• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

রাশিয়ার তেল ঘাঁটিতে ইউক্রেনের পরপর হামলা, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা

ভারতের তেল আমদানিতে বড় বাধা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মস্কো, কিয়েভ, ২৪ আগস্ট– রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা রাখতেই নতুন কৌশল নিয়েছে কিয়েভ। এবার সরাসরি রাশিয়ার তেল শোধনাগার, পাম্পিং স্টেশন এবং জ্বালানি সরবরাহ নেটওয়ার্ককে লক্ষ্যবস্তু করেছে ইউক্রেন। ফলে মস্কোর অভ্যন্তরে জ্বালানি সঙ্কট বাড়ছে বলে সূত্রের খবর। বিশ্ববাজারে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধাক্কা ভারতের আমদানিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে, যেহেতু নয়াদিল্লি বর্তমানে রাশিয়ার অন্যতম বড় তেল আমদানিকারক।

রাশিয়ার তেল উৎপাদনে বড় ধাক্কা লাগলে বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ কমে গিয়ে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক দেশগুলির উপর চাপ আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু আগস্ট মাসেই অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তেল ভাণ্ডারে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। আক্রান্ত স্থাপনাগুলির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ রাশিয়ার ভলগোগ্রাদের লুকোইল রিফাইনারি, সারাটভ এবং রোস্তভ অঞ্চলের কয়েকটি কেন্দ্র। সূত্রের দাবি, এসব কেন্দ্র থেকে বছরে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টন তেল উৎপাদিত হয়, যা রাশিয়ার মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ।

Advertisement

রুশ প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে পেট্রল রপ্তানি সীমিত করলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ক্রিমিয়া ও দক্ষিণ রাশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে পেট্রল সঙ্কট প্রকট আকার ধারন করেছে। যদিও মস্কো এই হামলার প্রভাব স্বীকার করতে নারাজ। তাদের সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী— “যুদ্ধকালীন রসদ ঘাটতির কারণে এই সমস্যা সাময়িক”।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে তেল বিক্রি করছে। এই সুযোগে ভারত তার আমদানি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক হিসেবে রাশিয়ার উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। তবে রাশিয়ার উৎপাদন কমে গেলে ভারতেরও বেশি দামে বিকল্প বাজার থেকে তেল কিনতে হতে পারে, যা দেশে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।

এদিকে ইউক্রেনের হাতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস অর্থাৎ আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম। এটি ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম। তবে পেন্টাগন এখনও সরাসরি রাশিয়ার ভূখণ্ডে এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। সূত্রের মতে, মার্কিন প্রশাসন ক্রেমলিনকে উস্কে দিতে চাইছে না বলেই এমন অবস্থান নিয়েছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করছেন, আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব। আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিয়েভকেও আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ডনবাস অঞ্চল দখল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য এতটাই তীব্র যে, সমাধানে আসা তো দূরের কথা, নতুন সংঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল (ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক) দখল করাই রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার মধ্যে ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং ডনেৎস্কের বড় অংশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও পুতিনের দাবি, ইউক্রেন যেন ডনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেয়। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তা “সংবিধানবিরোধী” বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আন্তর্জাতিক চাপ ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জেলেনস্কিকে ভবিষ্যতে আলোচনার পথে হাঁটতে হতে পারে।

অন্যদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ার দাবি, শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের ৯৫টি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে, আবার ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা রাশিয়ার ৭২টি ড্রোনের মধ্যে ৪৮টি ধ্বংস করেছে।

এমতাবস্থায় যুদ্ধবিরতি বা আলোচনার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সূচি এখনো ঘোষিত হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যত দিন সংঘাত চলবে, ততই জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে সঙ্কট বাড়বে।

Advertisement