• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

চিকিতসকদের নজরদারিতে আপাতত নিভৃতবাসে সুনীতা-সহ ৪ নভশ্চর

মহাকাশে তাঁদের থাকার কথা ছিল ৮ দিন। সেটাই বাড়তে বাড়তে দাঁড়ায় ২৮৬ দিনে। ২৭৮ দিন বেশি থাকতে হয়েছে তাঁদের।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের অগ্নিপরীক্ষা শেষ। এবার শুরু তাঁদের আর এক লড়াই। সে লড়াই নিজের সঙ্গে নিজের কারণ শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে এখনও পর্যন্ত উদ্বেগমুক্ত নন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। মহাকাশে তাঁদের থাকার কথা ছিল ৮ দিন। সেটাই বাড়তে বাড়তে দাঁড়ায় ২৮৬ দিনে। ২৭৮ দিন বেশি থাকতে হয়েছে তাঁদের। ৯ মাসেরও বেশি সময় মহাকাশ স্টেশনে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তাঁদের সঙ্গে ফিরেছেন আরও দুই মহাকাশচারী। পৃথিবীতে ফেরার পর নানারকম শারীরিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এখন ধাপে ধাপে এগোতে হবে সুনীতাদের। কী কী সেই প্রক্রিয়া, জানিয়েছে নাসা।
 
নাসা সূত্রে খবর, আপাতত সুনীতা এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর এবং অন্য দুই মহাকাশচারী নিভৃতবাসে রয়েছেন। আপাতত আগামী ৪৫ দিন তাঁদের ঠিকানা হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টার। সেখানেই নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে তাঁদের। সুনীতাদের সঙ্গে রাখা হয়েছে অপর দুই মহাকাশচারী নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজান্ডার গর্বুনভকে। সুনীতাদের ফেরাতে কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে তাঁদের নিভৃতবাসের সময় অনেকটা কম হতে পারে। পাশাপাশি, মহাকাশ থেকে নতুন রোগ নিয়ে আশার আশঙ্কা থাকে, অন্যদিকে পৃথিবীর জীবাণুতেও সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের। তাই নিভৃতবাসই একমাত্র উপায়।
 
সুনীতা এবং বুচ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ৪৫ দিনের নিভৃতবাসে থাকবেন, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিমণ্ডলে ছিলেন তাঁরা। তাঁরা আবার পৃথিবীর আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন কিনা তা যাচাই করে দেখতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। এখন সেই দিকেই নজর রাখবেন চিকিৎসকেরা। হিউস্টনে জনসন স্পেস সেন্টারের ক্রু কোয়ার্টারে রেখে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনীতাদের কথা বলার ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই মেন্টাল সাপোর্টে জোর দেওয়া হবে। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি হবে, যাতে মাংসপেশি ও হাড় স্বাভাবিক অবস্থায় দ্রুত ফিরতে পারে। ৪৫ দিন ধরে রিহ্যাব চলবে দুই মহাকাশচারীর। এই সময়ে মহাকাশ স্টেশনে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাবেন সুনীতারা।
 
অন্য দিকে, সুনীতাদের মহাকাশ থেকে ফেরাতে কত টাকা খরচ হয়েছে, তাও প্রকাশ্যে এসেছে। ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেট মহাকাশযান ড্রাগন ক্যাপসুলকে পৌঁছে দিয়েছিল নির্দিষ্ট কক্ষপথে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০২৪ সালে শুধুমাত্র এই রকেট উৎক্ষেপণের খরচ ছিল ৬৯ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫৯৫ কোটি টাকা। তবে সুনীতারা  পৃথিবীতে ফেরার পথে যে যানের সওয়ারি ছিলেন, সেই ড্রাগন ক্যাপসুলের খরচ ধরলে মোট খরচের পরিমাণ প্রায় ১৪০০ কোটি মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল খরচ আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসারই বহন করার কথা।
প্রসঙ্গত, আগামী অর্থবর্ষে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত দপ্তরের বার্ষিক বাজেট ১২,৪১৬ কোটি টাকা। অর্থাত, দুই নভশ্চরকে ফেরানোর খরচ ইসরোর বাজেটের প্রায় কাছাকাছি। 
 
গত বছরের জুন মাসে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। যে যানে চড়ে তাঁরা গিয়েছিলেন তাতে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় তাঁরা মহাকাশেই আটকে পড়েন । তারপর থেকে একাধিকবার সুনীতাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বার বার তা পিছিয়ে যায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর মাস্ককে বিষয়টিতে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। অবিলম্বে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই মহাকাশে ড্রাগন যান পাঠান মাস্ক।
 
তবে এই যে মহাকাশচারীরা তাঁদের নিজেদের কোনও রকম ত্রুটি ছাড়াই মহাকাশে ‘আটকে’ ছিলেন, সেই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সহ্য করার জন্য কী তাঁদের কিছু অর্থ দেওয়া হয়, এই প্রশ্ন মানুষের মনে জাগতেই পারে। নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী ক্যাডি কোলম্যান ওয়াশিংটনিয়ান ডট কমকে বলেছেন যে, নভোশ্চররা তাঁদের নিয়মিত বেতন পান কোনও ওভারটাইম বেতন ছাড়াই। মহাকাশ সংস্থা পরিবহণ, থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের খরচ বহন করে এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে রয়েছে একটি স্বল্পমূল্যের দৈনিক ভাতা।

Advertisement

Advertisement