• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

করাচি থেকে দ্বিতীয় জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রামে

শেখ হাসিনার আমলে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পণ্য আসত শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুর হয়ে। এখন করাচির সঙ্গে সরাসরি জাহাজ যোগাযোগ তৈরি করেছে ইউনূস প্রশাসন। ১০ দিনের মধ্যে করাচি থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে পণ্য।

ফাইল চিত্র

পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও মজবুত করছে ঢাকা। পাকিস্তানের করাচি থেকে বিপুল পণ্য নিয়ে চলতি সপ্তাহেই জাহাজ পৌঁছেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মাসখানেক আগে প্রথমবার পাকিস্তানি পণ্য নিয়ে জাহাজ আসার পরে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার নির্দেশ জারি করেছিল, ওই দেশ থেকে আসা পণ্য আর যাচাই করা হবে না। কাগজে যা লেখা থাকবে তাই মেনে নেওয়া হবে। পাকিস্তানি পণ্যকে এই বিশেষ সুবিধে দেওয়ার পর এবার করাচি থেকে প্রথমবারের দ্বিগুণ সংখ্যক কন্টেনার নিয়ে শনিবার চট্টগ্রামে পৌঁছেছে জাহাজ। করাচির যে জাহাজ চট্টগ্রামে পৌঁছয় তাতে প্রচুর পরিমাণ পরিশোধিত চিনি এবং খনিজ পদার্থ ডলোমাইট রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।

প্রসঙ্গত, এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি করার জন্য জোর দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ দপ্তর জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট চুক্তি তারা পর্যালোচনা করছে। এটিকে তারা বাতিল করার পক্ষে। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের নানা বন্দর থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে জলযানে পণ্য পরিবহনের উল্লেখ রয়েছে। ইউনূস সরকার মনে করছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পরিকাঠামো ব্যবহার করতেই ভারত এই চুক্তি করেছে। এরপর বাংলাদেশের লাভ-লোকসান খতিয়ে দেখে চুক্তিটি বাতিল করা হবে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, একরকম বাধ্য হয়েই বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহলে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান থেকে মালপত্র আমদানি করতে ‘বাধ্য’ হচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, করাচি থেকে দুবাই হয়ে মোট ৮১১টি কন্টেনার বোঝাই মালপত্র নিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বন্দরে পৌঁছেছে ‘এম ভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ নামের জাহাজটি। প্রায় ৭ হাজার টন পরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে। জাহাজে ১৭১টি কন্টেনারে রয়েছে ডলোমাইট। এ ছাড়া রয়েছে কাচ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল । এসেছে পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত কাপড়, আলু, আখের গুড়, লোহার টুকরো, রেজিন।

এছাড়াও জাহাজে এসেছে বেশ কিছু খাদ্যপণ্য। এসেছে খেজুর, লেমন অয়েল। এছাড়াও এসেছে বেশ কিছু যন্ত্রাংশ। আদতে চিনা মালিকানাধীন এই জাহাজটির মাল খালাস করার পর ইন্দোনেশিয়া চলে যাওয়ার কথা।

শেখ হাসিনার আমলে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পণ্য আসত শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুর হয়ে। এখন করাচির সঙ্গে সরাসরি জাহাজ যোগাযোগ তৈরি করেছে ইউনূস প্রশাসন। ১০ দিনের মধ্যে করাচি থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে পণ্য। গত আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তার মাথায় আনা হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূসকে। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর জোর দেন। পাকিস্তানের সঙ্গে শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে যোগাযোগ গড়ে তোলায় উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি কায়রোয় ডি-৮ সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের নজির হিসেবে জাহাজ যোগাযোগের বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। তবে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারত থেকে আমদানি করা চিনির দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে রপ্তানি করছে পাকিস্তান। অর্থাৎ ভারত থেকে আমদানি করলে যা দাম পড়ত, তার থেকে বেশি দাম দিয়ে ইউনূস সরকার তা পাকিস্তান থেকে আমদানি করছে। একই কথা প্রযোজ্য আলুর ক্ষেত্রেও, এমন অভিযোগও উঠেছে।

ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের হুঁশিয়ারি, বিতর্কিত মন্তব্যের মধ্যেও এই নতুন সমীকরণ ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাসিনার আমলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বাণিজ্য সম্পর্কে ভারতের কড়া নজরদারি ছিল। এখন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠায় নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যকলাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ভারতের। ফলে নিরাপত্তার দিকেও নজর রাখছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।

Advertisement