ভারতের তরফে এত দিন ধরে যে দাবি করে আসা হয়েছে, সেই দাবিকেই এবার কার্যত স্বীকার করে নিলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি স্বীকার করেছেন যে, গত তিন দশক ধরে জঙ্গিদের সমর্থন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছে ইসলামাবাদ। তবে এই ‘নোংরা কাজের’ দায় আমেরিকা এবং পশ্চিমী বিশ্বের উপর চাপিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অভিযোগ যে, কাশ্মীর উপত্যকাকে অশান্ত করে তোলার নেপথ্যে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও উসকানি দিয়ে থাকে পাকিস্তান। এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সামনে ভারতের এই অভিযোগ একপ্রকার মেনে নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ। তিন দশক ধরে জঙ্গিদের সমর্থন করা ও প্রশ্রয় দেওয়া, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, এমনকি জঙ্গি সংগঠনকে পাকিস্তান আর্থিক সাহায্য করেছে বলেও স্বীকার করেছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
Advertisement
সাক্ষাতকারে সাংবাদিক পাক মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন জঙ্গিদের মদতের পিছনে পাকিস্তানের ভূমিকার কথা। সেই প্রশ্নের জবাবে খাওয়াজা আসিফ বলেছেন, ‘আমরা এই নোংরা কাজ তিন দশক ধরে করছি, আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার জন্য।’ তবে এই ‘ভুল’ কাজের জন্য পাকিস্তানকে ভুগতে হচ্ছে বলেও স্বীকার করেছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
Advertisement
পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।তাঁর দাবি, ভারত পাকিস্তান এবং গোটা অঞ্চলে সমস্যা তৈরি করতে চাইছে। তাঁর দাবি, ‘এটা ভারতেরই কারও কাজ৷ ওখানে কিছু হলেই ওরা আমাদের দিকে আঙুল তোলে, কিন্তু, কোনও প্রমাণ দেখাতে পারে না৷’ বালাকোটের সার্জিক্যাল স্ট্রাইককেও ‘ফলস্ ফ্ল্যাগ অপারেশন’ বলেছেন তিনি৷
মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলার নেপথ্যে লস্কর-এ-তৈবার হাত রয়েছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘লস্কর পুরনো একটা নাম। এর এখন কোনও অস্তিত্ব নেই।’ লস্করের ছায়া সংগঠন, যারা পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে সেই দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফোর্স তথা টিআরএফ-এর নামও কোনওদিন শোনেননি বলে দাবি করেছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমাদের সরকার পহেলগাম কাণ্ডের নিন্দা জানায়। পাকিস্তান কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার।’
তবে ভারত ‘সামরিক প্রত্যাঘাত’ করলে তার ফল দুই দেশের জন্যই ভয়ানক হবে বলে সতর্ক করেছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দু’টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাত বাধলে তা সব সময়েই ভয়ের কারণ।’ পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছেন, যদি যুদ্ধ হয়, যুদ্ধ হবে৷ আঘাত আসলে প্রত্যাঘাত হবে বলে জানিয়েছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷
কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছেন নিরীহ পর্যটকরা। এরপর থেকেই ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে ভারত, নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের তরফে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেন পাক মন্ত্রী।
Advertisement



