• facebook
  • twitter
Thursday, 31 July, 2025

ভয়ঙ্কর বোমের আওয়াজ, ড্রোনের আসা-যাওয়া, রাতে ঘুমোতে পারিনি

এম্ব্যাসি বলছে, বাড়িতে কথা বলে টাকা পাঠাতে বলুন। কিন্তু এখানে সব ব্যাঙ্ক বন্ধ। কীকরে আমি টাকা হাতে পাব। রাস্তাঘাট ফাঁকা।

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

আমি এখন মধ্য তেহরানের তালেঘানি এলাকায় মাসাদ হোটেলে রয়েছি। গত ১০ জুন উত্তর ইরানে এশিয়ার সর্বোচ্চ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি দামাভান্দ পর্বত অভিযানে গিয়ে ৫২০০ মিটার উচ্চতায় ভয়ংকর তুষারঝড়ের কবলে পড়েছিলাম। ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ৪০০ মিটার নিচ থেকে অভিযান বাতিল করে নিচে নেমে আসবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরে আসি বেসক্যাম্পে। সেখানে আমার চিকিৎসা চলে। তারপর তেহরানে আসি। দেখা করি এখানকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্র গৌরব শ্রেষ্ঠার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ রাখছি।

ভারতীয় দূতাবাস সঠিক করে কিছু বলতে পারছে না। কারণ তারা নিজেও জানে না কবে বিমান চলাচল শুরু হবে। তারা বিগত চার দিন ধরে আমাকে বলে যাচ্ছে যে, আপনারা সবাই শান্ত থাকুন, হোটেলের বাইরে বেরোবেন না, সাবধানে থাকুন। ঠিক ব্যবস্থা হবে। কিন্তু আমি এই চার দিনে জানলা দিয়ে অসংখ্য বোমের আওয়াজ ড্রোনের আসা-যাওয়া দেখেছি, রাতে ঘুমোতে পারিনি। এসবের কোনও জবাব দূতাবাসের কাছে নেই। ফলে আমি আমার জীবন সংশয় দেখতে পেয়ে অস্থির হয়ে উঠছি।

আমি এক্সপিডিশনের পর দু-একদিনের পরই ফিরে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম। কিন্তু সেইটা যে আরও পাঁচদিন হয়ে যাবে, এটা তো আমি কল্পনা করিনি। তাই যে রেটের হোটেলে এখানে ছিলাম, সেটা ছিল প্রায় ৪০ ডলার প্রতিদিন। কিন্তু সেটা আমার পক্ষে বেশিদিন টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ সামান্য কিছু টাকা আমার কাছে ছিল। এই হোটেলে এর থেকে কম দামের রুমও নেই। সেইজন্যে আমি আশেপাশের দু-চারটে হোটেল, লজ বা হস্টেলে খোঁজ খবর করেছি। দেখা যাক, সেখানে শিফট করতে পারি কিনা। যে এজেন্সির সঙ্গে এসেছি, তারা বলছে এমব্যাসি খরচা দেবে। এমব্যাসি বলছে, টুর এজেন্সি খরচা দেবে। সুতরাং একটা টানাপোড়েন চলছে।

এম্ব্যাসি বলছে, বাড়িতে কথা বলে টাকা পাঠাতে বলুন। কিন্তু এখানে সব ব্যাঙ্ক বন্ধ। কী করে আমি টাকা হাতে পাব। রাস্তাঘাট ফাঁকা। মাঝে মাঝে দু-একটা মোটর বাইক বা গাড়ি যাচ্ছে। আপাতভাবে শান্ত মনে হলেও রাতে বোমের আওয়াজ শুনছি।
হোটেলে পুলিশ এসেছিল তারা মজা করে বলে গেল, এখনও দু’মাস চলবে। সাধারণ মানুষের কাছে কোনও খবর নেই। হোটেলের লোকেরা মোবাইলে নিজেদের ভাষায় খবরের চ্যানেল দেখতে ব্যস্ত, যার বিন্দু-বিসর্গ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সুতরাং এখান থেকে বেরোনোর কোনও পরিছন্ন পূর্বাভাস আমি দেখতে পাচ্ছি না।

ভারতেরই জম্মু-কাশ্মীর থেকে প্রায় ৪০০০ স্টুডেন্ট এসেছে এখানে আর অন্যান্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনেক লোক এসেছে। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র ১০ হাজার ভারতীয় এখানে বন্দী হয়ে আছে। ভারতীয় দূতাবাস কাকে ছেড়ে কাকে সাহায্য করবে? ওরা ফোন ধরে ধরে ক্লান্ত। ফোনে ঠিক করে কথা বলবার সময় ওদের নেই। অতএব ভয়ংকর যা কিছু একটা উত্তর দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া নিজেদের মতো ব্যবস্থা করে তাদের দেশের সব লোককে বর্ডার পার করিয়ে নিজের দেশে নিয়ে চলে গেল। যে যেমন করে পারছে, নিজের দেশের লোকেদের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু ভারত সরকার এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নড়েচড়ে বসবার পরিকল্পনা করতে পারছে না।

(প্রতিবেদক পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামের বাসিন্দা। পেশায় দক্ষিণ কলকাতার উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক। পর্বতারোহণ তাঁর নেশা।)