব্যবহার করা হল বিষাক্ত নাইট্রোজেন গ্যাস। আমেরিকার আলাবামা প্রদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে বিষাক্ত এই গ্যাসের মাস্ক পরিয়ে হত্যা করা হয়। ফাঁসি, ইলেকট্রিক চেয়ার বা প্রাণঘাতী ইনজেকশন দেওয়ার বদলে হত্যায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হল। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হল। আলাবামা সরকারের দাবি, এটা, ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি মানবিক পদ্ধতি। সমালোচকরা মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে একে নিষ্ঠুর এবং পরীক্ষামূলক বলে অভিযোগ করেছেন।


পেশায় তিনি ছিলেন ভাড়াটে খুনি। ১৯৮৮ সালে ভাড়াটে খুনি অর্থাৎ, অর্থের বিনিময়ে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় কেনেথ ইউজিন স্মিথকে। অর্থের বিনিময়ে এক ব্যক্তির  স্ত্রীকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন ইউজিন। খুনের অভিযোগে তাঁকে  মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আমেরিকার আদালত। কী ভাবে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে বহু চর্চার পর শেষ পর্যন্ত নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে গত বৃহস্পতিবার কেনেথের মৃত্যুদণ্ড হয়,  বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করছিলেন কেনেথ। ২০২২ সালেও তাঁকে একবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তা কার্যকর করা যায়নি।

মৃত্যুদণ্ডের এই নয়া পদ্ধতির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন অভিযুক্ত। স্মিথের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন যে রাষ্ট্র তাকে শাস্তির পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা নিষ্ঠুর কাজ এবং এমন এক অস্বাভাবিক পদ্ধতি যা  সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করছে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার রাতে স্মিথের আবেদন খারিজ করে দেয়।

আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর, বৃহস্পতিবার রাতেই ইউজিন স্মিথকে নাইট্রোজেন শ্বাসের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে অক্সিজেন মাস্কের মতো একটি মাস্ক পরানো হয়। তারপর, সেই মাস্কের মধ্য দিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস পাঠানো হয়। এর ফলে অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু হয়। আলাবামা কারাগারে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ২৫ মিনিটে স্মিথকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গেছে গোটা বিশ্ব জুড়ে । রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কর্মীরা এই পদ্ধতির বিরোধিতায় পথে নেমেছেন। যদিও মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এই পদ্ধতির মৃত্যুদণ্ডের জন্য সবচেয়ে কম কষ্টদায়ক। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি  , নাইট্রোজেন মাস্ক পরানো থেকে শুরু করে হৃদ্‌যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া পর্যন্ত ২২ মিনিট যন্ত্রণায় কাতরেছেন ৫৮ বছরের এই ভাড়াটে খুনি।

কেনেথকে পরীক্ষামূলক ভাবেই নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এই পদ্ধতিতে মৃত্যু হবে একেবারে বিনা যন্ত্রণার , চোখের পলকে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে । কিন্তু কার্যক্ষেত্রে মিনিটের পর মিনিট ধরে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করতে হয় কেনেথকে।  

শনিবার হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, এ ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নাগরিক স্বাধীনতা গোষ্ঠীও কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ১৯৮২ সালে আমেরিকায় প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিই গ্রহণ করা হত। এবার সেই শাস্তির পদ্ধতি বদল কতটা মানবিক হল  ।